দুই বাজারেই দর সংশোধন

ম বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য পর্যাপ্ত তারল্য দরকার ম পুঁজিবাজার ব্যাংক নির্ভরশীল হওয়া উচিত নয়। ম বিশ্বের কোনো দেশের বাজার ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল নয় ম ব্যাংকের কাজ আমানত সংগ্রহ করা এবং ঋণ দেয়া।

প্রকাশ | ২৪ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
যাযাদি রিপোর্ট সপ্তাহের শেষদিনে ইতিবাচক গতিতে লেনদেন হয়েছে পুঁজিবাজারে। সবগুলো সূচক ইতিবাচক হওয়ার পাশাপাশি বেশিরভাগ শেয়ারের দর বেড়েছে। লেনদেন আগের দিনের তুলনায় কমলেও বৃহস্পতিবার শেয়ার কেনার প্রবণতা ছিল বাজারে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনের শুরুতে সূচকের উত্থান হয়। শেষ পর্যন্ত প্রধান সূচক ১৩ পয়েন্ট ইতিবাচক থাকে। বাকি দুই সূচকও ইতিবাচক ছিল। ডিএসইতে ৪৫ শতাংশ কোম্পানির দর বেড়েছে ও কমেছে ৪১ শতাংশের দর। অন্যদিকে চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচকও বেশিরভাগ শেয়ারদর বাড়ার পাশাপাশি লেনদেন বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। সিঙ্গার বিডির বড় অঙ্কের লেনদেনের কারণে সিএসইর লেনদেন বেড়েছে। বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৩ দশমিক ৪৩ পয়েন্ট বা দশমিক ২৫ শতাংশ বেড়ে পাঁচ হাজার ২৩৬ দশমিক ৮৫ পয়েন্টে অবস্থান করে। ডিএসইএস বা শরিয়াহ্‌ সূচক দুই দশমিক ৩৫ পয়েন্ট বা দশমিক ১৯ শতাংশ বেড়ে এক হাজার ২০৬ দশমিক ৮৪ পয়েন্টে অবস্থান করে। আর ডিএস৩০ সূচক আট দশমিক ৩৪ পয়েন্ট বা দশমিক ৪৫ শতাংশ বেড়ে এক হাজার ৮৫০ দশমিক শূন্য এক পয়েন্টে অবস্থান করে। বৃহস্পতিবার ডিএসইর বাজার মূলধন তিন লাখ ৮৮ হাজার ৪৪০ কোটি ২৬ লাখ ৩২ হাজার ৩৩ টাকা হয়। ডিএসইতে লেনদেন হয় ৪৭৮ কোটি ৯০ লাখ ৮৫ হাজার টাকার শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৫৪২ কোটি ৫৫ লাখ শূন্য ছয় হাজার টাকার শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট। এ হিসেবে লেনদেন কমেছে ৬৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এদিন ১৬ কোটি ৫৪ লাখ ১১ হাজার ৩৩৩টি শেয়ার এক লাখ ২৯ হাজার ৫৫৪ বার হাতবদল হয়। লেনদেন হওয়া ৩৫২ কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৫৯টির, কমেছে ১৪৪টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ৪৯টির দর। ওইদিন টাকার অঙ্কে লেনদেনের শীর্ষে উঠে আসে ইউনাইটেড পাওয়ার। কোম্পানিটির ৪৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়। দর বেড়েছে ১০ টাকা ১০ পয়সা। বেক্সিমকো লিমিটেডের ১৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা লেনদেনের পাশাপাশি দর বেড়েছে এক টাকা ৯০ পয়সা। তৃতীয় অবস্থানে থাকা ন্যাশনাল টিউবসের ১৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়। দর বেড়েছে চার টাকা ৬০ পয়সা। ফরচুন শুজের ১৬ কোটি ৩০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়। ওরিয়ন ইনফিউশনের ১৩ কোটি ২০ লাখ টাকা লেনদেন হয়। এছাড়া বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের ১০ কোটি ১৭ লাখ টাকা, খুলনা পাওয়ারের ৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা, জেএমআই সিরিঞ্জের আট কোটি ৪৭ লাখ টাকা, মুন্নু সিরামিকের সোয়া আট কোটি টাকা, সিলকো ফার্মার পৌনে আট কোটি টাকা লেনদেন হয়। সোয়া ৯ শতাংশ বেড়ে দর বৃদ্ধির শীর্ষে উঠে আসে বেক্সিমকো লিমিটেড। আরএন স্পিনিংয়ের দর ৯ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ, জেনারেশন নেক্সটের দর আট দশমিক ৫১ শতাংশ, ফ্যামিলি টেক্সের দর আট দশমিক ৩৩ শতাংশ, ন্যাশনাল পলিমারের দর ছয় দশমিক ৮০ শতাংশ, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের দর ছয় দশমিক ৪৫ শতাংশ, প্রিমিয়ার লিজিংয়ের দর প্রায় ছয় শতাংশ, রেনউইক যজ্ঞেশ্বরের দর সাড়ে পাঁচ শতাংশ, ঢাকা ইন্সু্যরেন্সের দর সাড়ে পাঁচ শতাংশ ও ফাস ফাইন্যান্সের দর সাড়ে পাঁচ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে ছয় দশমিক ৬১ শতাংশ কমে দর পতনের শীর্ষে উঠে আসে এসইএমএলএফবিএসএল গ্রোথ ফান্ড। এমারাল্ড অয়েলের দর তিন দশমিক ৭৭ শতাংশ, গোল্ডেন সনের দর তিন দশমিক ৭৫ শতাংশ, লিবরা ইনফিউশনের দর তিন দশমিক ৪২ শতাংশ, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালসের দর তিন দশমিক ৩০ শতাংশ, এলআর গেস্নাবাল মিউচুয়াল ফান্ডের দর তিন দশমিক ১২ শতাংশ, আইসিবি এএমসিএল সোনালী ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের দর দুই দশমিক ৮৫ শতাংশ, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানির দর দুই দশমিক ৭০ শতাংশ, সায়হাম টেক্সটাইলের দর দুই দশমিক ৩২ শতাংশ ও পিএইচপি ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের দর দুই দশমিক ২২ শতাংশ কমেছে। সিএসইতে ওইদিন সিএসসিএক্স মূল্যসূচক ৩৪ দশমিক ৬১ পয়েন্ট বা দশমিক ৩৫ শতাংশ বেড়ে ৯ হাজার ৭৩৪ দশমিক শূন্য ছয় পয়েন্টে এবং সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৬২ দশমিক ২২ পয়েন্ট বা দশমিক ৩৮ শতাংশ বেড়ে ১৬ হাজার ৪০ দশমিক শূন্য পাঁচ পয়েন্টে অবস্থান করে। সর্বমোট ২৬৫টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১৪০টির, কমেছে ৮৬টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ৩৯টির দর। সিএসইতে এদিন ৪০ কোটি ৯৭ লাখ ২০ হাজার ৬৩৪ টাকার শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট লেনদেন হয়। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ২১ কোটি ২১ লাখ আট হাজার ৩১৯ টাকার শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট। এ হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ১৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। সিএসইতে লেনদেনের শীর্ষে অবস্থান করে সিঙ্গার বিডি। কোম্পানিটির ১৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়। এরপর সন্ধানী লাইফ ইন্সু্যরেন্সের দুই কোটি ৪২ লাখ টাকার, বেক্সিমকোর এক কোটি ৯২ লাখ টাকার, ডরিন পাওয়ারের এক কোটি ৬২ লাখ টাকার, ওরিয়ন ইনফিউশনের এক কোটি ৬০ লাখ টাকার, বিএসসির ৬৮ লাখ টাকার, বীকন ফার্মার ৫৭ লাখ টাকার, আরএন স্পিনিংয়ের ৫৩ লাখ টাকার, সাইফ পাওয়ারের ৫২ লাখ টাকার, বিএটিবিসির ৪০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন পুঁজিবাজার খারাপ অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। বাজারের এ অবস্থার জন্য বেশকিছু কারণ রয়েছে। বড় সমস্যা হচ্ছে তারল্য সংকট। শুধু পুঁজিবাজারে নয়, মানি মার্কেটেও তারল্য সংকট রয়েছে। যখন বাজারে তারল্য সংকট সৃষ্টি হয় তখন দেখা যায় আইসিবি ভারসাম্য আনার জন্য বিনিয়োগ করে কিন্তু তাতেও বাজার স্থিতিশীল থাকে না। আসলে বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য পর্যাপ্ত তারল্য থাকা দরকার। তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাজার ব্যাংক নির্ভরশীল হওয়া উচিত নয়। ব্যাংকের কাজ আমানত সংগ্রহ করা এবং ঋণ দেয়া। ব্যাংকের এটাই প্রধান ব্যবসা। পৃথিবীর কোনো দেশের ব্যাংকের ওপর পুঁজিবাজার নির্ভরশীল নয়। সেখানে দেখা যায়, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট, মার্চেন্ট ব্যাংক অর্থাৎ পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট যারা জড়িত থাকে তাদের ওপর নির্ভর করে। ২০০৯-১০ সালে ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে এমনভাবে জড়িত হয়ে পড়ে যে তখন থেকে ধরে নেয়া হয়েছে, পুঁজিবাজার আসলে ব্যাংকনির্ভর হয়ে পড়েছে। কারণ তখন মিউচুয়াল ফান্ড, বন্ড এবং মার্চেন্ট ব্যাংক তেমন উন্নতি করতে পারেনি। ওই সুযোগে ব্যাংক প্রতিষ্ঠানগুলো মনে করেছিল এখান থেকে অনেক প্রফিট করা যাবে এবং প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক প্রফিটও করেছে। এখন তারা সেখান থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। কারণ এখন তাদের ঋণ দিতেই সমস্যা। কী করে বাজারে বিনিয়োগ করবে। যে টাকা ঋণ দিচ্ছে তা ফেরত পাচ্ছে না। আসলে বাজারে বিনিয়োগ করার সক্ষমতা ব্যাংকগুলোর নেই। গত ৯ বছরে দু-একটি বছর ছাড়া প্রায় সময়ই বাজার ভালো যায়নি। এটি আসলে দেশের পুঁজিবাজারের জন্য হতাশাজনক।