নিরাপদ বিনিয়োগে বন্ড মার্কেটের বিকল্প নেই

ম বন্ডের আয়ের ওপর ৩০ শতাংশ কর দিতে হয়, এটি কমাতে হবে ম ব্রোকারেজ হাউসগুলোকে নতুন পণ্য আনার চিন্তা করতে হবে ম কেবল প্রণোদনা বা আশ্বাস দিয়ে বাজারের সমাধান হবে না ম এনবিআর, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বিএসইসি, ডিএসই, সিএসই'র মধ্যে সমন্বয়ের চরম অভাব

প্রকাশ | ১১ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
আহমেদ তোফায়েল শেয়ার বাজারের উন্নয়ন করতে হলে বাজারের পাশাপাশি বন্ড মার্কেট গতিশীল করতে হবে। নিরাপদ বিনিয়োগ করার জন্য বন্ড মার্কেটকে সক্রিয় করার কোনো বিকল্প নেই। শুধু প্রণোদনা বা আশ্বাস দিলে বাজারের কোনো সমাধান হবে না। মোদ্দা কথা, রাজস্ব বোর্ড, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বিএসইসি, ডিএসই, সিএসইসহ যারা বাজার-সংশ্লিষ্ট রয়েছেন, তাদের সমন্বয়ের মাধ্যমে বাজার ভালো করা সম্ভব। যদি তাদের মধ্যে সমন্বয়ের সমস্যা থেকে যায়, তাহলে বাজার ভালো করা সম্ভব নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক বাকী খলিলী বলেন, বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ও অর্থমন্ত্রী বেশকিছু আশ্বাস দিয়েছেন। আসলে বাজার এই আশ্বাসের ওপর নির্ভর করে না। বাজার ভালো করার ক্ষেত্রে কিছু মৌলিক বিষয় বিবেচনা করা দরকার। প্রথম বিষয় হচ্ছে, বিনিয়োগকারীরা যখন দেখবে, একটি কোম্পানি ভালো পারফরম্যান্স করছে এবং সূচক বাড়ছে। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, দীর্ঘমেয়াদির বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলো ভালো লভ্যাংশ দিচ্ছে। তৃতীয়টি হচ্ছে, ম্যাক্রো অর্থনীতি ভালো আছে। চতুর্থটি হচ্ছে, মানি মার্কেট ও ক্যাপিটাল মার্কেটের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। শেয়ার কেনার আগে একজন বিনিয়োগকারীর মধ্যে এ বিষয়গুলো কাজ করে। অনেকদিন ধরে মানি মার্কেটে অস্থিরতা বিরাজ করছে। বিভিন্নভাবে ব্যাংক থেকে অর্থ সরিয়ে ফেলে এখন ব্যাংকে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসায়ন করা হয়েছে। এর ফলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগে অনাস্থা সৃষ্টি হয়েছে এবং বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। আরেকটি বড় বিষয় হচ্ছে, বাজারের এ রকম অবস্থার মূল কারণ হচ্ছে বিএসইসির সক্রিয়তার অভাব। যদি নিয়ন্ত্রক সংস্থা তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে এবং চাহিদা সরবরাহের ভিত্তিকে সঠিক নিয়মে বাজার উঠানামা করে। সে ক্ষেত্রে বাজার স্থিতিশীলতা ফিরে পাবে। তিনি আরও বলেন, সত্যিকার অর্থে পুঁজিবাজারের উন্নয়ন করতে চাইলে বাজারের পাশাপাশি বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন করতে হবে। ঝুঁকিহীন বিনিয়োগ করার জন্য বন্ড মার্কেটকে সক্রিয় করতে হবে। এটি খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। শুধু প্রণোদনা বা আশ্বাস দিলে বাজারের কোনো সমাধান হবে না। গত আট বছর ধরে শুনে আসছি, বন্ড মার্কেট উন্নয়ন করা হবে, কিন্তু এখন পর্যন্ত সেটি দেখা যাচ্ছে না। বাজার দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন করতে হলে সরকারকে বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন করতে হবে। যদি এখন বন্ড মার্কেটটি ভালো থাকত তাহলে একদিকে ঝুঁকিবিহীন বিনিয়োগ বাড়ত। অন্যদিকে বিনিয়োগকারীর পোর্টফোলিওতে ইকুইটি ও বন্ড থাকত। সে ক্ষেত্রে দুটি বিষয় সমন্বয় করে লোকসান কমাতে পারত। সংশিষ্টরা বলছেন, বন্ড মার্কেট গতিশীল করা প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। তবে এখানে কিছু বাধা আছে। বিশেষ করে বন্ডের আয়ের ওপর এখন ৩০ শতাংশ কর দিতে হয়, এটি কমাতে হবে। ব্রোকারেজ হাউসগুলোর ইকুইটি কেনাবেচা ছাড়া আর কোনো পণ্য নেই। তাদের নতুন নতুন পণ্য আনার চিন্তা করতে হবে। যদি বাজারে নতুন নতুন পণ্যের বৈচিত্র্য আনা না যায়, তাহলে বাজার সম্প্রসারিত হবে না। পুঁজিবাজারের টেকনিক্যাল এনালিস্ট মো. রহমত উলস্নাহ বলেন, বাজারে টার্নওভার অনেক কম এবং এই টার্নওভার দিয়ে মৌলভিত্তির কোম্পানিগুলো গতিশীল রাখা বেশ কঠিন। তবে স্বল্প মূলধনি কোম্পানিগুলোকে কিছুটা গতিশীল দেখা যাচ্ছে। আবার মৌলভিত্তির চেয়ে স্বল্প মূলধনি কোম্পানির সংখ্যা তুলনামূলক অনেক বেশি। যেহেতু বাজারের টার্নওভার কম এবং মৌলভিত্তির কোম্পানির শেয়ারের দর নিম্নগতিতে রয়েছে, তাই স্বল্প মূলধনি কোম্পানির শেয়ারদর কিছুটা গতিশীল অবস্থানে রয়েছে। এটি আসলে পর্যায়ক্রমে চলমান থাকবে। লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ লিমিটেডের হেড অব ব্রাঞ্চ এসএম নাসির উদ্দিন বলেন, স্বল্প মূলধনি ও জেড ক্যাটাগরির কোম্পানি দিয়ে বাজার সবসময় স্থিতিশীল বা গতিশীল অবস্থানে নেয়া সম্ভব নয়। বাজারকে গতিশীল অবস্থানে নিতে হলে ভালো মানের কোম্পানি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কারণ, এখানে বিদেশি, সাধারণ ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রভৃতি বিনিয়োগকারী রয়েছে। তাদের বিনিয়োগে উৎসাহী করতে ভালো কোম্পানি আনা ছাড়া বিকল্প পথ নেই। বাজারে বিনিয়োগ করার মতো পর্যাপ্ত অর্থ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে। কিন্তু পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে আস্থা পাচ্ছে না। কারণ, বিভিন্ন সময় তাদের সঞ্চিত অর্থ বিনিয়োগ করে লোকসান হয়েছে। যখন বাজার স্থিতিশীল অবস্থানে আসবে এবং বিনিয়োগকারীরা আস্থা ফিরে পাবে তখনই ওই অর্থ আবার বিনিয়োগ করা হবে। যখন বাজার খারাপ অবস্থানে যেতে থাকে তখন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা কাজ করে এবং আতঙ্কিত হয়ে বা অন্যের কথা শুনে শেয়ার বিক্রি করে দেয়। ফলে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। তবে আগের চেয়ে বিনিয়োগকারীরা এখন অনেক সতর্ক। তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাজারের উন্নয়নে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বেশ ভূমিকা রয়েছে। রাজস্ব বোর্ড, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বিএসইসি, ডিএসই, সিএসইসহ যারা বাজার-সংশ্লিষ্ট রয়েছেন, তাদের সমন্বয়ের মাধ্যমে বাজার ভালো করা সম্ভব। যদি তাদের মধ্যে সমন্বয়ের সমস্যা থেকে যায়, তাহলে বাজার ভালো করা সম্ভব নয়। সব ব্যাংকে ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার জন্য আমানতের সুদহার ছয় শতাংশ ও ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ করার ঘোষণা দিয়েছে। কথা হচ্ছে, এখন সরকারি বন্ড ও সঞ্চয়পত্রে সুদের হার সমন্বয় করতে হবে, কারণ ব্যাংকের চেয়ে সুদহার অনেক বেশি রয়েছে। এখানে আগে সমন্বয় করতে হবে। বন্ড মার্কেট গতিশীল করা প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। তবে এখানে কিছু বাধা রয়েছে। বিশেষ করে বন্ডের আয়ের ওপর এখন ৩০ শতাংশ কর দিতে হয়, এটি কমাতে হবে। ব্রোকারেজ হাউসগুলোর ইকুইটি কেনাবেচা ছাড়া আরও কোনো পণ্য নেই। তাদের নতুন নতুন পণ্য আনার চিন্তা করতে হবে। যদি বাজারে নতুন নতুন পণ্যের বৈচিত্র্য আনা না যায়, তাহলে বাজার সম্প্রসারিত হবে না।