নতুন আইনে সাতটির পরিবর্তে পাঁচটি হচ্ছে ভ্যাট হার

প্রকাশ | ১১ জুন ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
ব্যবসায়ীদের দাবি মেনে পুরনো আইনের সাতটি হারের পরিবর্তে নতুন আইনে পাঁচটি ভ্যাট হার হচ্ছে। পুরনো আইনকে অনুসরণ করেই হচ্ছে নতুন ভ্যাট আইন। প্রথমে চারটি ভ্যাট হার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও এখন আরেকটি নতুন হার করা হচ্ছে। এত দিন যেসব পণ্য বা সেবায় ট্যারিফ মূল্য ও সংকুচিত ভিত্তিমূল্যের ওপর ভ্যাট দিত, সেখানে ২ শতাংশ হারে ভ্যাট নির্ধারণ করা হচ্ছে। এছাড়া পণ্য বা সেবা আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ, উৎপাদনে ১০ শতাংশ, পাইকারি পর্যায়ে ৭.৫ শতাংশ এবং খুচরায় ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ হবে বলে এনবিআর সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়া মৌলিক খাদ্য, নির্ধারিত জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, গণপরিবহন সেবা, গণস্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবা, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, কৃষি, মৎস্য চাষ, দাতব্য প্রতিষ্ঠানের অবাণিজ্যিক কার্যক্রম, অলাভজনক সাংস্কৃতিক সেবা- এসব ক্ষেত্রে মূসক অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এই তালিকায় ১ হাজার ৯৮৩টি পণ্য ও সেবা আছে। নতুন ভ্যাট আইনটি সংশোধন করে আরও বেশ কিছু ছাড় দেয়া হয়েছে। বর্তমান পুরনো আইনে ২, ৩, ৪.৫, ৫, ৭, ১০ ও ১৫- এই সাতটি ভ্যাট হার আছে। নতুন আইনে ভ্যাট হার হচ্ছে পাঁচটি। এগুলো হলো-২, ৫, ৭.৫, ১০ ও ১৫। নতুন আইনে পুরনো আইনের প্যাকেজ ভ্যাট থাকছে না। কোনো পণ্য বা সেবায় ১৫ শতাংশ ছাড়া অন্য ভ্যাট হার প্রযোজ্য হলে ব্যবসায়ীদের রেয়াত নেয়ার সুযোগ নাও থাকতে পারে বলে এনবিআরের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। এ ব্যাপারে বেসরকারি সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, যারা ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দেবেন, শুধু তারাই রেয়াত পাবেন। অর্থাৎ যারা বড় ব্যবসায়ী তারাই প্রকৃত ভ্যাট সিস্টেমে থাকবেন। অপরদিকে, ১৫ শতাংশের নিচে অর্থাৎ ৫, সাড়ে ৭ ও ১০ শতাংশ হারে যারা ভ্যাট দেবেন তারা রেয়াত সুবিধা পাবেন না। একই আইনে দুই পদ্ধতি চালু করা হলে ট্যাক্স অন ট্যাক্স বা করের ওপর কর (দ্বৈত কর) আরোপ করা হবে। তখন পণ্য ও সেবার খরচ বাড়বে, যা ভোক্তার ঘাড়ে এসে পড়বে। দুনিয়ার কোথাও এমন আইন নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি। এবার ভ্যাট ব্যবস্থা পুরোপুরি অনলাইনভিত্তিক হচ্ছে না। ফলে হিসাব নিকাশ ব্যবস্থাও আগের মতোই খাতা কলমে রাখা যাবে। সীমিত পরিসরে অনলাইনভিত্তিক ভ্যাট রিটার্ন জমা, ভ্যাট পরিশোধের সুযোগ দিয়ে আপাতত নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন শুরু নতুন আইনে অনলাইনে রিটার্ন জমা, ভ্যাট পরিশোধসহ যাবতীয় কার্যক্রম অনলাইনে পরিচালনার করার কথা ছিল। কিন্তু ভ্যাটদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো কী ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার করবে, তা চূড়ান্ত করা যায়নি। আমদানিমূল্যে ৫০ হাজার ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্টার (ইসিআর) ব্যবসায়ীদের দেয়ার কথা থাকলেও তা দিতে পারেনি এনবিআর। এদিকে নতুন ভ্যাট আইনে বড় কোনো পরিবর্তন না করে বর্তমান ১৯৯১ সালের আইনের আদলেই নতুন আইনটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ ছাড়া কোন খাতে কত ভ্যাট বসবে সেটিও চূড়ান্ত হয়েছে। এখন শুধু বাস্তবায়নের অপেক্ষা। দুই বছর স্থগিত থাকার পর আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হওয়ার কথা। ২০১২ সালের মূল আইনে বলা হয়েছিল, কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের বার্ষিক লেনদেন ৩০ লাখ টাকার কম হলে কোনো ভ্যাট দিতে হবে না। এখন তা বাড়িয়ে ৫০ লাখ টাকা করা হয়েছে। টার্নওভার করের সীমা নূ্যনতম বার্ষিক লেনদেন ৫০ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৮০ লাখ টাকা করা হয়েছে। এখন থেকে ৮০ লাখ থেকে ৩ কোটি টাকা বার্ষিক লেনদেন হলে টার্নওভার কর দিতে হবে। টার্নওভার করহার ৩ শতাংশের পরিবর্তে ৪ শতাংশ করা হচ্ছে। এদিকে ভ্যাট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অটোমেশনের পূর্ণ বাস্তবায়ন ছাড়া এই আইন কার্যকর করা ঠিক হবে না। এখন পর্যন্ত ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প বাস্তবায়নের যে চিত্র, তাতে অটোমেশনের কাজ শেষ হতে অনেক সময় লাগবে, যা হয়েছে তাকে 'হাইব্রিড' সিস্টেম বলা যায়।