যেসব কারণে মন্থর গাড়ি শিল্প

প্রকাশ | ০৯ জুন ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
যাযাদি ডেস্ক ব্রেক্সিটের পক্ষে-বিপক্ষে জনমত যাচাইয়ের জন্য প্রথম গণভোট হয় ২০১৬ সালে। এ গণভোটের পর থেকে যুক্তরাজ্যের গাড়ি নির্মাতারা সাবধান হয়ে যায়। অবশ্য এর আগে থেকে বিশ্ব উষ্ণতা বৃদ্ধি কেন্দ্র করে ডিজেল বা কোনো ধরনের জ্বালানিবিহীন পরিবেশবান্ধব বৈদু্যতিক গাড়ির ধারণা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন সমস্যার মুখোমুখি হতে থাকে। সাম্প্রতিক রাইড বা কার শেয়ারিংও গাড়ি কোম্পানিগুলোকে মালিকানা নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। এদিকে বিভিন্ন কারণে চীন, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো বড় বাজারগুলোয় বিখ্যাত কোম্পানিগুলোর গাড়ি বিক্রি হ্রাস পাওয়ায় সমস্যার মাত্রা আরো তীব্রতর হয়েছে। আগামী বছর নাগাদ ফোর্ড তাদের ব্রিজেন্ড পস্নান্ট বন্ধ করতে যাচ্ছে বলে বিভিন্ন সংবাদ সূত্রে জানা গেছে। আগামী বছরের মধ্যে ফোর্ডের এ পস্নান্ট বন্ধ হলে চাকরি হারাবে প্রায় ১ হাজার ৭০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী। ব্রেক্সিট কেন্দ্র করে সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের গাড়ি শিল্পের অবস্থা এমনিতেই খারাপ, তদুপরি ফোর্ডের এ সিদ্ধান্ত দেশটির গাড়ি শিল্পের ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক। চলতি বছরের ফেব্রম্নয়ারিতে গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হোন্ডা ২০২১ সাল নাগাদ নিজেদের সোইনডন পস্নান্ট বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। এটি বন্ধ হলে চাকরি হারাবেন প্রায় সাড়ে তিন হাজার কর্মচারী। তাছাড়া জাগুয়ার ল্যান্ড রোভার ও নিশান নিজেদের উৎপাদন হ্রাস ও কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিয়েছে। ২০১৮ সালে গাড়ি বিক্রি হঠাৎ করে শ্লথ হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত পূর্ববর্তী কয়েক বছর গাড়ি শিল্পের রমরমা অবস্থা ছিল বলা যায়। এ সময় গাড়ি শিল্পের দ্রম্নত বৃদ্ধি, শক্তিশালী বাজার লক্ষ্য করা গেছে। কিন্তু ২০১৮ সালে বিশ্বের বড় বড় বাজারসহ, বিশেষত চীনের বাজারে গাড়ি বিক্রি কমে যাওয়ার মধ্য দিয়ে গাড়ি শিল্পের ওপর প্রথম আঘাতটা আসে। গাড়ি শিল্পের ওয়েবসাইট 'জাস্ট-অটো'র সম্পাদক ডেভ লেগেট বলেছে, ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যকার দ্বন্দ্ব চীনের বাজারের আস্থাকে বড় ধরনের প্রভাবিত বা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। চীনের অর্থনীতি শ্লথ হয়ে পড়ছে, যা গাড়ি শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। চীনের বাজারে নিজেদের চাহিদা হ্রাস পাওয়ায় নিজেদের লেনদেন কমে গেছে বলে জানিয়েছে জাগুয়ার ল্যান্ড রোভার। এদিকে চীনের পাশাপাশি পশ্চিম ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেও গাড়ির চাহিদা হ্রাস পাওয়ায় গাড়ি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সংকটে পড়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বড় বড় বাজারে গাড়ির চাহিদা হ্রাস পাওয়ায় গাড়ি নির্মাতা কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা বেড়েছে, যা সবার জন্য রীতিমতো বেশ সমস্যা সৃষ্টি করছে বলে মনে করেন ডেভ লেগেট। উন্নত বিশ্বে বিশেষত ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোয় বিশ্ব উষ্ণতা বৃদ্ধি অন্যতম রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ে পরিণত হওয়ায় জীবনের সবক্ষেত্রে এটি প্রভাব বিস্তার করছে। ইইউ নির্ধারিত শর্তসাপেক্ষে কার্বন নিঃসরণ সীমিত রাখতে ব্যর্থ হলে ইইউভুক্ত দেশগুলোয় ২০২১ সালের পর থেকে গাড়ি কোম্পানিগুলোকে অতিরিক্ত জরিমানা গুনতে হবে। এ আইন কার্যকর হলে গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা আরো খারাপ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পরিবেশ রক্ষার্থে ডিজেল বা জ্বালানি চালিত গাড়িতে অতিরিক্ত কর আরোপ করায় ২০১৮ সালে যুক্তরাজ্যে গাড়ি নিবন্ধন ৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিশ্ব উষ্ণতা বৃদ্ধি রোধে সচেতনতা বাড়ায় কার্বন নিঃসরণের ওপর জোর বাড়ছে। এরই ধারাবাহিকতায় গাড়ি কোম্পানিগুলোর জন্য দিনে দিনে জোরদার হওয়া জনমত উপেক্ষা করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছে, আমলে নিতে হচ্ছে পরিবেশবাদী বিভিন্ন আন্দোলনের দাবি ও মেনে চলতে হচ্ছে সরকার তরফের সুপারিশ বা আইন।