বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ও রূপপুর পারমাণবিকের বিমা সাধারণ বিমায়

প্রকাশ | ১৩ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
সম্পদের ঝুঁকি কমাতে সাধারণ বিমা করপোরেশনের (এসবিসি) সঙ্গে বিমা করেছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর 'ইন অরবিট' (কক্ষ পথ) ও রূপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার পস্নান্ট (আরএনপিপি) কর্তৃপক্ষ। সাধারণ বিমা করপোরেশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র মতে, আরএনপিপি প্রকল্প-১ ও ২ এর নামে মোট ১ হাজার ২৬৫ কোটি ইউএস ডলারের বিমা করা হয়েছে। তার জন্য চার কিস্তিতে প্রিমিয়াম বাবদ ৪ কোটি ৮৭ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ ইউএস ডলার সমপরিমাণ অর্থ দিতে হবে সাধারণ বিমাকে। অর্থাৎ ৮৪ দশমিক ৫০ টাকা প্রতি ডলারে মূল্য হলে ১১ জুলাই ২০১৯ সালের ডলারের মূল্য অনুসারে এসবিসিকে দিতে হবে ৪১১ কোটি ৬২ লাখ ৯০ হাজার ৭৫০ টাকা। আর তাতে ১ হাজার ২৬৫ কোটি ইউএস ডলার অর্থাৎ ১ লাখ ৬ হাজার ৮৯২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পাবে আরএনপিপি কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে প্রথমবারের মত সাধারণ বিমা করপোরেশনের সঙ্গে ঝুঁকি কমাতে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর 'ইন অরবিট' (কক্ষ পথ) বিমা করছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এই বিমার প্রিমিয়াম ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৮১ হাজার ৩১৮ দশমিক ১৯ ইউরো, যা বাংলাদেশি দেশি টাকায় ৬ কোটি ৪৭ লাখ ২৫ হাজার ২২৮ দশমিক ৫ টাকা। সাধারণ বিমা করপোরেশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এ বছরের ১১ জুলাই থেকে ২০২০ সালের ১০ জুলাই পর্যন্ত এক বছরের জন্য ফ্রান্সের কোম্পানি থ্যালাস অ্যালেনিয়াকে বাদ দিয়ে দেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে করা হচ্ছে। এতে দেশের সম্পদ দেশেই থাকছে বলে মনে করেন বিমা সংশ্লিষ্টরা। সূত্র মতে, ১০ জুলাই ২০১৯ তারিখ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের বিমা চুক্তি শেষ। আর ১১ জুলাই থেকে সেই বিমা সাধারণ বিমা করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তি বন্ধ হয়েছে। আগামী এক বছরের জন্য বিটিআরসিকে বিমা বাবদ ৬ লাখ ৮১ হাজার ৩১৮ দশমিক ১৯ ইউরো। এর মধ্যে শুধু প্রিমিয়াম বাবদ দিতে হবে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৪৫০ দশমিক ৬০ ইউরো। যা টাকার অংকে ৫ কোটি ৬২ লাখ ৮২ হাজার ৮০৭ টাকা। তার সঙ্গে ভ্যাট দিতে হবে ৮৮ হাজার ৮৯৭ দশমিক ৫৯ ইউরো, যা টাকার অংকে ৮৪ লাখ ৪২ হাজার ৪১১ টাকা। অন্যদিকে রূপপুর পারমানবিক কেন্দ্রের দুটি ইউনিটের বিমার মধ্যে প্রথম ইউনিটের বিমা মেয়াদ শুরু হয়েছে ২০১৭ সালের আগস্ট মাস থেকে। থাকবে ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত। এরপরও আরও ২৪ মাস কোনো ধরনের সমস্যা হলে তার ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। একইভাবে ইউনিট-২ এর বিমার মেয়াদ শুরু হয়েছে ২০১৭ সালের ১ আগস্ট থেকে, চলবে ২০২৪ সালের ২২ অক্টোবর পর্যন্ত। এরপরও আরও ২৪ মাস কোনো সমস্যা হলে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। সার্বিক বিষয়ে এসবিসির ডেপুাটি জেনারেল ম্যানেজার (পুনঃবিমা) জাকির হোসেন বলেন, বিদেশিরা তো মনে করেছিল বাংলাদেশের এতো বড় বিমা করার সক্ষমতা নেই। সাধারণ বিমা করপোরেশন বিমাটি করতে পারায় একদিকে দেশের সম্পদ দেশেই রইল। অন্যদিকে বিদেশিরাও জানল যে, বাংলাদেশের বিমা করার সক্ষমতা আছে। তাতে দেশের মানুষের মধ্যে এসবিসির প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা বাড়বে। এটা আমাদরে বড় অর্জন। পাওয়ারে সেক্টরের কোম্পানিগুলোর মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। তারাও দেশি কোম্পানির সঙ্গে বিমা করতে উৎসাহিত হবে বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা। উলেস্নখ্য, বাংলাদেশের পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক কেন্দ্রের মূল নির্মাণকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় ২০১৭ সালেন ৩০ নভেম্বর। প্রকল্পটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের একক বৃহত্তম প্রকল্প এটি এবং কেন্দ্রটির মূল পর্যায়ের উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ পারমাণবিক জগতে প্রথম পা রাখবে। পাবনায় পদ্মা নদীর পাড়ে রাশিয়ান রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি করপোরেশন নেতৃত্ব দিচ্ছে রূপপুর পারমানবিক বিদু্যৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ। দুই ইউনিটের বর্তমান বিদু্যৎ কেন্দ্র থেকে উৎপাদন হচ্ছে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদু্যৎ। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের বিষয়ে সাধারণ বিমা করপোরেশনের ডেপুাটি জেনারেল ম্যানেজার (পুনঃবিমা) জাকির হোসেন বলেন, অনেক চেষ্টার পর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের বিমা সাধারণ বিমা করপোরেশের সঙ্গে হচ্ছে। দেশের সম্পদ দেশে রাখতেই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তাতে দেশের বিমার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা বাড়বে। সাধারণ বিমা করপোরেশেনে দেশি বিমা কোম্পানির পাশাপাশি বিদেশি কোম্পানিগুলো বিমাগুলো বিমা করতে উৎসাহিত হবে। তিনি বলেন, বিটিআরসি দায়িত্বে থাকা পরিচালক রিয়াজ-উল-কাদেরও আমাদের অনেক সহযোগিতা করেছেন। উলেস্নখ্য, বাংলাদেশে প্রথম স্যাটেলাইট নিয়ে কাজ শুরু হয় ২০০৭ সালে। সে সময় মহাকাশের ১০২ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশে কক্ষপথ বরাদ্দ চেয়ে জাতিসংঘের অধীন সংস্থা আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নে (আইটিইউ) আবেদন করে বাংলাদেশ; কিন্তু বাংলাদেশের ওই আবেদনের ওপর ২০টি দেশ আপত্তি জানায়।