ইসলামী ব্যাংকিংয়ের পরিধি বৃদ্ধি

প্রবাসীদের আস্থা শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকিংয়ে

ঁ ৯ হাজার ৭১২ কোটি টাকা প্রবাসী আয় এসেছে ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঁ শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকগুলোর মোট আমানতের পরিমাণ ২ লাখ ৫৩ হাজার ৫৮ কোটি টাকা ঁ বিনিয়োগ হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ১৮৮ কোটি টাকা

প্রকাশ | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ইমদাদ হোসাইন ইসলামী ব্যাংকিংয়ে আস্থা বাড়ছে প্রবাসী মানুষের। মোট প্রবাসী আয়ের সিংহভাগই আসে ইসলামী ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে। অন্যদিকে ব্যাংক খাতের মোট ব্যাংক হিসাবের চার ভাগের এক ভাগই ইসলামী ব্যাংকিংয়ের দখলে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশের প্রথম শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংক ও বেসরকারি খাতের শীর্ষ ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে প্রতি বছর। চলতি বছরের জুন শেষে দেখা গেছে, ৯ হাজার ৭১২ কোটি টাকা প্রবাসী আয় এসেছে ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১১ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা। যেখানে পুরো ব্যাংক খাতের মাধ্যমে একই সময়ে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ৩৮ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ মোট প্রবাসী আয়ের ২৫ দশমিক ২৭ শতাংশই আসে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে আরও দেখা যায়, জুন শেষে মোট ইসলামী ব্যাংকিং খাতের প্রবাসী আয়ের ৭৭ দশমিক ২৬ শতাংশই আসে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। অন্যান্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৬ দশমিক ২৭ শতাংশ, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে ৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে ৫ দশমিক ৫২ শতাংশ, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে ২ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ, এক্সিম ব্যাংকের মাধ্যমে ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ, ইউনিয়ন ব্যাংকের মাধ্যমে দশমিক ৯২ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই প্রতিবেদনটি, দেশে কার্যরত মোট ৫৯টি ব্যাংকের মধ্যে আমানত ও ঋণের হিসাব হালনাগাদের ভিত্তিতে করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে পুরোদমে ইসলামি ব্যাংকিং কার্যক্রম চালাচ্ছে ৮টি ব্যাংক। এ ছাড়া ৯টি প্রচলিত (কনভেনশনাল) ব্যাংকের ১৯টি শাখা এবং ৮টি প্রচলিত ব্যাংকের ২৫ উইন্ডোর মাধ্যমে ইসলামি ব্যাংকিং চলছে। এসব ব্যাংক, শাখা এবং উইন্ডোতে মোট আমানতের পরিমাণ ২ লাখ ৫৩ হাজার ৫৮ কোটি টাকা। যা দেশের সব ব্যাংকের মোট আমানতের ২৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। কিন্তু এক বছর আগেও এর পরিমাণ ছিল ২ লাখ ২৪ কোটি ৭৫৬ কোটি টাকা। সুতরাং বছরের ব্যবধানে ইসলামি ব্যাংকিংয়ে আমানতের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ১৩ শতাংশ। ২০১৪ সালে এর পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩৩ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টদের মতে, মুসলিম দেশগুলোতে ইসলামিক ব্যাংকের চাহিদা অনেক বেশি। ধর্মীয় নিয়ম মেনে যারা ব্যবসা-বাণিজ্য ও লেনদেন করতে চান তারা সাধারণত ইসলামিক ব্যাংকগুলোতে লেনদেন করেন। তাছাড়া দেশের ৯০ ভাগ ব্যাংক গ্রাহক মুসলমান। এ কারণেই দেশের ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের পরিধি দিন দিন বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১৯ সালের জুন শেষে দেশের ব্যাংকগুলোতে ১ হাজার ২৬১টি ইসলামি ব্যাংকিং শাখা রয়েছে। ২০১৮ সালের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল এক হাজার ১৭৮টি। ইসলামি ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিনিয়োগ হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ১৮৮ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে যা ছিল ২ লাখ ১৬ হাজার ৮২৭ কোটি টাকা। ২০১৯ শেষে সবগুলো ব্যাংকের বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ১০ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। সে হিসাবে ইসলামি ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিনিয়োগের পরিমাণ ২৪ দশমিক ২৬ শতাংশ। আবার এই বিনিয়োগের ৯৪ দশমিক ৭৬ শতাংশই দেশের ৮টি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। আর বাকি ২ দশমিক ৯৬ শতাংশ অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের ইসলামী ব্যাংকিং শাখায় ও ২ দশমিক ২৮ শতাংশ ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডোর মাধ্যমে। বর্তমানে ইসলামিক ব্যাংকিংয়ে উদ্বৃত্ত তারল্যের পরিমাণও আগের বছরের তুলনায় কমছে। ২০১৮ শেষে যেখানে ছিল ৬ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা, সেখানে ২০১৯ শেষে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকায়। ইসলামিক ধারার ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে আগের বছরের তুলনায় দেশে কম রেমিট্যান্স এসেছে এবার। জুন শেষে মোট রেমিট্যান্সের ২৫ শতাংশ এসেছে শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে। বিশেষ করে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে প্রতিবছর। জুন (২০১৯) শেষে দেখা গেছে, ৯ হাজার ৭১২ কোটি টাকা এসেছে ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১১ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা। বর্তমানে ইসলামি ব্যাংকিংয়ে মোট জনশক্তি রয়েছে ৩৫ হাজার ৩৪১ জন। যা আগের বছরের চেয়ে ২ হাজার ৭৬২ জন বেশি। ২০১৮ সালের জুন শেষে ইসলামি ব্যাংকিংয়ে মোট জনশক্তির সংখ্যা ছিল ৩২ হাজার ৫৭৯ জন। বাংলাদেশের ৮টি পূর্ণাঙ্গ ইসলামি ব্যাংক হলো- ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ফার্স্ট সিকিউরিটিজ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক লিমিটেড, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, এক্সপোর্ট ইম্পোর্ট ব্যাংক অব বাংলাদেশ লিমিটেড (এক্সিম), সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড ও ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড।