খেলাপি পুনরুদ্ধারে মরিয়া ব্যাংক

প্রকাশ | ০৪ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ইমদাদ হোসাইন ব্যাংক খাতের অস্থিরতার ধকল কাটাতে খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধারে মরিয়া দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি খ্যাত ব্যাংক খাত। চলতি বছরের শুরু থেকেই ঋণ পুনরুদ্ধারে মাঠে নেমেছে ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯ সালের প্রথম প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধার হয়েছে ২ হাজার ৪৪৮ কোটি টাকা। যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ বেশি। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঋণের সুদের হার বেশি হওয়ায় ঋণ খেলাপিদের কাছ থেকে এ অর্থ ফেরত পাওয়ার পরিমাণ প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম। সাধারণত ব্যাংকগুলো বছরের শেষ দিকে এসে ঋণ পুনরুদ্ধারে বেশি মনোযোগী হয়। বছর শেষে ব্যালেন্স শিট মিলিয়ে পুরো বছরের আর্থিক চিত্র যাতে পরিষ্কার থাকে সেদিকেই নজর দেয় তারা। খেলাপি ঋণের লাগাম টানতে মরিয়া ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকও। গত জুনে অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকা খেলাপি ঋণ কমাতে বিশেষ কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। খেলাপি ঋণ কেন বাড়ছে এবং কমানোর উপায় নিয়ে সুপারিশসহ দ্রম্নততম সময়ে এ কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আটটি বিভাগ প্রতিবেদন তৈরিতে কাজ করবে। যেসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দুই অঙ্কের ওপরে রয়েছে, তাদের এক অঙ্কে নামাতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর আগে চলতি বছরের শুরুর দিকে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ কম দেখানোর জন্য ঋণ অবলোপন নীতিমালায় শিথিলতা এনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই নীতিমালা অনুযায়ী ব্যাংকগুলো মাত্র তিন বছর পর মন্দ মানের খেলাপি ঋণ অবলোপন করে ব্যালান্স শিট বা স্থিতিপত্র থেকে বাদ দিতে পারবে। এতে করে ঋণ আদায় না হলেও কাগজ-কলমে খেলাপি ঋণ কমবে। আবার অবলোপন করার জন্য আগের মতো শতভাগ প্রভিশন লাগবে না। দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ অবলোপনে মামলা করতে হবে না। এর আগ পর্যন্ত কোনো ঋণ মন্দমানে শ্রেণিকৃত হওয়ার পাঁচ বছর পূর্ণ না হলে তা অবলোপন করা যেত না। মামলা না করে অবলোপন করা যেত ৫০ হাজার টাকা। আর শতভাগ প্রভিশন বা ওই ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখা লাগত। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য হালনাগাদে দেখা যায়, ঋণ পুনরুদ্ধারের এ চিত্র খেলাপি হয়ে যাওয়া ঋণের তুলনায় খুবই নগণ্য। গত মার্চ পর্যন্ত ব্যাংক খাতের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা। যা আগের প্রান্তিকের চেয়ে ১৮ শতাংশ বেশি এবং আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৫ দশমিক ১৫ শতাংশ বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য হালনাগাদে দেখা যায়, গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) ঋণ পুনরুদ্ধার হয়েছিল ২ হাজার ২৩৩ কোটি টাকা, দ্বিতীয় প্রান্তিকে উদ্ধার হয় ৫ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা, তৃতীয় প্রান্তিকে এসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) উদ্ধার হয় ২ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা, বছরের শেষ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) উদ্ধার হয় ৫ হাজার ১৬০ কোটি টাকা। ব্যাংকাররা বলছেন, ব্যাংক খাতের অস্থিরতার এই সময়ে ধারাবাহিকতায় না থাকতে পারলে আবার পিছিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। অন্যদিকে ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়ে সম্প্রতি বেসিক ব্যাংকের এক আলোচনা সভায় গিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, যারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ফেরত না দিয়ে খেলাপি হয়েছেন তাদের খুঁজে বের করা হবে। তাদের বিরুদ্ধে এজেন্সির লোক লাগানো হবে। তাদের ঠিকানা চিহ্নিত করা হবে। তাদের দেশের বাইরেও যেতে দেয়া হবে না। এখনো সময় আছে ব্যাংকের টাকা ফেরত দিন। ব্যাংক ব্যবস্থায় মন্দ মানে শ্রেণিকৃত খেলাপি ঋণ স্থিতিপত্র (ব্যালান্স শিট) থেকে বাদ দেয়াকে ঋণ অবলোপন বলে। যদিও এ ধরনের ঋণ গ্রহীতা পুরো টাকা পরিশোধ না করা পর্যন্ত তা প্রকৃত অর্থে খেলাপি ঋণ। ২০০৩ সাল থেকে ব্যাংকগুলো ঋণ অবলোপন করে আসছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা শিথিলের ওই সিদ্ধান্তের ফলে এক ধাক্কায় খেলাপি ঋণ অনেক কমে আসবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।