যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে মন্দার আশঙ্কা

প্রকাশ | ১৩ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
চলতি বছরের এপ্রিলে সংকোচনের পর মে মাসে পুনরায় প্রবৃদ্ধিতে ফিরেছে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি। গতকাল প্রকাশিত এক সরকারি পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে। কিন্তু প্রবৃদ্ধিতে ফেরা সত্ত্বেও ভবিষ্যৎ মন্দা নিয়ে আশঙ্কা বহাল রয়েছে। খবর বিবিসি। যুক্তরাজ্যের অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকসের (ওএনএস) পরিসংখ্যান অনুসারে, আগের মাসের চেয়ে মে মাসে অর্থনীতি দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে। এর আগে এপ্রিলে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে দশমিক ৪ শতাংশ সংকোচন দেখা যায়। অর্থনীতির প্রায় প্রতিটি খাতে প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও দ্বিতীয় প্রান্তিকে সংকোচন এড়াতে হলে জুনের প্রবৃদ্ধি পরিসংখ্যান শক্তিশালী হতে হবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। ওএনএসের জিডিপি প্রধান রব কেন্ট-স্মিথ বলেন, এপ্রিলে যুক্তরাজ্যে গাড়ি উৎপাদনে বড় পতন দেখা গিয়েছিল। খাতটির আংশিক পুনরুদ্ধার মে মাসে অর্থনীতি ঊর্ধ্বগামী হওয়ার অন্যতম কারণ। উলেস্নখ্য, চলতি বছরের মার্চে ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছিল। মার্চের ব্রেক্সিট সময়সীমা সামনে রেখে কারখানাগুলোর আত্মরক্ষামূলক পরিকল্পনার কারণে এপ্রিলে যুক্তরাজ্যে গাড়ি উৎপাদন প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে। তবে এ পুনরুদ্ধার সত্ত্বেও গাড়ি শিল্পের উৎপাদন এখনো চলতি বছরের প্রথম দিকের চেয়ে নিচে রয়েছে বলে ওএনএস জানিয়েছে। কেন্ট-স্মিথ বলেন, সর্বশেষ তিন মাসে জিডিপি মাঝারি গতিতে বেড়েছে। এর মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি), যোগাযোগ ও খুচরা খাতে জোরালো ভাব দেখা গেছে। এর বাইরে ২০১৮ সালের গ্রীষ্মের পর থেকে সেবা খাতে দীর্ঘমেয়াদি মন্দা অব্যাহত রয়েছে। ওএনএসের পরিসংখ্যান অনুসারে, এপ্রিলে দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পর মে মাসে সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি অপরিবর্তিত থাকতে দেখা যায়। উলেস্নখ্য, যুক্তরাজ্যের অর্থনীতির ৮০ শতাংশে অবদান রয়েছে সেবা খাতের। ব্রিস্টলভিত্তিক আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান হারগ্রেভস ল্যান্সডাউনের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ বেন ব্রেটেল বলেন, সর্বশেষ পরিসংখ্যান দ্বিতীয় প্রান্তিকে অর্থনীতিতে সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি নির্দেশ করছে। তবে তা চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে অর্জিত দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির চেয়ে বেশ মন্থর হবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে। ব্রেটল বলেন, ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে ব্রেক্সিটসংশ্লিষ্ট অনিশ্চয়তা নিয়ে আশঙ্কা বহাল থাকায় যুক্তরাজ্যের অর্থনীতির ওপর থেকে এখনো বিপদের মেঘ কেটে যায়নি। এদিকে চলতি সপ্তাহে ব্রিটিশ রিটেইল কনসোর্টিয়ামের প্রকাশিত পরিসংখ্যানে জুনে বার্ষিক ভোক্তাব্যয় প্রবৃদ্ধি ১৯৯৫ সালের পর সবচেয়ে কমেছে। এমন একটি সময় ব্রিটেনের অর্থনীতি মন্থর হচ্ছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্য উত্তেজনা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে। উলেস্নখ্য, আগামী ৯ আগস্ট এপ্রিল-জুন প্রান্তিকের পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হবে। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অপরিবর্তিত থাকবে বলে গত মাসে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড জানিয়েছিল। গতকাল যুক্তরাজ্যের অন্যতম অর্থনৈতিক পূর্বাভাসকারী সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইকোনমিক অ্যান্ড সোস্যাল রিসার্চ (এনআইইএসআর) জানায়, ব্রেক্সিটসংক্রান্ত অনিশ্চয়তা অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত করায় জুন পর্যন্ত তিন মাসে যুক্তরাজ্যের জিডিপি দশমিক ১ শতাংশ হারাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তৃতীয় প্রান্তিকে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে পারে বলে পূর্বাভাস করেছে সংস্থাটি। এনআইইএসআর জানিয়েছে, ওএনএসের সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে ধারণা করা যাচ্ছে, চলতি বছরের শুরুতেই গতি হারাতে শুরু করে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি।