বাণিজ্য ঘাটতি কিছুটা কমেছে

প্রকাশ | ২৫ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
যাযাদি ডেস্ক আমদানিতে ধীরগতির পরও বড় বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে শেষ হয়েছে ২০১৮-১৯ অর্থবছর। যার ফলে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যেও রয়ে গেছে বড় ঘাটতি। অর্থবছর শেষ হওয়ার দেড় মাস পার হয়ে গেলেও বাংলাদেশ ব্যাংক সোমবার বৈদেশিক বাণিজ্যের লেনদেনের তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, গত ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পণ্য বাণিজ্যে সামগ্রিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৫৪৯ কোটি ৪০ লাখ (১৫.৫৫ বিলিয়ন) ডলার। ঘাটতির এই অঙ্ক ২০১৭-১৮ অর্থবছরের চেয়ে ১৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ কম হলেও তার আগের ২০১৬-১৭ বছরের চেয়ে ৬৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেশি। খবর: বিডিনিউজের লাগামহীন আমদানিতে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে বাণিজ্য ঘাটতি এক হাজার ৮১৭ কোটি ৮০ লাখ (১৮.১৮ বিলিয়ন) ডলারে উঠেছিল। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এই ঘাটতি ছিল ৯৪৭ কোটি ২০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরে আমদানি খাতে ব্যয় বেড়েছে মাত্র ১ দশমিক ৭৯ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তার আগের বছরের চেয়ে আমদানি বেড়েছিল ২৫ দশমিক ২৩ শতাংশ। সার্বিক অবস্থা বিশ্লেষণ করে অর্থনীতির গবেষক জায়েদ বখত বলেন, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলসহ বিভিন্ন বড় প্রকল্পের সরঞ্জাম আমদানির কারণে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এ খাতে ব্যয় বেড়েছিল। এ ছাড়া বন্যায় ফসলের ক্ষতির কারণে চাল আমদানি বেড়েছিল। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় বেড়েছিল এ খাতের খরচ। কিন্তু গত অর্থবছরে এইসব খাতেই আমদানি ব্যয় কমেছে। আর সে কারণেই বাণিজ্য কমেছে বলে জানান বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ৫ হাজার ৫৪৩ কোটি ৯০ লাখ (৫৫.৪৪ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। একই সময়ে রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৩ হাজার ৯৯৪ কোটি ৫০ লাখ (৩৯.৯৪ বিলিয়ন) ডলার। এ হিসাবে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৫৪৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার। ঘাটতি কমেছে সেবা বাণিজ্যেও; ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩৭১ কোটি ৫০ লাখ ডলার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ৪২০ কোটি ডলার। [সেবা খাতের বাণিজ্যে মূলত বিমা, ভ্রমণ ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে।] আমদানি কমায় বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যও কমেছে। ৫২৫ কোটি ৪০ লাখ (৫.২৫ বিলিয়ন) ডলারের ঘাটতি নিয়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছর শেষ করেছে বাংলাদেশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এই ঘাটতি ছিল প্রায় দ্বিগুণ- ৯৫৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার। ২০১৬-১৭ বছরে ছিল ১৩৩ কোটি ১০ লাখ ডলার। সাধারণভাবে কোনো দেশের নিয়মিত বৈদেশিক লেনদেন পরিস্থিতি বোঝা যায় চলতি হিসাবের মাধ্যমে। আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য নিয়মিত আয়-ব্যয় এতে অন্তর্ভুক্ত হয়। এখানে উদ্বৃত্ত হলে চলতি লেনদেনের জন্য দেশকে কোনো ঋণ করতে হয় না। আর ঘাটতি থাকলে তা পূরণ করতে ঋণ নিতে হয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সামগ্রিক লেনদেনে শেষ পর্যন্ত ১ কোটি ২০ লাখ ডলারের উদ্বৃত্ত ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এই লেনদেনে ৮৫ কোটি ৭০ লাখ ডলারের ঘাটতি ছিল। বিদেশি বিনিয়োগ ও সহায়তা ছাড়ের পরিমাণ বাড়ায় গত অর্থবছরে সরকারের আর্থিক হিসাবে ভালো ৫৬২ কোটি ৮০ লাখ ডলারের উদ্বৃত্ত তৈরি হয়েছে। আগের বছরে এই উদ্বৃত্তের পরিমাণ ছিল আরও বেশি; ৯০১ কোটি ১০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের সবমিলিয়ে ৪৫০ কোটি ১০ লাখ ডলারের প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বাংলাদেশে এসেছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ৩২৯ কোটি ডলার।