প্রণোদনা চাইলেন ভারতের গাড়ি শিল্পের উদ্যোক্তারা

প্রকাশ | ১১ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
যাযাদি ডেস্ক অপ্রত্যাশিত বিক্রয় মন্দার কারণে বিপাকে থাকা গাড়ি খাতকে বাঁচাতে সরকারের কাছে গাড়ির ওপর জিএসটি কমানোসহ প্রণোদনা প্যাকেজ দাবি করেছেন ভারতের খাতসংশ্লিষ্টরা। খবর: লাইভমিন্ট, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড গত বুধবার ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের সঙ্গে বৈঠক করেন দেশটির গাড়ি সংস্থাগুলোর শীর্ষ কর্তারা, যার মধ্যে ছিলেন মারুতি সুজুকির চেয়ারম্যান আর সি ভার্গব, মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রার অটোমোটিভ সেক্টরের প্রেসিডেন্ট রাজন ওয়াধেরা (যিনি গাড়ি সংস্থাগুলোর সংগঠন সিয়ামেরও প্রেসিডেন্ট)। এ ছাড়া যন্ত্রাংশ নির্মাণ সংস্থার সংগঠন এসিএমএ ও ডিলারদের সংগঠন ফেডারেশন অব অটো ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (এফএডিএ) শীর্ষ কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। এফএডিএ জানিয়েছে, গাড়ি খাতে চলমান অপ্রত্যাশিত মন্দার ফলে এর সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত প্রায় ১০ লাখ কর্মীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে বিক্রির অপ্রত্যাশিত পতনে ডিলারদের শোরুম বন্ধ করে দেয়ায় বিপণন থেকে শুরু করে ইঞ্জিনিয়ারিং পর্যন্ত বিভাগগুলো থেকে দুই লাখ কর্মী কাজ হারিয়েছে। পরিস্থিতি ক্রমেই নাজুক হয়ে ওঠায় এ থেকে বের হওয়ার উপায় খুঁজতে ভারতের অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন গাড়ি শিল্পের উদ্যোক্তারা। বৈঠকে অর্থমন্ত্রীর কাছে গাড়ি খাতকে উজ্জীবিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য আর্জি জানানো হয়। গাড়ি খাতের নেতারা গাড়ির ওপর জিএসটি কমানোসহ একাধিক দাবি উপস্থাপন করেছেন। দাবি জানানোর আগে গাড়ি খাত কর্মী ছাঁটাই থেকে শুরু করে আর যেসব চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তা বিস্তারিত জানানো হয় অর্থমন্ত্রীকে। সিয়ামের প্রেসিডেন্ট রাজন ওয়াধেরা বলেন, হঁ্যা, আমরা সরকারের কাছে গাড়ি খাতের জন্য বেশকিছু সুবিধা চেয়েছি এবং তারা বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন। আমরা আশা করছি, দ্রম্নতই গাড়ি খাতের স্বার্থ রক্ষায় একগুচ্ছ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হবে। তিনি জানান, চাহিদা কমে যাওয়ার কারণ এবং এ পরিস্থিতির হাত থেকে বাঁচার সম্ভাব্য উপায় জানতে চায় কেন্দ্রীয় সরকার। এক্ষেত্রে ভারী শিল্প মন্ত্রণালয় বেশ সহায়তা করেছে। রাজন ওয়াধেরা জানান, বৈঠকে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে আর্থিক সহায়তা পাওয়া, গাড়ির দাম ক্রমাগত বাড়া এবং বাণিজ্যিক গাড়ির ক্ষেত্রে অ্যাক্সল লোড ক্যাপাসিটি বদলের মতো একাধিক বিষয় তুলে ধরা হয়। তিনি বলেন, আমরা এও জানিয়েছি গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ফি বাড়ানোর যে তোড়জোড় চলছে, তা বন্ধ করা হবে। না হলে চাহিদা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এ মুহূর্তে ব্যয় কমানো জরুরি হয়ে উঠেছে। এজন্য দ্রম্নতই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা সরকারকে বলেছি, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যেন রেপো রেট কমানোর সুবিধা বাজারে পৌঁছে দেয়, তাদের সেটি নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া বৈঠকে পুরানো ও বায়ুদূষণকারী গাড়ি বদলের প্রণোদনাভিত্তিক নীতি দ্রম্নত বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়েছে। এটি করা হলে নতুন গাড়ির চাহিদা বাড়বে বলে তারা মনে করে। ওয়াধেরা বলেন, আমরা যেটা চাচ্ছি, তা হলো জিএসটি রেট ২৮ থেকে কমিয়ে ১৮ শতাংশ করা। এতে চাহিদা ঘুরে দাঁড়াতে পারে। এ বৈঠককে 'আলোচনামূলক প্রক্রিয়া' হিসেবে উলেস্নখ করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থ সচিব রাজীব কুমার। তিনি বলেন, আমরা পুরো বিষয়টি শুনেছি। দাবিগুলো বিবেচনা করা হবে। ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদহার কমানোর সিদ্ধান্ত ইতিবাচক। তবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে এ সুবিধা গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। কেন্দ্রীয় ভারী শিল্পমন্ত্রী অরবিন্দ সাওয়ান্ত বলেন, সরকার গাড়ি খাতে নেতাদের শঙ্কার বিষয়টি মনোযোগ দিয়ে শুনেছে এবং তা দূর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছে। জুলাই নিয়ে টানা নয় মাস বিক্রি কমেছে গাড়ি খাতে। ভারতের জিডিপিতে এ খাতের অবদান ৭ শতাংশ। এ খাতে কাজ করে প্রায় সাড়ে তিন কোটি মানুষ। গত তিন মাসে এ খাত থেকে কাজ হারিয়েছে প্রায় দুই লাখ কর্মী। বহুদিন এমন বিপর্যয় দেখেনি ভারতের গাড়ি খাত। গাড়ি খাতের নেতারা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে সামনের দিনগুলোয় গাড়ি খাতে বিপদ আরও বাড়তে পারে, এতে বিপুল কর্মী ছাঁটাইয়ের সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।