হুমকির মুখে দেশীয় ডেবিট ক্রেডিট কার্ড উদ্যোক্তারা

প্রকাশ | ১৭ জুলাই ২০১৯, ০০:০০ | আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৯, ২০:৪০

অনলাইন ডেস্ক
যাযাদি রিপোর্ট শিল্প খাতের নতুন পণ্য হিসেবে কয়েক বছর ধরে দেশেই উৎপাদন হচ্ছে ডিজিটাল ব্যাংকিং লেনদেনের স্মার্টকার্ড। এটিএম কার্ড, চিপ বেসড ভিসা কার্ড, মাস্টার কার্ডসহ বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল লেনদেনের কার্ডের একটি বড় অংশ বাংলাদেশের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান উৎপাদন করছে। তারা মূলত দেশের ব্যাংকগুলোকে এই কার্ড সরবরাহ করে। ২০০৭ সালে তারা দেশের শিল্প খাতে কার্ড উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করে। ২০০৮ সালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড দেশীয় শিল্পকে রক্ষা করার জন্য আমদানিকৃত সিমকার্ডের ওপর ট্যারিফ ভ্যালু নির্ধারণ করে। এতে একটা শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে যায় এই শিল্প। বর্তমানে চাহিদার শতভাগ সিমকার্ড দেশি প্রতিষ্ঠানগুলো সরবরাহ করছে। কর্মসংস্থান হয়েছে কয়েক হাজার শিক্ষিত মানুষের। এখন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নতুন করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমদানিকৃত কার্ডের বিপরীতে মিনিমাম ট্যারিফ ভ্যালু বাতিলের। একটি মহলের প্রভাবে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এনবিআরের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে দেশীয় কার্ড উৎপাদকরা অস্তিত্ব সংকটে পড়ে যাবে। আর সরকার হারাবে প্রায় শত কোটি টাকার রাজস্ব। গুটিকয় প্রতিষ্ঠান বিদেশ থেকে কার্ড আমদানি করে থাকে। সরকার দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে প্রায় ১০০০টি পণ্যের ওপর মিনিমাম ট্যারিফ ভ্যালু নির্ধারণ করেছে। কিন্তু গুটিকয় ব্যক্তির প্রভাবে কার্ড আমদানিতে ট্যারিফ প্রত্যাহারের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, দেশে ব্যাংকিংসহ বিভিন্ন ডিজিটাল লেনদেনে প্রায় দেড় কোটি কার্ড ব্যবহৃত হচ্ছে। এই মুহূর্তে এসব কার্ডের ২০ থেকে ৩০ শতাংশের উৎপাদক দেশীয় প্রতিষ্ঠান। বাকি অংশ বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। বর্তমানে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো চিপ বেসড কার্ড উৎপাদন করছে, যা মাস্টার কার্ড, ভিসা কার্ডে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল লেনদেনের হ্যাকিং প্রতিরোধে চিপ বেসড কার্ডই জনপ্রিয়। এই শিল্প সুরক্ষায় আমদানি করা কার্ডের ওপর ২/২.৫ ডলার শুল্ক আরোপিত আছে। এতে দেশি উৎপাদকরা বিশেষ সুবিধা পায়। ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসহ অধিকাংশ ব্যাংক দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে কার্ড কিনছে। সুলভ ও সহজলভ্য সরবরাহ হওয়ায় বিদেশি ব্যাংকগুলোও স্থানীয় প্রতিষ্ঠান থেকে কার্ড কিনছে। তবে ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী বিদেশ থেকেই আমদানি করতে বেশি আগ্রহী। এর একটি বড় কারণ ওভার ইনভয়েস, অর্থ পাচার। সম্প্রতি ব্যাংকিং খাতের জন্য আমদানি হওয়া বিভিন্ন ডিজিটাল ব্যাংকিং প্রযুক্তি পণ্য সরবরাহকারী কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম খতিয়ে দেখতে মাঠে নেমেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। এর বাইরে আমদানি করা কার্ডের শুল্ক প্রত্যাহার করা হলে দেশীয় উৎপাদকরা অস্তিত্ব সংকটে পড়বেই। পাশাপাশি বেকার হবে কয়েক হাজার লোক। সরকার প্রতি বছর রাজস্ব হারাবে প্রায় শত কোটি টাকা। এ বিষয়ে কার্ড উৎপাদনকারী সিল্কওয়ে গ্রম্নপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস কে ফরিদ আহমেদ বলেন, দেশীয় শিল্প সুরক্ষায় সরকার সব সময় গুরুত্ব দিয়ে আসছে। আমরা বাজেটেও সেটা দেখতে পাচ্ছি। কয়েক বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশে প্রযুক্তিনির্ভর একটি শিল্প শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে কার্ড উৎপাদন। কিন্তু একটি মহলের প্ররোচনায় কার্ড আমদানিতে ট্যারিফ প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর। আমাদের অনুরোধ দেশীয় এই শিল্পকে সুরক্ষা দিতে এমন সিদ্ধান্ত যেন কার্যকর করা না হয়। এনবিআর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না এনবিআর।