পুঁজিবাজারে সুশাসন চান প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ | ১৫ জুন ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পুঁজিবাজারের সুশাসনের ওপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, 'আমরা পুঁজিবাজারে সুশাসন দেখতে চাই। একটি শক্তিশালী অর্থনীতির পাশাপাশি আমরা দেখতে চাই একটি বিকশিত পুঁজিবাজার।' শুক্রবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে বাজেট-উত্তর সংবাদ সম্মেলনে এ সব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। 'শিল্পে বিনিয়োগে দীর্ঘমেয়াদে ঋণ সংগ্রহের আদর্শ মাধ্যম হচ্ছে পুঁজিবাজার' উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'দীর্ঘমেয়াদের ঋণ সংগ্রহে ঋণগ্রহীতাদের উৎসাহ প্রদানে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।' প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য অনেক প্রণোদনা থাকছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, 'পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর জন্য ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত লভ্যাংশ আয় করমুক্ত থাকবে। বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশের ওপর দ্বৈত কর পরিহার করা হবে।' পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে উৎসাহ দিতে বিশেষ প্রণোদনা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষায় প্রণোদনা স্কিমের আওতায় ৮৫৬ কোটি টাকা আবর্তনশীলের ভিত্তিতে পুনর্ব্যবহারের জন্য ছাড় করা হয়েছে।' বাংলাদেশের ইতিহাসে এটাই সর্ববৃহৎ বাজেট উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, 'আমাদের সরকারের বিগত দুই মেয়াদে ১০ বছরের যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে তার মাধ্যমে জনগণের মাঝে আমাদের প্রতি আস্থা বেড়েছে। তার প্রতিফলন ঘটেছে গত ৩০ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে।' সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা ও পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট নিহতদের স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। রীতি অনুযায়ী প্রতিবার বাজেট-উত্তর সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন অর্থমন্ত্রী। এবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অসুস্থ হওয়ায় সংবাদ সম্মেলন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করা হয়। এটি দেশের ৪৮তম এবং বর্তমান সরকারের তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বাজেট। 'সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ : সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের' শিরোনামে প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয় ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট এটি। গত বৃহস্পতিবার বেলা ৩টায় জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বাজেট অধিবেশন শুরু হয়। শুরুতে বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন অর্থমন্ত্রী হিসেবে এটি তার প্রথম বাজেট। দাঁড়িয়ে বাজেট বক্তৃতা শুরু করলেও পরে স্পিকারের অনুমতি নিয়ে অর্থমন্ত্রী নিজ আসনে বসে বাজেট উপস্থাপন করেন। কিন্তু বিকাল ৪টার পর অসুস্থ অর্থমন্ত্রীর পক্ষে প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন সম্ভব না হওয়ায় স্পিকারের অনুমতি নিয়ে বাকি অংশ সংসদে উপস্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী অর্থবছরে পুঁজিবাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের করমুক্ত লভ্যাংশ আয়ের সীমা ২৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় এ প্রস্তাব করেন। এ ছাড়া, তিনি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার থেকে প্রাপ্ত লাভের ওপর দ্বৈত কর পরিহারেরও প্রস্তাব করেন। প্রস্তাবিত বাজেটে বলা হয়, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে বিশেষ প্রণোদনা ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, 'কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীরা কোম্পানি থেকে ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রাপ্তির প্রত্যাশা করেন। কিন্তু ক্যাশ ডিভিডেন্ডের পরিবর্তে স্টক ডিভিডেন্ড তথা বোনাস শেয়ার বিতরণের প্রবণতা কোম্পানিগুলোর মধ্যে দেখা যায়। এতে বিনিয়োগকারীরা তাদের প্রত্যাশিত প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হন।' এ জন্য স্টক ডিভিডেন্ডের পরিবর্তে ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রদানকে উৎসাহিত করতে স্টক ডিভিডেন্ডের ওপর ১৫ শতাংশ কর প্রদানের প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী। এ ছাড়া, বাজেটে কোম্পানির অর্জিত মুনাফা থেকে শেয়ারহোল্ডার বা বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড দেয়ার পরিবর্তে রিটেইনড আর্নিংস বা বিভিন্ন ধরনের রিজার্ভ হিসেবে দেয়ার প্রবণতা রোধে কোম্পানির রিটেইনড আর্নিংস বা বিভিন্ন ধরনের রিজার্ভ সমষ্টি যদি পরিশোধিত মূলধনের ৫০ শতাংশের বেশি হয়, তাহলে যতটুকু বেশি হবে তার ওপর সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে ১৫ শতাংশ করারোপের প্রস্তাব করা হয়। বাজেট বক্তৃতায় আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, 'ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের হাতে পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানি থেকে প্রাপ্ত ডিভিডেন্ড আয়ের করমুক্ত সীমা ২৫ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করছি। এ ছাড়া, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ারবাজারে উৎসাহিত করতে এ বছর নিবাসী ও অনিবাসী সব ক্ষেত্রে একাধিকবার করারোপণ রোধ করার প্রস্তাব করছি।'