রাম্বুটান ও কাজুবাদাম চাষে পাওয়া যাবে ব্যাংক ঋণ

প্রকাশ | ১৮ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

ইমদাদ হোসাইন
এখনো প্রায় পুরোটাই আমদানিনির্ভর খেতে সুস্বাদু রাম্বুটান ও কাজুবাদাম। দেশে ব্যাপক চাহিদাও আছে। বাজারে কিনতে গেলে দামও আছে বেশ। লাভজনক ফল হওয়ায় কৃষকরা ঝুঁকছেন রাম্বুটান ও কাজুবাদাম চাষে। এ দুই ফলের আমদানিনির্ভরতা কমাতে চাষের ক্ষেত্রে কৃষকদের ঋণ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সদ্য ঘোষিত নতুন কৃষিনীতিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি অর্থবছরে (২০১৯-২০) ২৪ হাজার ১২৪ কোটি টাকা কৃষি ঋণ বিতরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে শস্য খাতে মোট লক্ষ্যমাত্রার ৬০ শতাংশ, মৎস্য খাতে ১০ শতাংশ ও প্রাণিসম্পদ খাতে ১০ শতাংশ বিতরণ করতে হবে। কাজুবাদাম ও রাম্বুটান চাষের ঋণ শস্য খাতের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কাজু বাদামের চাহিদা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে আমাদের দেশে। প্রধানত আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয়ে থাকে কাজুবাদামের চাহিদা। তবে দেশেও এটা চাষ করার সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে। এর মাধ্যমে দেশের চাহিদা পূরণ করা হলে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা সম্ভব। ইনসিটো পদ্ধতিতে কাজুবাদাম চাষ খুবই সময়োপযোগী একটি প্রযুক্তি। এটি পাহাড়ি এলাকায় ঢালু ও টিলাযুক্ত পতিত অনুর্বর জমির বাণিজ্যিক ফসল। পুষ্টি গুণাগুণের বিবেচনায় এ বাদামকে সুপারফুড বলা হয়। ইনসিটো পদ্ধতিতে কাজুবাদামের চাষাবাদ পাহাড়ের মাটি ক্ষয় রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ কারণে পাহাড়ি টিলাযুক্ত অনুর্বর পতিত জমিতে এর চারা রোপণ করা যেতে পারে। এ পদ্ধতিতে কাজুবাদামের চারা অতি দ্রম্নত বর্ধনশীল এবং বীজ বপনের দুই বছর থেকেই কাজুবাদাম পাওয়া সম্ভব। এছাড়া এটা থেকে তেলও উৎপাদন করা যায়। উপযুক্ত অঞ্চলে কাজুবাদাম চাষাবাদের উদ্দেশে ব্যাংকগুলোকে কৃষি ঋণ বিতরণের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। উদ্ভিদবিদেরা জানান, খেতে লিচুর মতো এই ফলটির আদি নিবাস ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। এর বৈজ্ঞানিক নাম্তনিফেলিয়াম লাপ্পাসিয়াম। এটি স্যাপিনডাসি পরিবারের অন্তর্গত একটি মাঝারি বৃক্ষজাতীয় উদ্ভিদ। রাম্বুটান নামটির উৎপত্তি হয়েছে ইন্দোনেশীয় শব্দ রাম্বুটান থেকে, যার অর্থ রোম বা আঁশ। এই ফলটির সঙ্গে লিচু ও আঁশ ফলের উদ্ভিদতাত্ত্বিক ও গঠনগত দিক দিয়ে প্রচুর মিল রয়েছে। রাম্বুটান ফলটির বহিঃত্বক লম্বা চুলের মতো আঁশ দ্বারা আবৃত থাকার কারণেই এমন নামকরণ বলে ধারণা করা হয়। চিরসবুজ রাম্বুটানগাছ ১২ থেকে ২০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। রাম্বুটানগাছ পুরুষ ও স্ত্রী দুই ধরনের হয়ে থাকে। পুরুষ রাম্বুটানগাছে শুধু ফুল হয় না। অন্যদিকে স্ত্রী রাম্বুটানগাছে প্রচুর স্ত্রী ফুলের পাশাপাশি কিছুসংখ্যক পুরুষ ফুল দেখা যায়, যা পরাগায়ণে সহায়তা করে এবং পরবর্তী সময়ে ফল আসে। ফলের আকার গোলাকার থেকে ডিম্বাকৃতি হতে পারে। ফলের খোসার রং লাল। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কমলা বা হলুদও হতে পারে। ফলের খাদ্যোপযোগী অংশের রং সাদা। গড় ওজন ২৭ দশমিক ৫৪ গ্রাম। গাছে ফুল আসে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে এবং সেপ্টেম্বর মাসে ফল পরিপক্ব হয়। পাকা ফল উজ্জ্বল লাল, কমলা ও হলুদ রঙের হয়ে থাকে। বর্ষাকালে জুলাই থেকে আগস্ট মাসে এ ফল পাকে। পরিণত হওয়ার ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে পাকা ফল সংগ্রহ করার উপযোগী হয়। বাংলাদেশের আবহাওয়া রাম্বুটান চাষের জন্য উপযোগী। দক্ষিণ ও পার্বত্য জেলাসহ ঢাকা, খুলনা, যশোর জেলায় এ ফলের চাষাবাদের সম্ভাবনা রয়েছে। প্রায় সব ধরনের মাটিতেই এই ফল চাষ করা যায়। রাম্বুটান চাষেও নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী ঋণ বিতরণ করতে পারবে ব্যাংক। অন্যদিকে কাজুবাদামও দেশি গাছ নয়। গাছটি প্রায় চারশ বছর আগে পর্তুগিজরা এই উপমহাদেশে নিয়ে আসে। বর্তমানে এই বাদামের ব্যবহার অনেক বেড়েছে। জানা গেছে এর গুণাগুণ সম্পর্কেও। বীজের রস মানসিক বৈকল্য, শারীরিক দুর্বলতা ও হৃৎপিন্ডের ধড়ফড়ানিতে ব্যবহৃত হয়। তা ছাড়া এর নির্যাস অ্যান্টি-হাইপারটেনসিভ গুণসম্পন্ন এবং মুখে গ্রহণ করা হলে রক্তে চিনির পরিমাণ কমিয়ে দেয়। বাদামের বাইরের আঁশবহুল আপেলের মতো অংশে স্কার্ভি নিবারক বা আরোগ্যকারক গুণাবলি আছে। এর রস কিডনির গোলযোগ ও কলেরা রোগের মহৌষধ। কাজুবাদামের শক্ত খোসাকে রোস্ট করে তেল নিষ্কাশন করা হয়। তেলের রঙ খয়েরি ও চটচটে ফেনোল-সমৃদ্ধ। তেল রেচক ও হুকওয়ার্মের চিকিৎসায় ব্যবহার্য এবং পায়ের পাতা ফাটা, আঁচিল ও কুষ্ঠজনিত যন্ত্রণা নিবারক। ছালের আঠা পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য বইয়ে লাগানো হয়। কাজুবাদামে ভিটামিন, খনিজ লবণ এবং প্রয়োজনীয় অ্যামিনো এসিড রয়েছে। এ গাছ পার্বত্য চট্টগ্রামে মোটামুটি সহজলভ্য। রাঙামাটির দুর্গম পাবলাখালী অভয়ারণ্যে গাছটির স্বাভাবিক বিস্তার দেখে মনেই হয়নি একদা সুদূর দক্ষিণ আমেরিকা থেকে এই উপমহাদেশে পাড়ি জমিয়েছিল গাছটি। ঢাকার বলধা গার্ডেনের সিবিলি, কুয়াকাটাসহ উপকূলীয় অঞ্চলেও বিক্ষিপ্তভাবে এ গাছ চোখে পড়ে।