বাণিজ্যযুদ্ধের প্রভাব চীন-মার্কিন অর্থনীতিতে

প্রকাশ | ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
যাযাদি ডেস্ক যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্য যুদ্ধে নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। সম্প্রতি মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাণিজ্য যুদ্ধে বিশ্ব অর্থনীতির ৮৫ হাজার কোটি ডলার ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। খবর রয়টার্স। রয়টার্সের অন্য আরেক প্রতিবেদন বলছে, চলতি বছরের আগস্টে চীনের রপ্তানি কমেছে। এ মাসে দেশটির আমদানিও টানা চার মাসের মতো কমেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ এবং বৈশ্বিক বাজারে চাহিদা হ্রাসে চীনের রপ্তানি খাত বড় ধাক্কা খাচ্ছে। গত জুলাই বাদে টানা ১৫ মাসের মতো আগস্টে দেশটির রপ্তানি কমেছে। দেশ ও বিদেশ থেকে মোট ক্রয়াদেশও প্রতিনিয়ত কমছে। মার্কিন গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, চীন-মার্কিন শুল্ক যুদ্ধের জেরে বাণিজ্য নিয়ে বিশ্বে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এ কারণে বিনিয়োগ থেকে থেকে হাত গুটিয়ে রেখেছে প্রতিষ্ঠানগুলো, যা সব মিলিয়ে বিশ্বের বৃদ্ধিকে এক শতাংশ টেনে নামাতে পারে। বিশ্লেষকদের হিসাবে, যদি বিশ্ব অর্থনীতির আকার ৮৫ লাখ কোটি ডলার ধরা হয়, সে ক্ষেত্রে বাণিজ্য যুদ্ধে ক্ষতির অঙ্ক দাঁড়াবে প্রায় ৮৫ হাজার কোটি ডলার। গত শুক্রবার অর্থনীতির গতি শ্লথ হওয়া নিয়ে ফের টুইটে ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলকে আক্রমণ করে লিখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার দাবি, ফেড দ্রম্নত সুদ বাড়িয়েছে। কিন্তু তা কমাতে গড়িমসি করছে। একই সঙ্গে শুল্ক যুদ্ধে চীনের অর্থনীতি ধাক্কা খাচ্ছে বলেও আবার দাবি করেছেন ট্রাম্প। এদিকে বাধ্যতামূলকভাবে ব্যাংকগুলোকে যত অর্থ মজুত রাখতে হয়, গতকাল তার হার ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়েছে চীন। চলতি বছরে এ নিয়ে তৃতীয়বার কমাল দেশটি। এতে বাজারে নগদ বাড়বে প্রায় ১২ হাজার ৬৩৫ কোটি ডলার। অনেকের মতে, শুল্ক যুদ্ধের প্রভাব কাটিয়ে অর্থনীতিকে চাঙা করতে এ উদ্যোগ। এর আগের দিন বাণিজ্যযুদ্ধে আগামী বছর বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দশমিক পাঁচ শতাংশ কমবে বলে মন্তব্য করেছেন ফ্রান্সের অর্থমন্ত্রী ব্রুনো লি ম্যারি। ফরাসি দৈনিক লা ক্রোইক্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন অভিমত দিয়ে তিনি বলেন, চীন ও মার্কিন অর্থনীতি এখন বিশ্ব অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। চীনের সঙ্গে বিপুল বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়ে গত বছর থেকে বেইজিংয়ের রপ্তানি পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্কারোপ শুরু করে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। বেইজিংও মার্কিন পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্কারোপ শুরু করে। সর্বশেষ বেশকিছু চীনা পণ্যে ১৫ শতাংশ শুল্কারোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। চীনও পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছে। চীনের রপ্তানি পণ্যে শুল্কারোপ আরও বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে দু'দেশের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ আরও তীব্র হয়েছে। এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বিশ্ব বাণিজ্যে। যদিও চলমান বাণিজ্য উত্তেজনা কমিয়ে নিয়ে আসতে আগামী অক্টোবরের শুরুতে উচ্চপর্যায়ের আলোচনায় বসতে সম্মত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। ওয়াশিংটনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে। দু'দেশের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে উদ্বেগ যখন ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে, তখন এ খবর সামনে এলো। রয়টার্সের প্রতিবেদনমতে, আগস্টে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় চীনের রপ্তানি কমেছে এক শতাংশ। গত জুনের পর এটিই সবচেয়ে বড় রপ্তানি পতন। জুনে কমেছিল এক দশমিক তিন শতাংশ। গত জুলাইয়ে আবার রপ্তানি তিন দশমিক তিন শতাংশ বেড়েছিল। অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সম্প্রতি চীন ব্যাপক প্রণোদনার উদ্যোগ নিয়েছে। এতে রয়টার্সের জরিপে প্রত্যাশা করা হয়েছিল আগস্টে রপ্তানি বাড়বে। কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে তা আরও কমল। আগামী মাসে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি আরও কমবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। কারণ ১ অক্টোবর ও ১৫ ডিসেম্বর আরও দুই দফায় চীনা পণ্য রপ্তানিতে মার্কিন শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।রপ্তানির পাশাপাশি আমদানিও কমেছে চীনের। গত এপ্রিল থেকে টানা চার মাস কমছে আমদানি। তথ্যমতে, আগস্টে রপ্তানি কমেছে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় পাঁচ দশমিক ছয় শতাংশ। গত জুলাই মাসেও একই হারে আমদানি কমেছিল। আগস্টে চীনের শিল্প উৎপাদনও ফের কমেছে। এ নিয়ে টানা চার মাস দেশটির শিল্পোৎপাদন কমল। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ এবং অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা হ্রাস কারখানা কার্যক্রমের হ্রাসের অন্যতম কারণ। এতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে আবারও শ্লথগতির ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।