চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধে লাভবান হচ্ছে তাইওয়ান

প্রকাশ | ১০ জুন ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
আমদানি শুল্কের খড়্‌গ বসিয়ে চীনকে কোণঠাসা করতে গিয়ে সিলিকন ভ্যালির কোম্পানিগুলোকেও বেকায়দায় ফেলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে এ পরিস্থিতি তাইওয়ানের জন্য আশীর্বাদ হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। চীনা পণ্যের ওপর ট্রাম্প ২৫ শতাংশ আবগারি শুল্ক ঘোষণার পর চীনে অবস্থিত তাইওয়ানের প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো কিছু প্রডাকশন লাইন দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে। পাশাপাশি সস্তা শ্রমের খোঁজে ভারতসহ এশিয়ার অন্যান্য দেশেও এসব কোম্পানি কারখানা স্থাপন করছে। তাইওয়ানের এসব কোম্পানি বেশ কয়েকটি মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্টের জন্য পিসি, স্মার্টফোন ও ট্যাবলেট বানায়। খবর জিডিনেট। ট্রাম্পের অতিরিক্ত শুল্ক এড়াতে দেশীয় কোম্পানি ঘরে ফেরার কারণে লাভবান হবে তাইওয়ান। তবে কম্পিউটার বা স্মার্টফোন কিনতে আমেরিকানদের একটু বেশি পয়সা খরচ করতে হবে। তার পরও ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর চীনে বানানো একটি পণ্যের যে দাম পড়বে, তাইওয়ানে বানানো একই পণ্যের দাম তার চেয়ে খুব একটা বেশি হবে না। এসার, আসুস, হনহাই (ফক্সকন মালিকানাধীন) ও এমএসআইয়ের মতো তাইওয়ানের কোম্পানিগুলো চীনে কারখানা করার অন্যতম কারণ দেশে শ্রমিক সংকট ও উচ্চব্যয়। এসার ও আসুস আবার তাদের উৎপাদনের কাজ যথাক্রমে উইস্ট্রন ও পেগাট্রন নামে দুটি দেশীয় কোম্পানিকে দিয়েছে। এ কোম্পানি দুটি তাদের হয়ে মার্কিন কোম্পানি অ্যাপল, ডেল, এইচপি ও মাইক্রোসফটের পণ্য বানায়। এখন উৎপাদন আবার তাইওয়ানে ফিরিয়ে আনার ফলে নিশ্চিতভাবে ব্যয় বাড়বে। তবে সেখানে স্বয়ংক্রিয় প্রডাকশন লাইন থাকায় শ্রমিক সংকট তেমন সমস্যা তৈরি করতে পারবে না। তা ছাড়া আমেরিকান কোম্পানিগুলোর সরবরাহ অব্যাহত রাখতে সবকিছু দেশে ফিরিয়ে আনার দরকার পড়বে না। মোট উৎপাদনের একটি সামান্য অংশ (এক-চতুর্থাংশ) হলেই চলবে। উচ্চমূল্য ও কম পরিমাণে উৎপাদন করলে চলে এমন পণ্যের প্রডাকশন লাইন চীন থেকে তাইওয়ানে ফিরিয়ে আনা বেশি সহজ। বিশেষ করে আগে থেকেই যাদের কারখানা চীনের পাশাপাশি তাইওয়ানেও রয়েছে। এমন কোম্পানির মধ্যে রয়েছে কম্পাল, উইস্ট্রন, এমএসআই ও ইনভেনটেক। তবে কম মূল্য/বেশি উৎপাদন এমন পণ্যের জন্য প্রডাকশন লাইন স্থানান্তর মোটেই লাভজনক হবে না। যেমন কম দামি ল্যাপটপ। স্মার্টফোন উৎপাদন করতে চাইলে সেটি হবে সবচেয়ে বাজে সিদ্ধান্ত। চীনে এটি অনেক লাভজনক, এর প্রধান কারণ দেশটি স্মার্টফোনের সবচেয়ে বড় বাজার। যাই হোক, বিভিন্ন কারণের পাশাপাশি সর্বশেষ যুক্ত বাণিজ্যযুদ্ধের পরিস্থিতিতে চীন ক্রমেই ব্যয়বহুল দেশে পরিণত হচ্ছে। ফলে তাইওয়ানের কোম্পানিগুলোও বিকল্প ভাবতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে এশিয়ার অন্যান্য দেশে কারখানা স্থাপন শুরু করেছে তারা। তাইওয়ানভিত্তিক গণমাধ্যম ডিজিটাইমস সম্প্রতি একটি প্রতিবেদনে জানায়, কম্পালের কারখানা আছে ভিয়েতনামে আর উইস্ট্রনের আছে ফিলিপাইনে, ইনভেনটেকও মালয়েশিয়ায় কারখানা স্থাপন করেছে। এছাড়া ভারতে ফক্সকন ও উইস্ট্রনের কারখানা রয়েছে। এ কোম্পানিগুলো দেশের বাইরে চীনের মতোই লাভজনক প্রডাকশন লাইন তৈরির চেষ্টা করছে। তাইওয়ানের বর্তমান সরকারের নীতিও তেমন। নতুন দক্ষিণমুখী নীতি গ্রহণের মাধ্যমে চীনের ওপর নির্ভরতা কমাতে চায় দেশটির সরকার। তা ছাড়া চীনের কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যাও দিন দিন কমছে। ২০৩০ সালের মধ্যে জনসংখ্যা হ্রাসের হার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে বলে আশঙ্কা করছে চীন সরকার। চীনের এ পরিস্থিতির কারণেও তাইওয়ানের প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো বিকল্প ভাবতে শুরু করেছে। তবে এখানে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, বৃহৎ কারখানার জন্য বহুধাবিস্তৃত সাপস্নাই চেইন খুব জরুরি। এ সাপস্নাই চেইন বিরল মৃত্তিকা (মূল্যবান ধাতু) থেকে শুরু করে উচ্চ ধারণক্ষমতার পরিবহন জাহাজ পর্যন্ত বিস্তৃত। এ ধরনের সাপস্নাই চেইন ছাড়া বিপুল পণ্য উৎপাদনে সক্ষম কারখানা টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। চীনের শেনজেন এলাকায় এমন হাজারো কোম্পানি রয়েছে, যারা শত শত কারখানায় সরবরাহের কাজ করে। তাছাড়া এ ধরনের সাপস্নাই চেইনের জন্য দরকার হয় বিশ্বমানের বিশেষজ্ঞ জ্ঞান, যা তৈরিতে কয়েক দশক পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। এ ধরনের সাপস্নাই চেইন বিশ্বের অন্য কোথাও এখনো তৈরি হয়নি। ফলে চীনের বিকল্প প্রায় অসম্ভব বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বাজার বিশ্লেষক ও উদ্যোক্তারা আরেকটি বিষয় প্রায়ই উলেস্নখ করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই অতিরিক্ত আবগারি শুল্ক কত দিন অব্যাহত থাকবে। কারণ এতে মার্কিন কোম্পানি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি শেয়ারবাজারেও প্রভাব পড়বে। তাছাড়া মার্কেটওয়াচের এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বর্তমানে শেয়ার ও বন্ড মার্কেটে চাঙাভাব দেখা গেলেও দীর্ঘমেয়াদে যুক্তরাষ্ট্র ২০০১ ও ২০০৮ সালের মতো মন্দা পরিস্থিতির দিকেই ধাবিত হচ্ছে।