মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষিত শুল্কের আওতা থেকে ছাড় পাচ্ছেন না চীনা ই-কমার্স সরবরাহকারী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। ধারণা করা হচ্ছে, তাদের জন্য প্রযোজ্য একটি কর অব্যাহতি সুবিধা শিগগিরই বন্ধ হতে যাচ্ছে। এতদিন ডি মিনিমিস নামের বাণিজ্য বিধানটি হাজার হাজার ক্ষুদ্র রফতানি ব্যবসার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করছিল। এখন ওই খাতের ব্যবসায়ীরা শুল্ক এড়াতে বিকল্প কৌশল খুঁজছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে এফটি।
গত মাসে এক নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে ট্রাম্প ডি মিনিমিস সুবিধা বন্ধের ঘোষণা দেন, যা কিনা ৮০০ ডলারের কম মূল্যের চালানকে শুল্ক ও কঠোর কাস্টমস পরীক্ষার বাইরে রাখে।
জানুয়ারিতে চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো প্যাকেজের ক্ষেত্রে এ সুবিধা বন্ধ ঘোষণা এলেও পরে সাময়িকভাবে স্থগিত হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্র এখনো ডি মিনিমিস ব্যবস্থা বন্ধ করার পরিকল্পনা করছে। প্রতিদিন দেশে আসা লাখো প্যাকেজ স্ক্রিনিং ও করের আওতায় আনার জন্য যত দ্রম্নত সম্ভব ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ নতুন নয়। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সে যুদ্ধ আরো উসকে দিতে কঠোরভাবে শুল্ক আরোপের পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করেছেন। গত বৃহস্পতিবার তিনি চীনা পণ্যের ওপর নতুন করে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন, যা ফেব্রম্নয়ারিতে আরোপিত ১০ শতাংশ শুল্কের ওপর সংযোজিত হবে এবং আজ থেকে কার্যকর হচ্ছে।
এ পদক্ষেপগুলো চীনা বিক্রেতাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। বিশেষ করে ই-কমার্স পস্নাটফর্মের মাধ্যমে করমুক্ত বাণিজ্যের সুবিধা নেয়া রফতানিকারকরা সম্ভাব্য খরচ বৃদ্ধির ঝুঁকিতে রয়েছেন। তারা এখন যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন, বিকল্প বাজারে ক্রেতা খোঁজা ও শুল্ক খরচ ভোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়ার কৌশল খুঁজছেন।
দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য কমিউনিস্ট পার্টি-সমর্থিত সংস্থা চাইনিজ অ্যাসোসিয়েশন ফর স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম-সাইজড এন্টারপ্রাইজেস। এর ক্রস-বর্ডার ই-কমার্স বিভাগের সাবেক ডেপুটি সেক্রেটারি-জেনারেল ইয়ারং উলিউ বলেন, 'শুল্ক মার্কিন বাজারে আমাদের পণ্য বিক্রি ও হিস্যা কমিয়ে দেবে। ই-কমার্স শিল্পকে এজন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।'
২০১৭-২১ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে শুল্ক ও বাণিজ্য বিধিনিষেধের কারণে অনেক ব্যবসায়ী কৌশল পরিবর্তনে বাধ্য হন। তারা পুরনো ব্যবসা কৌশলের বদলে কম দামের ক্রয়াদেশ সরবরাহের দিকে ঝুঁকেছিলেন।
চীনা কর্মকর্তারা জানান, ২০১৯-২৪ সালের মধ্যে আন্তঃসীমান্ত ই-কমার্স ৬০ শতাংশের বেশি বেড়েছে, যা ২০২৪ সালে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি ইউয়ানে পৌঁছায়। ২০২৩ সালে এ ধরনের সরবরাহ চীনের মোট পণ্য বাণিজ্যের প্রায় ৬ শতাংশ দখলে রেখেছিল।
গুয়াংজুর বায়ইয়ুন জেলার টেক্সটাইল মালিক ঝাও শিউশিউ পাঁচ বছর ধরে শেইনের মতো পস্নাটফর্মের জন্য পণ্য সরবরাহ করে আসছেন। বর্তমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে জানান, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বৃহৎ চালানের দিকে মনোযোগ দেবে তার প্রতিষ্ঠান। ঝাও শিউশিউ বলেন, 'যদি শুল্ক আরোপ হয়, তাহলে এটি অবশ্যই খারাপ খবর। গত বছর থেকেই পরিস্থিতি কঠিন হয়ে উঠেছে, এ বছরও কোনো উন্নতি হয়নি।'
হংকংভিত্তিক মোবাইল কেস প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান কেসেটিফাইয়ের বৃহত্তম বাজার যুক্তরাষ্ট্র। তারা এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে প্রিন্টিং অবকাঠামো গড়ে তুলেছে। কোম্পানির কার্যক্রম সম্পর্কে অবগত এক ব্যক্তি বলেন, 'কেসেটিফাই দ্রম্নত কাজ করতে চায়। তাই তারা যুক্তরাষ্ট্রে খালি কেসের চালান পাঠায় এবং সেখানে প্রিন্ট করে।'
শেইন ও তেমুর মতো পস্নাটফর্মের জন্য সাঁতারের পোশাক সরবরাহকারী খুঁজে দেয় ঝাং ঝোং বাওয়ের প্রতিষ্ঠান। তিনি বলেন, 'কারখানাগুলোর উৎপাদন পুরোপুরি আগের মতো নেই। শুল্কের উদ্বেগের কারণে তারা পণ্য মজুদ করতে সাহস পাচ্ছে না।'
চীনা রফতানিকারকরা অন্য দেশে উৎপাদন সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। তারা এমন দেশ খুঁজছেন, যেগুলো ট্রাম্পের শুল্ক লক্ষ্যের বাইরে থাকার সম্ভাবনা বেশি। ডিএইচএল এক্সপ্রেসের প্রধান নির্বাহী জন পিয়ারসন বলেন, 'ই-কমার্স ব্যবসায়ীরা আগে থেকেই চীনের বাইরে উৎপাদন ও বিতরণ কেন্দ্র তৈরি করে আসছে। শুল্কের আলোচনা শুরু হওয়ার পর থেকে এ পরিকল্পনা আরো গতিশীল হয়েছে।'
অনেক বিক্রেতা মনে করেন, শুল্ক আরোপের পরও পণ্যের দাম প্রতিযোগিতামূলক থাকবে এবং অতিরিক্ত খরচ ভোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দিতে পারবেন তারা। তেমু পস্নাটফর্মে হোম ডেকর ও ছুটির সাজসজ্জার পণ্য বিক্রি করেন এমন একজন বলেন, 'আমাদের মতো স্বতন্ত্র বিক্রেতাদের জন্য শুল্ক মানে শুধু প্রফিট মার্জিন কিছুটা কমে যাওয়া। ভোক্তারা এটি সামলাতে পারে এবং অর্ডারের ওপর কোনো প্রভাব পড়েনি।'
আর্থিক প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাকসের এক জরিপ অনুসারে, ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের পর তেমু পস্নাটফর্মে কোম্পানি নির্ধারিত পণ্যের দাম ৪২ শতাংশ বাড়ে, তবে সিদ্ধান্ত স্থগিত করার পর দাম আবার কমে যায়। অ্যামাজন ও ইবে পস্নাটফর্মে সার্কিট বোর্ড বিক্রি করেন লিউ। তার ভাষ্যে, শুল্কের খরচ শেষ পর্যন্ত ভোক্তাদের ওপর চাপানো হবে এবং ভবিষ্যতে শুল্ক খরচ বিলের মধ্যে আলাদা করে দেখানো হতে পারে।