চীনের ঋণ সহায়তায় সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদু্যৎকেন্দ্র

প্রকাশ | ১৭ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
সৈয়দপুরে ডিজেলচালিত ১৫০ মেগাওয়াট বিদু্যৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে যাচ্ছে বিদু্যৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। বিদু্যৎকেন্দ্রটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার এক কোটি টাকা। এর মধ্যে চীন ঋণ সহায়তা হিসেবে দিবে ৪৮৩ কোটি টাকা। আর সরকারের তহবিল থেকে ৩০২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ও পিডিবি ২১৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা দিবে। এক্সপোর্ট ক্রেডিট এজেন্সি (ইসিএ) ফাইন্যান্সিংয়ের আওতায় এই ঋণ দেবে ব্যাংক অব চায়না। এর ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছে চীনের ডংফ্যাং ইলেকট্রিক ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশন (ডিইসি)। ঋণ প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য সম্প্রতি সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়েছে বিদু্যৎ বিভাগে। সেখান থেকে প্রস্তাবটি যাবে সরকারের অনমনীয় ঋণ-বিষয়ক স্থায়ী কমিটিতে। এই ঋণের জন্য পরিশোধ করতে হবে কমিটমেন্ট ফি, ম্যানেজমেন্ট ফি ও ইন্সু্যরেন্স প্রিমিয়াম। আর তিন বছর গ্রেস পিরিয়ড শেষে ১২ বছরে পরিশোধ করতে হবে এই ঋণ। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ক্রমবর্ধমান বিদু্যৎ চাহিদা মেটানো ও উত্তরাঞ্চলের বিদু্যৎ ব্যবস্থায় উন্নতির লক্ষ্যে সৈয়দপুরে ২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদু্যৎকেন্দ্র সংলগ্ন এলাকায় ১৫০ মেগাওয়াটের বিদু্যৎকেন্দ্র নির্মাণ করবে পিডিবি। ডিজেলচালিত সিম্পল সাইকেল এই বিদু্যৎকেন্দ্র নির্মাণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি এক কোটি ৪৩ লাখ ৫৪ হাজার ৭২২ মার্কিন ডলার এবং চার কোটি দুই লাখ ৫৫ হাজার ২০৭ ইউরো দরপ্রস্তাব করে। দেশীয় মুদ্রার এই প্রস্তাবের মোট পরিমাণ ৫৯৩ কোটি ৩৯ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। সম্প্রতি ঠিকাদারের সঙ্গে ইপিসি চুক্তি সই করে পিডিবি। প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, ইসিএ ফাইন্যান্সিংয়ের আওতায় চুক্তি কার্যকর করতে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান ব্যাংক অব চায়নার সঙ্গে ঋণচুক্তি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে চুক্তিমূল্যের ৮৫ শতাংশ তথা এক কেটি ২২ লাখ এক হাজার ৫০৩ ডলার এবং তিন কোটি ৮৬ লাখ এক হাজার ৯১৬ ইউরো সরবরাহ করবে ব্যাংক অব চায়না। দেশীয় মুদ্রায় এই ঋণের পরিমাণ ৪৮৩ কোটি পাঁচ লাখ টাকা। প্রকল্পটি ইসিএ ফাইন্যান্সিংয়ের আওতায় বাস্তবায়িত হবে বিধায় দরপত্রের শর্তানুযায়ী ব্যাংক অব চায়নার শর্তসহ নিশ্চয়তাপত্র দাখিল করে ঠিকাদার। আর চলতি বছর ১৮ ফেব্রম্নয়ারি বায়ার্স ক্রেডিটের আওতায় ঋণের বিস্তারিত শর্ত তুলে ধরে ব্যাংক অব চায়না। এই প্রস্তাবের ওপর নেগোশিয়েশন (দরকষাকষি) শেষে কিছু শর্তে পরিবর্তন আনে ব্যাংকটি। এর ভিত্তিতে ঋণপ্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিদু্যৎকেন্দ্রটি নির্মাণে গৃহীত ঋণের বিপরীতে সুদের হার হবে দুই ধরনের। এর মধ্যে ডলারে প্রদত্ত ঋণের ক্ষেত্রে ছয় মাস মেয়াদি লাইবর (লন্ডন আন্তঃব্যাংক অফার রেট) হারের সঙ্গে দুই দশমিক ৮০ শতাংশ যোগ করলে যে হার দাঁড়ায়, সেই হারে সুদ প্রদান করতে হবে। আর ইউরোতে প্রদত্ত ঋণের ক্ষেত্রে ছয় মাস মেয়াদি ইউরিবর (ইউরো আন্তঃব্যাংক অফার রেট) হারের সঙ্গে বার্ষিক দুই শতাংশ যোগ করলে যে হার দাঁড়ায়, সেই হারে সুদ প্রদান করতে হবে। প্রসঙ্গত, বর্তমানে ছয় মাস মেয়াদি লাইবর হার দশমিক ৮১১ শতাংশ। এতে ডলারে প্রদত্ত ঋণের ক্ষেত্রে সুদ হার দাঁড়াবে তিন দশমিক ৬১১ শতাংশ। এতে ইউরোতে নেয়া ঋণের ক্ষেত্রে সুদ হার দাঁড়াবে এক দশমিক ৬৩৩ শতাংশ। সুদের বাইরেও এই ঋণের জন্য ১ শতাংশ ম্যানেজমেন্ট ফি ও দশমিক ৮০ শতাংশ কমিটমেন্ট ফি প্রদান করতে হবে। আর ঋণের বিমা প্রিমিয়াম দিতে হবে মূল ঋণ ও সম্ভাব্য সুদের ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ। সব মিলিয়ে এই ঋণ পরিশোধে গড়ে প্রতি ইউনিট (কিলোওয়াট ঘণ্টা) বিদু্যৎ বাবদ গুণতে হবে ৬৪ পয়সা। জানতে চাইলে পিডিবির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংক অব চায়নার ঋণের শর্ত তুলনামূলক সহজ। এর আগে ঘোড়াশালের ৩৬৫ মেগাওয়াট ও খুলনায় ৩৩০ মেগাওয়াটের দুটি কম্বাইন্ড সাইকেল বিদু্যৎকেন্দ্র নির্মাণে বায়ার্স ক্রেডিট (কঠিন শর্তের ঋণ) নেয়া হয়েছে। ওই দুই প্রকল্পে ঋণ দিয়েছে যথাক্রমে ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড কর্মাশিয়াল ব্যাংক অব চায়না ও এক্সিম ব্যাংক অব চায়না। তবে ওই দুই ঋণের শর্ত একটু কঠিন ছিল। যদিও সৈয়দপুরের প্রস্তাবিত বিদু্যৎকেন্দ্রটি পিডিবির জন্য বোঝা হয়ে উঠবে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, সিম্পল সাইকেল বিদু্যৎকেন্দ্রে জ্বালানির অপচয় বেশি হয়। এর ওপর ডিজেলভিত্তিক বিদু্যৎকেন্দ্রের উৎপাদন ব্যয় অনেক বেশি। এগুলোর পস্ন্যান্ট ফ্যাক্টরও কম হয়। এতে পিডিবির এই বিদু্যৎকেন্দ্রে প্রতি ইউনিট বিদু্যৎ উৎপাদনে ব্যয় হবে ২০ টাকার বেশি।