এক দশকে প্রথমবার সুদহার কমাচ্ছে ফেড

প্রকাশ | ১৩ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
দাবি অনুযায়ী সুদহার না কমানোয় ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) কড়া সমালোচনা করে আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে এবার ট্রাম্পের ইচ্ছা পূরণ হতে পারে। কেননা মার্কিন অর্থনীতিতে শক্তি জোগাতে শিগগিরই সুদহার কমানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল। জুলাইয়ের শেষ নাগাদ সুদহার কমানোর সম্ভাবনা রয়েছে। আর এটি হলে তা হবে এক দশকের মধ্যে ফেডের প্রথম সুদহার কর্তন। খবর বস্নুমবার্গ ও গার্ডিয়ান। কংগ্রেসের সামনে হাজির হওয়ার আগে বুধবার প্রকাশ করা এক প্রতিবেদনে পাওয়েল জানান, এখন 'অনেক' ফেড কর্মকর্তা বিশ্বাস করছেন যে বৈশ্বিক অর্থনীতির চলমান দুর্বলতা ও ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য উত্তেজনা সুদহার কমানোর জন্য শক্তিশালী যুক্তি দাঁড় করাচ্ছে। প্রতিবেদনে পাওয়েল লিখেছেন, বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে সৃষ্ট অনিশ্চয়তা ও বৈশ্বিক অর্থনীতির অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ভবিষ্যতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলা অব্যাহত রেখেছে। গত মাসে বৈঠকে বসেছিলেন ফেড কর্মকর্তারা। সে সময় বর্তমান সুদহার বজায় রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস কমিটিতে দেয়া একটি প্রস্তুতকৃত বিবৃতিতে পাওয়েল বলছেন, মার্কিন অর্থনীতির গতি ধরে রাখতে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাওয়েলের এমন ইঙ্গিতে ওয়াল স্ট্রিটসহ বিশ্বের প্রধান প্রধান শেয়ারবাজারে সূচক বাড়তে দেখা যায়। নাসডাক ৬০ পয়েন্টের বেশি বেড়ে দাঁড়ায় রেকর্ড ৮ হাজার ২০২ দশমিক ৫৩ পয়েন্টে। সূচক বাড়ে ডাও জোনস ও এসঅ্যান্ডপি-৫০০। এশিয়ার মধ্যে সাংহাই কম্পোজিট বাড়ে শূন্য দশমিক ৩৩ ও শেনঝেন কম্পোজিট শূন্য দশমিক ৩৭২ শতাংশ। হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচক বাড়ে ১ দশমিক ১৯ শতাংশ। নিক্কেই ২২৫ বাড়ে শূন্য দশমিক ৪৭ ও দক্ষিণ কোরিয়ার কসপি বাড়ে ১ দশমিক ১৮ শতাংশ। সুদহার কমানোর জন্য পাওয়েলের ওপর ক্রমান্বয়ে চাপ দিয়ে আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সম্প্রতি এক টুইটার বার্তায় ট্রাম্প অভিযোগ করে বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা আমাদের প্রতিদ্বন্‌দ্বীরা নয়, বরং ফেড। সম্ভবত কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে ফেডের কোনো চেয়ারম্যানকে এত সমালোচনার শিকার হতে হয়নি। ট্রাম্প পদত্যাগ করতে বললে তিনি তা মানবেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যাংকের প্রধান জানান, তিনি চার বছরের মেয়াদ শেষেই চলে যেতে চান। জেরোম পাওয়েল বলেন, আইন আমাকে চার বছরের মেয়াদ দিয়েছে এবং আমার ইচ্ছা এটা পূরণ করা। সর্বশেষ বিশ্বব্যাপী মন্দার সময় ২০০৭ সালের আগস্টে ফেড সুদহার কমানো শুরু করে। কয়েক বছর ধরে সুদহার প্রায় শূন্যে রাখা হয়। তবে মার্কিন অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর সঙ্গে ফেড ধীরগতিতে সুদহার বাড়ানো শুরু করে। ২০১৫ সালের পর নয়বার সুদহার বাড়িয়েছে ফেড, যার মধ্যে পাওয়েলের নেতৃত্বে চারবার। প্রবৃদ্ধির গতি বাড়ানোর আশায় ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই বারবার সুদহার কমানোর জন্য ফেডের ওপর চাপ দিয়ে আসছেন ট্রাম্প। তবে রেকর্ড নিম্নের কাছাকাছি থাকা বেকারত্ব হার ও মার্কিন অর্থনীতিতে শক্তিশালী ভাব বজায় থাকায় সর্বশেষ বৈঠকে ফেড সুদহার বজায় রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তবে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের বাজারগুলোয় অস্থিরতার আভাস অনেক ফেড কর্মকর্তার মত পাল্টাতে ভূমিকা রেখেছে এবং এখন সুদহার কমানোর জোরালো সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। পিএনসি ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ গাস ফাউচার বলেন, সুদহার কমানোর জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী অর্থনৈতিক কারণ রয়েছে। আমি মনে করি, শিগগিরই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। অবশ্যই প্রেসিডেন্ট সুদহার কমানোর দাবি করায় পরিস্থিতি জটিল হয়েছে। তবে এটাও ঠিক, অনিশ্চয়তা অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বিনিয়োগকারীরা প্রত্যাশা করছেন, ৩০-৩১ জুলাই অনুষ্ঠেয় বৈঠকে সুদহার ২৫ শতাংশীয় পয়েন্ট কমাবে ফেড। বর্তমানে ফেডের বেঞ্চমার্ক সুদহার ২ দশমিক ২৫ থেকে ২ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে রয়েছে।