এসএমই ঋণের প্রকৃত উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে

প্রকাশ | ২১ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
যাযাদি রিপোর্ট প্রতিবছর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কটেজ, মাইক্রো, স্মল ও মিডিয়াম (সিএমএসএমই বা এসএমই) খাতে যে পরিমাণ অর্থায়ন করে, তার বেশির ভাগই যাচ্ছে অনুৎপাদনশীল তথা ব্যবসা খাতে। আর মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) বেশি অবদান রাখা শিল্প ও সেবা খাতে এসএমই ঋণ বিতরণ কমে যাচ্ছে। নারী উদ্যোক্তা খাতেও এই ঋণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে না। তা ছাড়া ২৪টি ব্যাংক এই খাতে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে দিয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানেই দেখা গেছে। ওই পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৮ সালে ব্যবসা খাতে এসএমই ঋণ বিতরণ হয়েছিল প্রায় ৪২ শতাংশ। আর চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত বিতরণ হয়েছে ৪৪ শতাংশেরও বেশি। অথচ ২০১৮ সালে শিল্প খাতে এসএমই ঋণের ৩৫ শতাংশেরও কম বিতরণ হয়। আর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ এই তিন মাসেও এ খাতে এসএমই ঋণ বিতরণের হার সেই ৩৫ শতাংশের ঘরেই রয়েছে। এ ছাড়া ২০১৮ সালে সেবা খাতে ২৩ শতাংশ এসএমই ঋণ বিতরণ হলেও গত জানুয়ারি থেকে মার্চ তিন মাসে হয়েছে ২০ শতাংশের মতো। ফলে এসএমই ঋণের প্রকৃত উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এদিকে খেলাপি ঋণের আধিক্য ও তারল্য সংকটের কারণে চলতি বছর এসএমই খাতে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়েছে ২৪টি ব্যাংক। ফলে গত বছরের চেয়ে এবার প্রায় সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকার এসএমই ঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রা কমেছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, এসএমইর কোন উপখাতে কত ঋণ দিতে হবে সেই লক্ষ্যমাত্রা বছরের শুরুতেই নির্ধারণ করে দেয়া হয় এবং সে অনুযায়ী ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণের কথা। কিন্তু দেখা যায়, নারী উদ্যোক্তা, শিল্প ও সেবা খাতে ঋণের চাহিদা কম। কিন্তু ব্যবসা খাতে এসএমই ঋণের চাহিদা বেশি। সেদিক থেকে ব্যবসা উপখাতে ঋণ বিতরণ বাড়তে পারে। তবে এটা যাতে নির্ধারিত সীমা অতিক্রম না করে সে জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রতিবছর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যে পরিমাণ ঋণ বিতরণ করবে তার ২৩ শতাংশ এসএমই খাতে বিতরণ করতে হবে। পর্যায়ক্রমে ২০২১ সালের মধ্যে এটা ২৫ শতাংশে উন্নীত করার নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু চলতি বছর ২৪টি ব্যাংক এই খাতে ঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রা ২৩ শতাংশ নির্ধারণ করেনি বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এ বিষয়ে সম্প্রতি ওই সব ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা তলব করা হলে তারা পাঁচটি কারণের কথা উলেস্নখ করেছে। এগুলো হলো শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ বেশি থাকা, তারল্য সংকট, ব্যবসায়িক লক্ষ্য ভিন্ন হওয়া, সীমিতসংখ্যক শাখা থাকা এবং এসএমই ঋণ প্রডাক্টস না থাকা। গত মাসে অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায় সিএমএসএমই খাতে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ঋণ বিতরণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। বিশেষ করে যেসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ২০১৯ সালে সার্বিক ঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি করলেও সিএমএসএমই খাতে ঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে নির্ধারণ করেছে, তাদের নূ্যনতম ২৩ শতাংশ সিএমএসএমই খাতে বিতরণের নির্দেশ দিয়েছেন গভর্নর ফজলে কবির। পাশাপাশি খাতভিত্তিক সিএমএসএমই ঋণ বিতরণের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণেরও নির্দেশ দেন তিনি। এ বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, সরকারি, বেসরকারি ও বিদেশি মিলে বেশ কিছু ব্যাংক এসএমই খাতে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ঋণ বিতরণ করছে না। তাই ব্যাংকার্স সভায় গভর্নর এসএমই খাতে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ঋণ বিতরণের নির্দেশ দিয়েছেন। ব্যবসা খাতে ঋণ বেশি দেওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এসএমই খাতে প্রকৃত অর্থে ট্রেড ব্যবসায়ীর (ব্যবসা) সংখ্যাই বেশি। বিশেষ করে এ খাতের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ব্যবসায়ী, যারা মুদি দোকানি বা অন্য ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। কিন্তু সিএমএসএমইতে শিল্প ও সেবা খাতে উদ্যোক্তা সেভাবে পাওয়া যায় না। ফলে ব্যবসায় ঋণ একটু বেশি যাচ্ছে। তবে সীমা নির্ধারণ করে দেয়া এ উপখাতে ঋণ আগের চেয়ে কমে এসেছে। সিএসএমইর কোন উপখাতে কত ঋণ বিতরণ করতে হবে সেই সীমাও বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নির্দেশনা অনুযায়ী, ম্যানুফ্যাকচারিং তথা শিল্প খাতে নূ্যনতম ৪০, সেবায় ২৫ এবং ব্যবসায় সর্বোচ্চ ৩৫ শতাংশ বিতরণ করা যাবে। এ ছাড়া নারী উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ ঋণ বিতরণের জন্য বলা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর ত্রৈমাসিকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সামগ্রিক ঋণ বিতরণের মধ্যে এসএমই খাতে বিতরণের শতকরা হার ছিল ২২.৩২%। এর মধ্যে শিল্প, সেবা ও ব্যবসা উপখাতে বিতরণের হার ছিল যথাক্রমে ৩৪.৯৪, ২৩.০৯ ও ৪১.৯৬ শতাংশ। আর নারী উদ্যোক্তা খাতে বিতরণের হার ছিল ৩.৪৬ শতাংশ। অন্যদিকে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ ত্রৈমাসিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সামগ্রিক ঋণ বিতরণের মধ্যে এসএমই খাতে শতকরা হার ছিল মাত্র ১৯.৬৫%। এর মধ্যে শিল্প, সেবা ও ব্যবসা উপখাতে বিতরণের হার ছিল যথাক্রমে ৩৫.৪০, ২০.৩৩ ও ৪৪.২৬ শতাংশ। আর নারী উদ্যোক্তা খাতে ছিল ৩.৭৪ শতাংশ।