বিপাকে পিপলসের আড়াইশ কর্মী

প্রকাশ | ১২ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

ইমদাদ হোসাইন
বুধবার অবসায়নের ঘোষণার পর বেকার হয়ে পড়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন হতে নিম্নস্তরের কর্মীরা -যাযাদি
ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর কর্মচারী-কর্মকর্তারা জানতে পারেন তাদের প্রতিষ্ঠানের দুরবস্থার কথা। তবে বুধবার অবসায়নের ঘোষণার পর বেকার হয়ে পড়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন হতে নিম্নস্তরের কর্মীরা। সংকটে পরিবার পরিজন নিয়ে হতাশায় ভুগছেন তারা। গতকাল পিপলস লিজিংয়ের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট কাজী আহমেদ জামানের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি জানান, দুই দিন থেকে তাদের অফিসে অসংখ্য আমানতকারী এসেছেন। আবার ফিরেও গেছেন। তাদের কিভাবে সান্ত্বনা দেবেন। তাদের কর্মীর সংখ্যা ২৫০ জন। আমানতকারীদের পাশাপাশি তারাও এখন হতাশায় আছেন। বলা যায় এক ধরনের অসুস্থ জীবনযাপন করছেন। এই বয়সে চাকরি হারিয়ে কোথায় যাবেন। আবার নিজেদের পরিচিত গ্রাহকদের জমানো টাকাগুলো ফেরত পাবেন কিনা সেটাও জানেন না। বৃহস্পতিবার সরেজমিন পিপলস লিজিংয়ের প্রধান কার্যালয়ে আমানতকারীদের ব্যাপক ভিড় লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু কেউই টাকা পাননি। কিভাবে টাকা পাবেন সে বিষয়েও কোনো উত্তর পাননি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। শুধু একটি টোকেন হাতে নিয়েই ফিরতে হয়েছে আমানতকারীদের। আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেয়ার প্রক্রিয়া সম্বন্ধে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামি হুদা জানান, বিষয়টা এখন সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন আমরাও জানি না ভবিষ্যতে কী হতে যাচ্ছে। বলতে পারেন আমার নিজেরই এখন চাকরি নেই। অফিসটিতে গতকালও ঘোরাঘুরি করছিলেন আবদুর রহমান নামের এক আমানতকারী। বয়স ৭৫। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী তিনি। তিনি বলেন, পেনশনের টাকায় আমানত রেখেছি। প্রায় সাত মাস হলো আমানতের টাকার জন্য ঘুরছি। কিন্তু টাকা দিচ্ছে না। এখন প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলে আমানতের টাকা কে দেবে? কবে দেবে? কিভাবে পাবো এমন নানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে সকাল থেকে পিপলস লিজিংয়ের মতিঝিল অফিসে বসে আছি। তিনি বলেন, গত সাত মাস ধরে ঘুরাচ্ছে। টাকা পাইনি। একবার চেক দিয়েছিল। উঠানো যায়নি। এখন খুব দুশ্চিন্তায় আছি। আবদুর রহমানের মতো পিপলস লিজিংয়ের আমানতকারী ছয় হাজার। তাদের প্রায় সবারই প্রশ্ন আমানতের টাকা কে দেবে? কবে দেবে? কিভাবে দেবে? গত দুদিন অফিসে না এলেও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অফিস করছেন পিপলস লিজিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামি হুদা। পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ সংস্থা। তারা অবসায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিষয়টা এখন সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আমানতকারীর অর্থ কিভাবে ফেরত দেবে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকই সিদ্ধান্ত নিবে। এখন এ বিষয়ে কথা বলা বা সিদ্ধান্ত নেয়ার কোনো ক্ষমতা আমাদের নেই। যারা কর্মরত তাদের কী ব্যবস্থা নেয়া হবে জানতে চাইলে পিপলস লিজিংয়ের এমডি বলেন, এখন আমারই তো চাকরি নেই। অন্যদের বিষয়ে কী বলবো। এদিকে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনায় চরম সংকটে থাকা পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের (পিএলএফএসএল) অবসায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে আমানত ফিরে না পাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন আমানতকারীরা। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, টাকা পেতে আমানতকারীদের কোনো সমস্যা হবে না। কারণ পিপলস লিজিংয়ের আমানতের চেয়ে সম্পদের পরিমাণ বেশি রয়েছে। পিপলস লিজিংয়ের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ২০১৪ সালে তদন্ত করে প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন অনিয়মের তথ্য জানা যায়। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা বোর্ডের অনেকেই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। পরে বাংলাদেশ ব্যাংক চিঠি দিয়ে পরিচালনা বোর্ড ভেঙে নতুন বোর্ড গঠন করে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংককে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয়। এরপর অনেক চেষ্টার পরও প্রতিষ্ঠানটি উন্নতি করতে পারেনি। তাই আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় প্রতিষ্ঠানটি অবসায়নের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দেয়া হয়। গত ২৬ জুন মন্ত্রণালয় অনুমতি দেয়। এখন প্রতিষ্ঠানটি অবসায়নের জন্য আদালতে যাওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অবসায়ন হলেও আমানতকারীদের আতঙ্কের কিছু নেই উলেস্নখ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, আমাদের কাছে যে হিসাব রয়েছে তাতে প্রতিষ্ঠানটির আমানতের তুলনায় সম্পদের পরিমাণ বেশি রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির বর্তমানে আমানত রয়েছে দুই হাজার ৩৬ কোটি টাকা। বিপরীতে সম্পদ রয়েছে তিন হাজার ২৩৯ কোটি টাকার।