তিন সপ্তাহে সরকারের ব্যাংক ঋণ ১৫ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশ | ২০ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
নতুন অর্থবছরের (২০১৯-২০) প্রথম তিন সপ্তাহে ১৪ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নিয়েছে সরকার। বর্তমানে নগদ টাকার সংকটে রয়েছে অধিকাংশ ব্যাংক। এরই মধ্যে ব্যাংক থেকে সরকারি ঋণের এ তেজিভাব বেসরকারি খাতকে সংকুচিত করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সমাপ্ত অর্থবছরের শেষ দিন (৩০ জুন) পর্যন্ত ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারের ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ১৪ হাজার ৭০৪ কোটি টাকা। মাত্র ১৮ দিনের ব্যবধানে এর পরিমাণ গিয়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ২৯ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকায়। তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায় বাংলাদেশ ব্যাংক ছাড়াও তফসিলি ব্যাংক থেকেও বেড়ে চলেছে সরকারি ঋণ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তফসিলি ব্যাংক থেকে ৮০ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা সরকারি ঋণ থাকলেও তিন সপ্তাহে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৩ হাজার ৫৫৯ কোটি টাকায়। সুতরাং তফসিলি ব্যাংকগুলো থেকে সরকারি দেনা বেড়েছে ১২ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকা। নতুন মুদ্রানীতিতে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ ধরা হয়েছে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। এর মধ্যে ডিসেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত লক্ষ্য ঠিক করেছে ১৩ দশমিক ২ শতাংশ। যা গত অর্থবছরের জুন পর্যন্ত লক্ষ্য ছিল ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের (জুলাই-জুন) পর্যন্ত সরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধির প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ। আর অভ্যন্তরীণ ঋণ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ১৫ দশমিক ৯০ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রক্ষেপণ ছিল সাড়ে ১৬ শতাংশ। কিন্তু গত জুন শেষে এ খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ৩০ শতাংশ। এটি চলতি মুদ্রানীতির ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৫ শতাংশ কম। সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে বাড়তি ঋণ নিলে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ চাপের মুখে পড়তে পারে বলে বিবৃতি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই)। সংগঠনটি চলতি অর্থবছরের মুদ্রানীতি নিয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, এবারের মুদ্রানীতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়িয়ে ধরেছে। এতে উৎপাদনশীল খাত, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এছাড়া বিশ্লেষকরা বলছেন, আমাদের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি বেসরকারি খাত। যে কোনোভাবে খাতটিকে ক্রমান্বয়ে বড় করতে হবে। তা না হলে নাজুক হয়ে পড়তে পারে অর্থনীতি। পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদু্যৎকেন্দ্র, মেট্রোরেল ও ফ্লাইওভারসহ বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রচুর টাকার প্রয়োজন হচ্ছে সরকারের। এ কারণেই সরকারি ঋণ বাড়ছে বলে মত দেন তারা। নতুন (২০১৯-২০) অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে এক লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। বিশাল ঘাটতি মেটাতে এবার ব্যাংক থেকে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা ঋণ নিতে চায় সরকার। ১৩ জুন জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট পেশ করার সময় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ তথ্য জানান। প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা এবং ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ১০ হাজার ২৬২ কোটি টাকা। আয়-ব্যয়ের বিশাল পার্থক্যের কারণে এবার বাজেট ঘাটতিও অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে অনুদান ছাড়া বাজেট ঘাটতি দাঁড়াতে পারে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। এই ঘাটতি মেটাতে বিদেশ থেকে ঋণ নেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে ৬৩ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকার। আর ব্যাংক থেকে সরকার ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা ঋণ নিতে চায়। এছাড়া, জাতীয় সঞ্চয়পত্র থেকে নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৭ হাজার কোটি টাকা।