সঞ্চয়পত্রে সরকারের ঋণ বেড়েছে ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা

প্রকাশ | ১১ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ইমদাদ হোসাইন উচ্চ সুদে নিরাপদ আমানত রাখার একমাত্র মাধ্যম জাতীয় সঞ্চয়পত্র। গত অর্থবছরে নানা পদক্ষেপ নিলেও সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমানো সম্ভব হয়নি। বরং তা বেড়েছে গুণিতক হারে। সদ্য শেষ হওয়া অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে সরকারের ঋণ বেড়েছে আগের অর্থবছরের চেয়ে ৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেশি। অর্থাৎ ৩ হাজার ৪০৯ দশমিক ১৮ কোটি টাকা বেশি। সদ্য শেষ হওয়া (২০১৮-১৯) অর্থবছরে সরকারের সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯ হাজার ৯৩৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। যা আগের অর্থবছরে ছিল ৪৬ হাজার ৫৩০ কোটি ৩০ লাখ টাকা। গত জুনেই সঞ্চপত্র বিক্রি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২০৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা। আগের অর্থবছরের একই মাসে বিক্রি ছিল ১ হাজার ১৬৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এদিকে,উচ্চ সুদহার ছাড়াও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে করছাড়ের সুবিধা দিয়েছে সরকার। আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ অনুযায়ী একজন ব্যক্তি করদাতা পুঁজিবাজার, পেনশন স্কিম, সঞ্চয়পত্রসহ ২৩টি খাতে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ করছাড়ের সুবিধা পেয়ে থাকেন। একজন করদাতা কর অব্যাহতির মোট আয় এবং আয় হ্রাস হার উপার্জন অথবা দেড় কোটি টাকা অথবা প্রকৃত বিনিয়োগ, যেটা সর্বনিম্ন হয় তার সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ করছাড়ের দাবি জানাতে পারেন। ১০ লাখ টাকার নিচে এমন ধরনের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ করছাড় দিয়ে থাকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। আর নির্ধারিত বিনিয়োগ যদি ১০ লাখ টাকার বেশি হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে করছাড়ের পরিমাণ হবে ১০ থেকে ১২ শতাংশ। এমন পরিস্থিতিতে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে আয়কর রেয়াতের বিষয়টি যৌক্তিক করতে পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। চলতি বছরই এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে ও তা বাস্তবায়নে এনবিআরকে নির্দেশ দেয়া হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। গেল অর্থবছরে রাজস্ব আহরণে লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে পারেনি সরকার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মূল বাজেটে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা। এরপর সংশোধিত বাজেটে তা ২ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকায় নামানো হয়। তারপরও শেষ পর্যন্ত আদায় হয়েছে মাত্র ২ লাখ ২৪ হাজার কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব ঘাটতি থাকলেও পদ্মা সেতু, বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন, মেট্রোরেলসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এসব প্রকল্পের কাজ চালাতে গিয়ে সরকারের অর্থায়নের জন্য ঋণনির্ভরতা বেড়েছে। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে দেশে বিদ্যমান বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে সুদহার কমানোর নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। অথচ সঞ্চয়পত্রে সুদহার অপরির্তনীয়ই রেখেছে সরকার। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, নিজেরা সুদহার না কমিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ঋণ-আমানতের সুদহার নয়-ছয়ে আনার নির্দেশনাটা সাংঘর্ষিক। গত অর্থবছরের মূল বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৪৫ হাজার কোটি টাকা করা হয়। তবে অর্থবছর শেষে বিক্রি দাঁড়িয়েছে ৪৯ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছর ৪৪ হাজার কোটি টাকা সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বিক্রি হয় ৪৬ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছর সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার পেয়েছিল ৫২ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা। এরকম পরিস্থিতির মধ্যে ২০১৯-২০ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ২৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার। ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। সরকার সঞ্চয়পত্রে ১১ দশমিক শূন্য ৪ ও ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ সুদ দিয়ে থাকে। অপরদিকে কিছু ব্যাংক আমানতের বিপরীতে মাত্র ৩ দশমিক ৪ শতাংশ সুদহারের প্রস্তাব দিচ্ছে। যদিও বেশিরভাগ বাণিজ্যিক ব্যাংক বিভিন্ন মেয়াদের স্থায়ী আমানতের বিপরীতে ৬ থেকে ৮ শতাংশ সুদ দিচ্ছে। ফলে সঞ্চয়পত্রের সুদহার তুলনামূলক বেশি থাকায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো আমানত সংকটে ভুগছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। যদিও ২০১৯-২০ অর্থবছরের মুদ্রানীতি ঘোষণায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির ব্যাংক খাতে তারল্য সংকটের বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি জানান, ব্যাংক খাতে ৮৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত তারল্য রয়েছে। তবে খাতটিতে লিকুইডিটি মিসম্যাচ রয়েছে বলে জানান তিনি।