মার্কিন শুল্কারোপেও চীনের রপ্তানি বেড়েছে, কমেছে আমদানি

প্রকাশ | ১২ জুন ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চতর শুল্কারোপ সত্ত্বেও বেশ অপ্রত্যাশিতভাবেই মে মাসে চীনের রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে ফিরেছে। তবে প্রায় তিন বছরের মধ্যে দেশটির আমদানি সবচেয়ে বেশি কমেছে, যা স্থানীয় দুর্বল চাহিদাকে প্রতিফলিত করছে। এ পরিস্থিতি প্রণোদনামূলক পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বেইজিংয়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। খবর রয়টার্স। কিছু বিশ্লেষক সন্দেহ করেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য বিবাদ ক্রমেই বাড়ছে। এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৩০ হাজার কোটি ডলারের চীনা পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্কারোপের হুমকি দিয়েছেন। এটি এড়াতে চীনা রপ্তানি হয়তো কমতে পারে। তবে গতকাল প্রকাশিত প্রত্যাশার তুলনায় ভালো রপ্তানি তথ্য কিন্তু একটি দীর্ঘমেয়াদি ও ব্যয়বহুল মার্কিন-চীন বাণিজ্যযুদ্ধের আশঙ্কাকে দূর করবে না। বিশ্লেষকদের দাবি, এ যুদ্ধ বৈশ্বিক অর্থনীতিকে মন্দার দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় মে মাসে চীনের রপ্তানি বেড়েছে ১ দশমিক ১ শতাংশ, যেখানে বাজার প্রত্যাশা ছিল কমার। নমুরার অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আমরা প্রত্যাশা করেছি জুনেও রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক থাকবে, তবে তৃতীয় প্রান্তিকে এটি হ্রাস পেতে পারে। আমাদের আশঙ্কা, ওই সময় বাড়তি শুল্ক আরোপ করা হতে পারে। রয়টার্স পরিচালিত জরিপে অংশ নেয়া বিশ্লেষকরা বলেছিলেন, বিশ্বের সর্ববৃহৎ রপ্তানিকারক চীনের রপ্তানি মে মাসে কমতে পারে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। এপ্রিলে দেশটির রপ্তানি কমেছিল ২ দশমিক ৭ শতাংশ। যদিও অতীতের মতো রপ্তানির ওপর এখন ততটা নির্ভরশীল নয় চীন, তবে এখনো দেশটির জিডিপির প্রায় এক-পঞ্চমাংশ হলো রপ্তানি খাত। সম্প্রতি প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৮৯ কোটি ডলারে, যা এপ্রিলে ছিল ২ হাজার ১০১ কোটি ডলার। এটি ওয়াশিংটনের জন্য সবচেয়ে বড় মাথাব্যথার বিষয় হয়ে উঠেছে। মে মাসে চীনের আমদানি কমেছে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ, যা ২০১৬ সালের জুলাইয়ের পর সবচেয়ে বড় পতন। এ কারণে মে মাসে দেশটির বাণিজ্য উদ্বৃত্ত দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ১৬৫ কোটি ডলারে। তবে বিশ্লেষকরা পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, মে মাসে চীনের আমদানি কমবে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। এপ্রিলে আমদানি বেড়েছিল ৪ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় জানুয়ারি-মে সময়ে চীনের মোট রপ্তানি বেড়েছে মাত্র শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ, অন্যদিকে আমদানি কমেছে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ। নিজেদের মধ্যকার দ্বন্‌েদ্বর সমাধানে পৌঁছাতে না পেরে বিশ্বের শীর্ষ দুই অর্থনীতি রেষারেষি করে পরস্পরের পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করছে এবং গত সপ্তাহে চীনা টেলিকম সরঞ্জাম কোম্পানি হুয়াওয়ে টেকনোলজিসকে ওয়াশিংটনের কালো তালিকাভুক্ত করার পর উত্তেজনার পারদ আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। নিজেদের মধ্যকার বাণিজ্য দ্বন্দ্ব নিরসনে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার সর্বশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে ১০ মে এবং এরপর নতুন করে আলোচনার তারিখ নির্ধারণ হয়নি। ওইদিনই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০ হাজার কোটি ডলারের চীনা পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক বৃদ্ধি করেন এবং বাকি চীনা আমদানি পণ্যের ওপরও শুল্ক বৃদ্ধির জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে চীনও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ায়। ট্রাম্প জানিয়েছেন, চলতি মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জি২০ সম্মেলনে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাতের প্রত্যাশা করছেন। তবে ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের মতো বিভিন্ন বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠানের বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই দেশের মধ্যে একটি বাণিজ্য চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসছে, কেননা উভয় দেশের আচরণে মনে হচ্ছে, তারা একটি দীর্ঘ যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আইএনজির অর্থনীতিবিদদের মতে, বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে সর্বশেষ আর্থিক সংকটের পর চলতি বছর হতে যাচ্ছে বিশ্ববাণিজ্যের সবচেয়ে বাজে বছর। আর এজন্য প্রধানত দায়ী দুর্বল চাহিদা। চাহিদা বেড়েছে মাত্র শূন্য দশমিক ২ শতাংশ।