ঈদের আগে ৯ দিনেই ৭২ কোটি ডলার প্রবাসী আয়

প্রকাশ | ১৭ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে বিপুল পরিমাণ রেমিটেন্স বা প্রবাসী আয় পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। আর এ কারণে চলতি আগস্ট মাসের ৯ দিনেই ৭২ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় দেশে এসেছে। এর আগে এত কম সময়ে এ পরিমাণ প্রবাসী আয় কখনো আসেনি। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে বেশি অর্থ দেশে পাঠানোয় অর্থনীতির অন্যতম প্রধান এই সূচক বেড়েছে বলে মনে করছেন ব্যাংকাররা। তারা বলছেন, এছাড়া বাজেটে প্রবাসীদের পাঠানো প্রবাসী আয় ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেয়ায় প্রবাসী আয় ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। প্রবাসী আয় প্রবাহে সুখবর নিয়ে শুরু হয়েছিল নতুন অর্থবছর। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৬০ কোটি ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। রেমিটেন্সের ওই অংক ছিল মাসের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। আর গত বছরের জুলাই মাসের চেয়ে ২১ দশমিক ২০ শতাংশ বেশি। জুলাই মাসের ধারাবাহিকতায় আগস্ট মাসের শুরুতেও বেশি প্রবাসী আয় পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। ১২ আগস্ট কোরবানির ঈদ উদযাপিত হয়। তার আগে ৯ আগস্ট পর্যন্ত রেমিটেন্সের তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে দেখা যায়, ১ আগস্ট থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত ৭১ কোটি ৬২ লাখ ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে বাংলাদেশে। রোজার ঈদকে সামনে রেখে প্রবাসীরা দেশে বেশি অর্থ পাঠানোয় মে মাসে ১৭৫ কোটি ৫৮ লাখ ডলার প্রবাসী আয় আসে; যা ছিল মাসের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। তার আগে এক মাসে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় এসেছিল চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে, ১৫৯ কোটি ৭২ লাখ ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আগের বছরের চেয়ে ৯ দশমিক ৬০ শতাংশ প্রবাসী আয় বেশি পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৭ দশমিক ৩২ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় চলতি অর্থবছরেও ভালো প্রবৃদ্ধি নিয়ে শুরু হয়েছে। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে পরিবার-পরিজানের কাছে বেশি টাকা পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এছাড়া প্রণোদনা দেয়ার কারণেও প্রবাসী আয় বাড়ছে বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম। তবে ঈদের পর প্রবাসী আয় প্রবাহে কিছুটা ধীরগতি থাকবে বলে মনে করছেন ব্যাংকাররা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, রেমিটেন্সে প্রণোদনা দিয়ে একটি ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ফলে প্রবাসীরা দেশে বেশি অর্থ পাঠাবেন। অর্থনীতিতে আরও বেশি অবদান রাখবেন। বাংলাদেশ ব্যাংক বুধবার প্রবাসী আয়ের যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, আগস্ট মাসের প্রথম ৯ দিনে ৭২ কোটি ডলারের যে প্রবাসী আয় এসেছে তার মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১৭ কোটি ৩২ লাখ ডলার। কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১ কোটি ২২ লাখ ডলার। ৪০ বেসরকারি ব্যাংক এনেছে ৫২ কোটি ৮৪ লাখ ডলার। আর নয়টি বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ২৩ লাখ ৫০ হাজার ডলার। নতুন বাজেটে প্রবাসীদের পাঠানো প্রবাসী আয়ে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ঘোষণা অনুযায়ী, ১ জুলাই থেকে প্রবাসীরা ১০০ টাকা দেশে পাঠালে ২ টাকা প্রণোদনা পাবেন। বাজেটে এ জন্য ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রবাসী আয়ে এ ধরনের প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা ঘোষণা করেছে। ৬ আগস্ট তা প্রকাশ করা হয়েছে তাতে বলা হয়েছে, প্রবাসীদের পাঠানো প্রবাসী আয়ে প্রণোদনা পেতে ১ হাজার ৫০০ ডলার পর্যন্ত কোনো ধরনের কাগজপত্র লাগবে না। তবে রেমিটেন্সের পরিমাণ এই অংকের বেশি হলে প্রাপককে প্রেরকের পাসপোর্টের কপি এবং বিদেশি নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানের নিয়োগপত্র অবশ্যই জমা দিতে হবে। আর ব্যবসায়ী ব্যক্তির ক্ষেত্রে ব্যবসার লাইসেন্সের কপি দাখিল করতে হবে। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এক হাজার ৬৪১ কোটি ৯৬ লাখ (১৬.৪২ বিলিয়ন) ডলারের প্রবাসী আয় পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই অংক আগের বছরের (২০১৭-১৮) চেয়ে ৯ দশমিক ৬ শতাংশ এবং অতীতের যে কোনো বছরের চেয়ে বেশি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এক বছরে এ পরিমাণ প্রবাসী আয় আসেনি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এক হাজার ৪৯৮ কোটি ১৭ লাখ (১৪.৯৮ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা। ওই অঙ্ক ২০১৬-১৭ অর্থবছরের চেয়ে ১৭ দশমিক ৩২ শতাংশ বেশি ছিল। বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হলো বিদেশে থাকা বাংলাদেশিদের পাঠানো অর্থ বা প্রবাসী আয়।