নীতিমালার গঁ্যাড়াকলে ডিএমডি পদোন্নতি

প্রকাশ | ২১ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

হাসান আরিফ
সরকারি বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) পদে পদোন্নতি নিয়ে নতুন জটিলতা তৈরি হয়েছে। প্রথমবারের মতো নিয়োগের জন্য সাক্ষাৎকার নেয়ায় এই জটিলতা তৈরি হয়। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকে জিএমদের ডিএমডি পদে পদোন্নতির সাক্ষাৎকার নেয়া হলেও এখনো তার ফলাফল অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠানো হয়নি। তাই এই নিয়োগ নিয়ে কিছুটা ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে এ তথ্য জানা গেছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, চলতি মাসে দুই দফায় সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পদোন্নতির জন্য তালিকাভুক্ত মহা-ব্যবস্থাপকদের (জিএম) মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হয়। বর্তমান নীতিমালা অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কর্মকর্তাদের জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে এই পদে পদোন্নতি দেয়ার কথা। আর নতুন নীতিমালায় সাক্ষাৎকার নেয়ায় বিধান থাকলেও তা এখনো খসড়া পর্যায়ে রয়েছে। ফলে তা বাস্তবায়নযোগ্য না। তাই পদোন্নতি দিতে হলে পুরনো নীতিমালায় দিতে হবে, নয়ত নতুন নীতিমালা অনুমোদন না পাওয়া পর্যন্ত পদোন্নতির জন্য অপেক্ষা করতে হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমদ বলেন, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার দাম আছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগে কোনো কোনো ক্ষেত্রে অযোগ্যতারও সুযোগ পেয়েছে। এটা প্রতিষ্ঠানের জন্য ভালো নয়। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে নতুন করে পরীক্ষার মাধ্যমে ডিএমডি নিয়োগ কেমন হবে তা, তিনি জানেন না। তবে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতেই নিয়োগ দেয়া উচিত। সিনিয়ররা অনেক কিছু জানেন ও বোঝেন বলেও তিনি মনে করেন। এবার শুধু সাক্ষাৎকারই নেয়া হয়নি। প্রার্থীদের মোবাইল ফাইন্যান্সিং সার্ভিসেস, ডিজিটাল ব্যাংকিং, প্রকল্প ঋণ ব্যবস্থাপনা, খেলাপি ঋণ ব্যবস্থাপনা ও করপোরেট গভর্ন্যান্স- এই পাঁচটি বিষয়ের যেকোনো একটির ওপর উপস্থাপনাও দিতে হয়েছে। তখন প্রত্যেক প্রার্থীই ১০ নম্বরের জন্য এ বিষয়গুলোর মধ্য থেকে একটির ওপর পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনা করেন। এ ছাড়া বাকি ৯০ নম্বর দেয়া হবে প্রার্থীদের বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন, শিক্ষাগত যোগ্যতা, চাকরির অভিজ্ঞতা, ব্যাংকিং ডিপেস্নামা, নেতৃত্বের গুণাবলী, পেশাগত ডিগ্রি, চাকরিজীবনে বহুমুখী অভিজ্ঞতা, পেশাগত দক্ষতা, দেশি-বিদেশি প্রশিক্ষণ, পেশাগত প্রকাশনা, অর্জিত প্রণোদনা এবং পুরস্কার, ইনোভেশন ও কমিউনিকেশন দক্ষতায়। জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে না হয়ে পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতি দেয়ায় যোগ্য মহাব্যবস্থাপকদের বাদ পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ সাক্ষাৎকার নিয়ে পদোন্নতি দেয়ার সিদ্ধান্তের পর অনেকেই লবিং শুরু করে দিয়েছেন। এতে জ্যেষ্ঠদের মধ্যে কিছুটা হতাশা তৈরি হয়েছে, যেকোনো সাধারণ কারণ দেখিয়ে তাদের বাদ দেয়া হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন তারা। সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট ৯টি শূন্যপদের বিপরীতে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ২৭ জন মহাব্যবস্থাপক (জিএম)। তাদের মধ্যে অনেকেই জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্য বলে মনে করেন খাত-সংশ্লিষ্টরা। ৯টি উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালকের শূন্যপদের মধ্যে অগ্রণী ব্যাংকে দুটি, সোনালী ব্যাংকে একটি, জনতা ব্যাংকে একটি, বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে একটি, পলস্নী সঞ্চয় ব্যাংকে একটি, কর্মসংস্থান ব্যাংকে একটি ও বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিতে একটি (ডিএমডি) পদ শূন্য রয়েছে। এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ফজলুল হক বলেন, যোগ্যরাই পদোন্নতি পাবেন। অযোগ্যদের কোনো সুযোগ নেই।