আগস্টে কমেছে রপ্তানি আয়

আগস্টে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৭৬৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার। নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ কম রপ্তানি হয়েছে আগস্টে। ৬৭৩ কোটি ২১ লাখ ৭০ হাজার ডলার রপ্তানি করা হয়েছে আগস্ট মাসে

প্রকাশ | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
যাযাদি রিপোর্ট হঠাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রপ্তানি কম হয়েছে গত আগস্টে। চলতি অর্থবছরে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ হাজার ৫৫০ কোটি মার্কিন ডলার। এর মধ্যে আগস্টে নির্ধারণ করা হয়েছিল ৭৬৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার। নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ কম রপ্তানি হয়েছে আগস্টে। ৬৭৩ কোটি ২১ লাখ ৭০ হাজার ডলার রপ্তানি করা হয়েছে আগস্ট মাসে। ২০১৮ সালের আগস্টে রপ্তানি আয় ছিল ৬৭৯ কোটি ৫০ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার। গত অর্থবছরের আগস্টের তুলনায় বর্তমান অর্থবছরের আগস্টে রপ্তানি হয়েছে শূন্য দশমিক ৯২ শতাংশ কম। রোববার বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন বু্যরোর রপ্তানি প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেছে। আগস্টে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রপ্তানি কম হয়েছে, পাশাপাশি কিছু পণ্য লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি। এর মধ্যে বরফ ও তাজা মাছের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮ কোটি ৭৮ লাখ ৩০ হাজার, রপ্তানি হয়েছে ৮ কোটি ২৮ লাখ ৫০ হাজার ডলার। কৃষিপণ্যের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৮ কোটি ৯১ লাখ ৭০ হাজার, রপ্তানি হয়েছে ১৩ কোটি ৪৪ লাখ ডলার। কেমিক্যাল পণ্যের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ কোটি ৭৬ লাখ ৩০ হাজার, রপ্তানি হয়েছে ৩ কোটি ৩৭ লাখ ডলার। এ ছাড়া কমেছে হস্তশিল্পের পণ্য, জাহাজজাতীয় পণ্য, চুল, সিরামিক পণ্য, আইরন স্টিল, স্টেইনলেস স্টিল ওয়ারসহ বেশকিছু পণ্যের রপ্তানি। অন্যদিকে, রপ্তানি আয়ের শীর্ষ খাত পোশাকশিল্পেও ভাটা দেখা দিয়েছে। আগস্টে এ তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি আয় হয়েছে ৫৭১ কোটি ৬৪ লাখ ৯০ হাজার ডলার। অথচ এ সময়ে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৪৫ কোটি ২০ লাখ ২০ হাজার ডলার। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১১ দশমিক ৪০ শতাংশ কম আয় হয়েছে। গত বছর আগস্টে তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি আয় ছিল ৫৭৩ কোটি ৫১ লাখ ৬০ হাজার ডলার। অর্থাৎ গত বছরের চেয়েও দশমিক ৩৩ শতাংশ পিছিয়ে আছে এ খাতের রপ্তানি আয়। সদ্য বিদায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩ হাজার ৪১৩ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এই আয় আগের অর্থবছরের চেয়ে ১১ দশমিক ৪৯ শতাংশ বেশি। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পোশাক রপ্তানিতে আয় হয়েছিল ৩ হাজার ৬১ কোটি ডলার। গেল অর্থবছরে পোশাক রপ্তানিতে ভালো প্রবৃদ্ধির ওপর ভর করে দেশের সামগ্রিক পণ্য রপ্তানি আয় ৪০ বিলিয়ন বা ৪ হাজার কোটি ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করেছে। শেষ পর্যন্ত বিদায়ী অর্থবছরে রপ্তানি আয় ৪ হাজার ৫৩ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। এই আয় আগের অর্থবছরের চেয়ে ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেশি। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩ হাজার ৬৬৬ কোটি ডলারের রপ্তানি আয় হয়েছিল। সরকার ২০২১ সালের মধ্যে রপ্তানিবাণিজ্য ৫ হাজার কোটি মার্কিন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এ লক্ষ্য পূরণে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির চোখ এবার গেছে রাশিয়ার দিকে। তিনি ইতোমধ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন, 'যেদেশে জনসংখ্যা যত বেশি, সেদেশে বিভিন্ন ধরনের পণ্যের চাহিদাও তত বেশি।' এ কারণেই এবার তিনি বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির জন্য রাশিয়ার বাজার ধরার চেষ্টা করছেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, রাশিয়ার বাজারে বাংলাদেশি তৈরি পোশাক, পাট ও পাটজাতপণ্য, হিমায়িত মাছ, ওষুধ, আলু ও সবজির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে রাশিয়ায় কিছু তৈরি পোশাক, পাট, হিমায়িত চিংড়ি ও আলু রপ্তানি হচ্ছে। অন্যদিকে রাশিয়ায় উৎপাদিত গম, তুলা, ভুট্টা ইত্যাদি। এ ছাড়া ইউরিয়া সার, প্রাকৃতিক গ্যাস, পেট্রোলিয়াম, কেমিক্যালস ও খনিজও দেশটির রপ্তানিযোগ্য পণ্য, যা বাংলাদেশ আমদানি করে। রাশিয়ার বাজার ধরতে গেলে শুধু রাশিয়া নয়, রাশিয়াকে যুক্ত করে পূর্ব ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ার পাঁচটি দেশ-রাশিয়া, বেলারুশ, কাজাখস্তান, আরমেনিয়া ও কিরগিজস্তানকেও এর সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। কারণ এই পাঁচটি দেশের সমন্বয়ে ইউরেশিয়ান ইকোনমিক ইউনিয়ন (ইইইউ) গঠিত হয়, যা গত ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। এই জোটের সদস্য দেশগুলো একসময় সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল। বর্তমানে কমনওয়েলথ অব ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্টেটস (সিআইএস) নামে পরিচিত। কাজেই রাশিয়ার বাজার ধরতে হলে এই জোটের সম্মতি প্রয়োজন হবে। আর এই জোটের সম্মতি পেলে রাশিয়ার সঙ্গে বাকি চার দেশের বাংলাদেশের রপ্তানিযোগ্য পণ্যের বাজার সৃষ্টি হবে।