শেয়ারবাজারে পতন দিয়ে অর্থবছর শুরু

প্রকাশ | ০৩ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির রিজার্ভের ওপর কর আরোপ-সংক্রান্ত সিদ্ধান্তে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হলেও, দেশের শেয়ারবাজারে দরপতন থামছে না। উল্টো টানা দরপতন দেখা দিয়েছে। আগের কার্যদিবসের ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) দরপতন হয়েছে। এর মাধ্যমে নতুন অর্থবছরের (২০১৯-২০) প্রথম কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে দরপতন ঘটলো। তালিকাভুক্ত কোম্পানির রিজার্ভ ও বোনাস লভ্যাংশের ওপর কর আরোপের প্রস্তাব রেখে গত ১৩ জুন জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। ওই প্রস্তাবে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর বোনাস লভ্যাংশ কমিয়ে নগদ লভ্যাংশ দেয়ায় উৎসাহিত করতে ১৫ শতাংশ কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়। এর পক্ষে যুক্তি হিসেবে অর্থমন্ত্রী বলেন, 'বিনিয়োগকারীরা শেয়ারে বিনিয়োগ করে ক্যাশ ডিভিডেন্ড আশা করে। কিন্তু কোম্পানিগুলো ক্যাশ ডিভিডেন্ড না দিয়ে স্টক দিচ্ছে। এতে বিনিয়োগকারীরা প্রত্যাশিত প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হন, যার প্রভাব পড়ে শেয়ারবাজারে। তাই কোম্পানিকে স্টক ডিভিডেন্ড প্রদান না করে ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রদানে উৎসাহিত করার জন্য কোম্পানির স্টক ডিভিডেন্ডের ওপর ১৫ শতাংশ কর প্রদানের প্রস্তাব করছি।' মন্ত্রী আরও বলেন, 'অনেক প্রতিষ্ঠান শেয়ারহোল্ডারদের ডিভিডেন্ড না দিয়ে রিটেইনড আর্নিংস বা বিভিন্ন ধরনের রিজার্ভ হিসেবে রেখে দেয়ার প্রবণতা দেখা যায়। এতে বিনিয়োগকারীরা ডিভিডেন্ড প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হন, যার প্রভাব পুঁজিবাজারে পড়ে। কোনো কোম্পানির আয় বছরে রিটেইনড আর্নিংস, রিজার্ভ ইত্যাদির সমষ্টি যদি পরিশোধিত মূলধনের ৫০ শতাংশের বেশি হয়, তাহলে যতটুকু বেশি হবে, এর ওপর কোম্পানিকে ১৫ শতাংশ কর দিতে হবে।' নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির রিজার্ভ ও বোনাস লভ্যাংশের ওপর এমন কর আরোপ-সংক্রান্ত প্রস্তাবের ব্যাপক সমালোচনা করেন শেয়ারবাজার-সংশ্লিষ্টরা। এর প্রেক্ষিতেই এ বিষয়ে বড় ধরনের পরিবর্তন এনে গত ৩০ জুন ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পাস হয়। প্রস্তাবিত বাজেটে সংশোধনী এনে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির নির্দিষ্ট বছরের মুনাফার ৭০ শতাংশের বেশি রিটেইন আর্নিংস, রিজার্ভ বা সারপস্নাস হিসেবে রাখলে, তার ওপর ১০ শতাংশ হারে কর দেয়ার বিধান করা হয়েছে। অর্থাৎ কোম্পানির মুনাফর ৭০ শতাংশের বেশি রিজার্ভে রাখার ক্ষেত্রে, পুরো অংশের ওপর ১০ শতাংশ কর দিতে হবে। পাশাপাশি নির্দিষ্ট বছরে নগদ লভ্যাংশের থেকে বেশি বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ ঘোষণা বা বিতরণ করলে, এর ওপর ১০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। আর নগদ লভ্যাংশ না দিলেও বোনাস শেয়ারের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে- এমন সংশোধনী আনা হয়েছে। তবে নতুন অর্থবছরের বাজেট পাসের পরপরই ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স'র টানা নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা দেয়। ফলে ২০১৮-১৯ অর্থবছর শেষ হয় শেয়ারবাজারে পতন দিয়ে। গত অর্থবছরের শেষ কার্যদিবসের ধারাবাহিকতায় নতুন অর্থবছরের প্রথম কার্যদিবস মঙ্গলবারও শেয়ারবাজারে দরপতন হয়েছে। এদিন সূচকটি আগের কার্যদিবসের তুলনায় ৩৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৩৮৪ পয়েন্টে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২৩৫ পয়েন্টে। আর ডিএসই-৩০ সূচক ১৬ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৯১২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। বাজেট পাসের পর শেয়ারবাজারে এমন দরপতন দেখা দিলেও তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংরক্ষিত আয় (রিটেইন আর্নিংস) ও বোনাস শেয়ারে সংশোধিত কর আরোপের প্রস্তাবকে শেয়ারবাজারের জন্য ইতিবাচক ও বিনিয়োগকারীবান্ধব মন্তব্য করে, ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি শাকিল রিজভী বলেছেন, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য সংশোধিত প্রস্তাব যুগান্তকারী। তার মতে, করের নতুন হার কার্যকর হলে কোম্পানিগুলোর মধ্যে নগদ লভ্যাংশ দেয়ার প্রবণতা বাড়বে। এতে বিনিয়োগকারীরা লাভবান হবেন। সব মিলিয়ে শেয়ারবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। শেয়ারবাজারে দরপতনের কারণ হিসেবে এই শেয়ারবাজার বিশ্লেষক বলেন, বাজেটে বেশি কিছু প্রণোদনা দেয়া হলেও বাজারে তারল্য সংকট রয়েছে। এর পাশাপাশি সঞ্চয়পত্রের সুদ হারও বেশি। মূলত এই দুই কারণে শেয়ারবাজারে দরপতন হচ্ছে। এদিকে মূল্যসূচক পতনের পাশাপাশি মঙ্গলবার ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ১৪৩ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৭৪টি এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৬টির। তবে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। দিনভর ডিএসইতে ৪৮২ কোটি ৭১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৪৬৯ কোটি ৭৫ লাখ। অর্থাৎ লেনদেন বেড়েছে ১২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। টাকার অংকে ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে রানার অটোমোবাইলের শেয়ার। কোম্পানিটির ১৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। লেনদেনে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ন্যাশনাল পলিমারের ১৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।