ব্যাংকের তহবিল ব্যয় হিসাবে আসছে নতুন নীতিমালা

প্রকাশ | ২০ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
ঋণের সুদহার কমিয়ে আনার জন্য দেশে কার্যরত ব্যাংকগুলোর তহবিল ব্যয় হিসাব করার অভিন্ন সূত্র তৈরি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ঋণ গ্রহীতা ব্যাংক থেকে যে তহবিল নিয়ে ব্যবসায় ব্যবহার করে ব্যাংককে সুদ দেয়, তহবিল প্রদান ও পরিচালনার জন্য ব্যাংক যে হিসাব করে তাকে তহবিল ব্যয় বলে। বর্তমানে ব্যাংকগুলো তহবিল ব্যয় হিসাব করার জন্য বিভিন্ন ধরনের সূত্র ব্যবহার করছে। এতে তহবিল ব্যয় হিসাব করার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংক একটি অভিন্ন ও সর্বজনীন তহবিল ব্যয় হিসাব করার সূত্র নিয়ে আসছে। যেটি ব্যবহার করে ব্যাংকগুলো তাদের তহবিল ব্যয় হিসাব করবে। ব্যাংকাররা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অভিন্ন তহবিল ব্যয় পদ্ধতি ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনতে সাহায্য করবে। তবে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে ঋণ প্রদানকারী ব্যাংকগুলোর ওপর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বলেন, নতুন এই পদ্ধতিতে তহবিল ব্যয় কমে যাবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক অঙ্কের সুদে ঋণ বিতরণের জন্য তহবিল ব্যয় কমিয়ে আনতে যে অভিন্ন সূত্র ব্যবহার করতে যাচ্ছে, তাতে ঋণ ও আমানতের সুদহার কমে যাবে বলেও মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, মুনাফা অর্জনের জন্য ব্যাংকগুলো ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধান সবসময় ৫ শতাংশ রাখে। ব্যাংকগুলোর মুনাফা করার প্রধান উৎস হচ্ছে ঋণ গ্রহীতাদের কাছ থেকে আদায় করা সুদ ও তহবিল ব্যয়। গ্রহীতাদের যখন স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বিতরণ করার জন্য যে তহবিল ব্যবহার করা হয় তখন কম খরচে ব্যাংকগুলোর ভালো আয় হয়। এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন নীতিমালা বাস্তবায়ন করা হলে ব্যাংকগুলো তখন সুদের হার কমাতে বাধ্য হবে। তহবিল ব্যয় হিসাবের অভিন্ন নীতিমালার খসড়ায় বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলো তাদের ব্যয় হিসাব করার জন্য আমানত, ঋণ সভরেন্ট বন্ড প্রশাসনিক ও অন্যান্য ব্যয় মোট ব্যয়ের মধ্যে হিসাব করতে হবে। তবে খেলাপি ঋণের বিপরীতে রাখা নিরাপত্তা সঞ্চিতি এই হিসাবের মধ্যে পড়বে না। কর্মকর্তাদের বেতন প্রদানের জন্য প্রশাসনিক ব্যয়ের সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ তহবিল ব্যয়ের অন্তর্ভুক্ত করার অনুমতি পাবে ব্যাংকগুলো। অন্যদিকে কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কর্মসূচিতে ব্যয়, কর্মীদের কর্মদক্ষতা ও প্রণোদনা প্রদান মোট ব্যয়ের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। ব্যাংকগুলো বর্তমানে শতভাগ প্রশাসনিক ব্যয়, খেলাপি ঋণের বিপরীতে রাখা নিরাপত্তা সঞ্চিতি, সিএসআর ব্যয়, কর্মদক্ষতা ও প্রণোদনা ভাতা সবগুলোই মোট ব্যয়ের মধ্যে হিসাব করে। এ কারণে নতুন তহবিল ব্যয় হিসাব পদ্ধতি কার্যকর করা হলে ব্যাংকগুলোর মোট ব্যয় কমে যাবে। এতে ঋণ বিতরণে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। বর্তমানে মোট তহবিল নির্ধারণের জন্য ব্যাংকগুলো দৈনিক জমা আমানত, ঋণ বিতরণ, শেয়ার, সাধারণ মূলধন, সাব অর্ডিনেটেড বন্ড ইসু্যর হিসাব করে থাকে। এ বিষয়ে ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও অ্যাসোসিয়েশেন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, দেশের ব্যাংকগুলো বর্তমানে তহবিল ব্যয় হিসাবের জন্য বিশ্বমানের পদ্ধতি ব্যবহার করছে। তবে নীতিমালাটি এখনো জারি না হওয়ায় তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সবসময় ব্যাংকিং খাত ও জনগণের জন্য কাজ করছে। সময়ের প্রয়োজনে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিয়ে তা বাস্তবায়ন করছে।