থমকে আছে চীনের অথার্য়নে বেশ কয়েকটি প্রকল্পের কাজ

প্রকাশ | ০৫ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

ইমদাদ হোসাইন
আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও ভ‚মি অধিগ্রহণের কারণে চীনের অথার্য়নে আটটি গভনের্মন্ট টু গভনের্মন্ট (জিটুজি) প্রকল্পের কাজ থমকে আছে। প্রকল্পগুলো হচ্ছে- কনর্ফুলী নদীর নিচ দিয়ে মাল্টিল্যান রোড টানেল, পদ্মা ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট প্রজেক্টসহ আরও কয়েকটি প্রকল্প। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি ঢাকায় চীন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে অথৈর্নতিক সম্পকর্ বিভাগ (ইআরডি) এ বিষয়ে একটি উচ্চপযাের্য়র বৈঠক করেছে। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পগুলোর কয়েকটির বাস্তবায়ন থমকে আছে দুই পক্ষ থেকে সৃষ্ট কিছু জটিলতার কারণে। বৈঠকে সমস্যাগুলোর দ্রæত সমাধানের ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের জন্য চীন কণর্ফুলী টানেল তৈরিতে ৭০৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার কথা ছিল। তাদের চুক্তি অনুযায়ী এই প্রকল্পের জন্য সম্প্রতি তারা তাদের প্রথম ধাপের ১৩৭ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার ছাড় করেছে। বৈঠকে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রকল্প পরিচালককে ইতোমধ্যে কণর্ফুলী টানেলের পরিবতির্ত শ্রেণিবিন্যাস ও অগ্রগতির ব্যাপারে অবহিত করা হয়েছে। টানেলের পরিবতির্ত ডিজাইনও জমা দেয়া হয়েছে। ডেপুটি কমিশনার বরাবর সব কাগজপত্রাদি জমা দেয়া হয়েছে। ওই বৈঠকে চীনা কতৃর্পক্ষ বাংলাদেশকে অনুরোধ করেছে, জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়াটা তারা যেন সুবিধাজনক সময়ের মধ্যে সেরে নেন। কারণ হিসেবে তারা বলছে, এই প্রকল্পের জন্য জমি আরও বেশি লাগতে পারে। এছাড়া আরও শতাধিক যন্ত্রপাতিরও প্রয়োজন হতে পারে। ওই বৈঠকে পদ্মা ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্রকল্পের কাজের বিষয়ে জানানো হয়, এই প্রকল্পটি একেবারেই ধীর গতিতে চলছে জমি অধিগ্রহন জটিলতার কারণে। যার কারণে পাইপ লাইনের কাজও ভালোভাবে করা যাচ্ছে না। প্রকল্প প্রধানের মতে, বেঁধে দেয়া সময়ের চেয়েও আরও বহুগুণ বেশি সময় লাগতে পারে এই প্রকল্পে। তার উল্লেখিত তথ্যাদিতে বলা হয়েছে, প্রকল্প শতভাগ বাস্তবায়ন নিয়েও রয়েছে বড় শঙ্কা। যদিও চীনা কতৃর্পক্ষ দাবি করছে, আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে তারা এই প্রকল্পটি শেষ করে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার তাদের হাতে কাজ বুঝিয়ে দেবেন। ঋণ নেয়ার পর থেকে এই প্রকল্পটির কাজের মেয়াদ এই বছরের নভেম্বর মাসের ১৫ তারিখ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। চীনা কতৃর্পক্ষও আশা করছে এই সময়ের মধ্যে তারা কাজ বুঝে পাবেন। মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে প্রতিদিন ৪৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে। প্রকল্পের কাজের শুরুর দিকেই বলা হয়েছিল, এই বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হবে রাজধানী ঢাকার দক্ষিণ-পূবার্ঞ্চলের দিকে। ওই প্লান্টে পদ্মা থেকে পানি পরিশোধন করে ৩৩ কিলোমিটার পাইপলাইন দিয়ে তা প্রথমে আনা হবে মিডফোডর্ হাসপাতালের নিকটবতীর্ একটি কেন্দ্রে। সেখান থেকেই এই পানি সরবরাহ করা হবে ঢাকা শহরে। এই প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা। যেখানে বাংলাদেশ সরকার অথার্য়ন করবে ১ হাজার ৭৫ কোটি টাকা। আর চীনের এক্সিম ব্যাংক এই প্রকল্পে অথর্ দেবে ২ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। অন্য আরেকটি প্রকল্প সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিংয়ের (এসপিএম) ব্যাপারেও কথা হয়েছে ওই বৈঠকে। এই প্রকল্পটি ডাবল পাইপলাইনের। এই প্রকল্পটির ধীরগতির কাজের কারণ জানতে চাইলে বলা হয়েছে, প্রকল্প শুরুর ঘোষণা দেয়ার পর থেকেই শিডিউল টাইমের মধ্যে প্রকল্পের টাকা হাতে না পাওয়ায় কাজ সঠিক সময়ে শুরু করা সম্ভব হয়নি। এ প্রকল্পের বাস্তবায়নের জন্য চীন ৫৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার দেবে বলে জানা গেছে। এই প্রকল্পগুলো মধ্যে চীনা রেয়াতি ঋণের মোট ৮ কোটি ২৫ লাখ ডলারও প্রদান করা হবে। আর ৪৬ দশমিক ৭৮৪ কোটি ডলার আসবে পক্ষপাতমূলক ঋণের মাধ্যমে। চীনা কতৃপক্ষ বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের দুটি কাজের ব্যাপারে দুটি ড্রাফট ঋণ চুক্তিপত্র পাঠিয়েছে। প্রকল্পগুলো হলো ডিপিডিসির পাওয়ার সিস্টেম নেটওয়াকর্ আর অন্যটি হলো পিজিসিবির প্রকল্প বাস্তবায়ন। দেশটির এক্সিম ব্যাংক ইআরডি কতৃর্পক্ষকে বলেছে, এই প্রকল্প বাস্তবায়নে আরও তিন থেকে চার মাস বেশি সময় লাগতে পারে। অন্যদিকে পাবলিক খাতের জুট মিলগুলোর উন্নয়নের জন্যও ২৮ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার কথা রয়েছে চীনের। কিন্তু প্রকল্পটি এখনও ইস্যুই করা হয়নি। অথচ ২০১৭ সালের আগস্টের প্রথম সপ্তাহেই এই প্রকল্পের লেটার অব ইন্টারেস্ট জমা দিয়ে রেখেছিল সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষ। বাংলাদেশ টেলিভিশনের স্টেশন স্থাপনের জন্য চীনা কতৃর্পক্ষের কাছে ২৮ কোটি ডলার চেয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আবেদন করার কথা থাকলেও সেটিও ধীরগতিতে চলছে বলে জানা গেছে।