ঈদের আগে ব্যাংকে টাকা তোলার হিড়িক

প্রকাশ | ০৪ জুন ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
ঈদের লম্বা ছুটির কারণে একটানা পাঁচ দিন বন্ধ থাকবে দেশের ব্যাংকগুলো। এ কারণে গতকাল সোমবার চাহিদা মেটাতে টাকা তোলার হিড়িক পড়েছে ব্যাংকগুলোতে
ঈদের লম্বা ছুটির কারণে একটানা পাঁচ দিন বন্ধ থাকবে দেশের ব্যাংকগুলো। এ সময় চাহিদা মেটাতে টাকা তোলার হিড়িক পড়েছে ব্যাংকগুলোতে। সাধারণ গ্রাহক থেকে শুরু করে অনেক ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরাও ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিচ্ছেন। সোমবার ঈদের আগে শেষ কর্মদিবসে রাজধানীর ব্যাংকপাড়া মতিঝিলে বিভিন্ন ব্যাংকের শাখায় গিয়ে গ্রাহকদের টাকা তোলার এমন চিত্র দেখা গেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের স্থানীয় শাখায় গিয়ে দেখা যায়, টাকা তোলার জন্য লম্বা লাইনে গ্রাহকরা অপেক্ষা করছেন। আবার অনেক গ্রাহক এসেছেন সঞ্চয়পত্রের সুদের টাকা নিতেও। সেখানে কথা হয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ঈদের ছুটিতে এক টানা পাঁচ দিন বন্ধ থাকবে ব্যাংক। আমাদের অফিস খুলবে আগামী শনিবার। ওই দিন অফিসের কাজে নগদ টাকার প্রয়োজন মেটাতে সোমবার টাকা তোলা হচ্ছে। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা নাজির উদ্দিন এসেছেন সঞ্চয়পত্রের সুদের টাকা নিতে। তিনি বলেন, ঈদের আগে বাজার-সদাই করতে টাকার প্রয়োজনে তিনি ব্যাংকে এসেছেন। সোনালী ব্যাংকের স্থানীয় শাখার ক্যাশ কর্মকর্তা রূপম চাকমা বলেন, ঈদের আগে এক দিনের অফিসে সব ধরনের লেনদেন করছেন তারা। ঋণপত্র খোলা, সঞ্চয়পত্র বিক্রি, আমানত জমা ও গ্রাহকের জমানো টাকা দেয়া হচ্ছে। সোনালী ব্যাংকের মতো, রূপালী, অগ্রণী ব্যাংক ও জনতা ব্যাংকের স্থানীয় শাখায় গিয়ে গ্রাহকের লম্বা লাইনে টাকা তোলার জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। একইভাবে গ্রাহকদের ভিড় রয়েছে মতিঝিলে অবস্থিত বেসরকারি ব্যাংকের শাখাগুলোতে। জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংকের স্থানীয় শাখার মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. সাহাজাহান বলেন, আমরা গ্রাহকদের সবধরনের সেবা দিচ্ছি। যারা টাকা নিতে আসছেন তাদের দেয়া হচ্ছে, যারা জমা দিতে আসছেন তাও নেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমসহ সবধরনের কার্যক্রম চালু রয়েছে। গ্রাহক ভোগান্তির বিষয়ে তিনি বলেন, গত কয়েক দিনের তুলনায় গ্রাহকদের চাপ একটু বেড়েছে। ঈদের আগে সোমবারই শেষ কর্মদিবস হওয়াতে অনেক গ্রাহক আগামী পাঁচ দিনের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা তুলতে এসেছেন। এ কারণে চাপ একটু বেড়েছে। গতকাল সোমবার ব্যাংক খোলা থাকলেও মূলত বৃহস্পতিবারই ছিল ঈদের আগে শেষ লেনদেন। যারা ঈদে গ্রামের বাড়ি যাবেন তারা প্রয়োজনীয় টাকা তুলতে ব্যাংকে ভিড় জমিয়েছিলেন। টাকা তুলতে ব্যাংকের শাখাগুলোতে দেখা গেছে মানুষের দীর্ঘ লাইন। অনেককে দেড়-দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে টাকা তুলতে দেখা গেছে। ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি এটিএম বুথেও ছিল ভিড়। নতুন টাকার জন্য মতিঝিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকেও ছিল মানুষের লাইন। এদিকে বরাবরের মতো এবার ঈদকে সামনে রেখে নগদ টাকার চাহিদা বেশি থাকলেও আন্তঃব্যাংক লেনদেনে স্বল্প সময়ের জন্য ধার করা টাকার সুদের হার (কলমানি রেট) মোটামুটি স্বাভাবিক ছিল। বৃহস্পতিবার কলমানি রেট সর্বোচ্চ ৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত ওঠে। বেশকিছু দিন ধরেই কলমানি রেট এমনই রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কড়া নজরদারির কারণে নগদ টাকার চাহিদা থাকলেও কলমানি রেট বাড়ছে না বলে জানিয়েছেন ব্যাংকারা। কলমানি রেট হচ্ছে- কম সময়ের জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে টাকা ধার (ঋণ) করার সুদের হার। গত কয়েক বছর ধরে না বাড়লেও এর আগে দুই ঈদে কলমানি রেট বেশ বেড়ে যেতো। একবার কোরবানি ঈদের আগে কলমানি রেট ১৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। গতকাল রাজধানীর সব ব্যাংকেই ছিল উপচোপড়া ভিড়। গ্রাহকদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে দেখা গেছে ব্যাংক কর্মকর্তাদের। ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলী বলেন, 'আজকে ব্যাংকগুলোতে গ্রাহকদের বেশ ভিড় ছিল। যারা গ্রামে চলে যাবেন তাদের অনেকেই তাদের শেষ লেনদেন আজকে সেরেছেন।' গ্রাহকদের প্রয়োজনীয় টাকা তুলতে যাতে কোন সমস্যা না হয় সেজন্য রাজধানী ঢাকাসহ সব ব্যাংকের এটিএম বুথগুলোতে পর্যাপ্ত টাকা রাখার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ৪ জুন থেকে ৮ জুন বন্ধ থাকবে সব ব্যাংক। ব্যাংক খুলবে ৯ জুন। এই লম্বা ছুটির কারণে গতকাল ব্যাংক থেকে টাকা তোলার হিড়িক পড়েছিল। রাজধানীর গুলশান, মতিঝিল, দিলকুশা, পল্টন, গুলিস্তান, দৈনিক বাংলাসহ বিভিন্ন এলাকার ব্যাংক ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। অন্যদিকে টানা ছুটিতে সব ব্যাংকের এটিএম (অটোমেটেড টেলার মেশিন) বুথে পর্যাপ্ত টাকা রাখার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি এটিএম বুথ, পয়েন্ট অব সেল (পিওএস) এবং অনলাইন ই-পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবস্থা চালু নিরবচ্ছিন্ন চালু রাখারও নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।