পর্ষদের চাপে ব্যাংকের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বিভাগ অকার্যকর

বিআইবিএমের গবেষণা কর্মশালায় বক্তারা

প্রকাশ | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
সোমবার রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) ইফেক্টিভ অব রিস্ক মানেজমেন্ট ডিভিশন অব অ্যাসেসমেন্ট শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়
ব্যাংকের রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট বা ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বিভাগের সম্মতি না থাকলেও পরিচালনা পর্ষদের ইচ্ছায় অনেক সময় ঋণ বিতরণ করা হয়। এর ফলে খেলাপিতে পরিণত হয় অনেক বৃহদাকার ঋণ। এ ক্ষেত্রে ইচ্ছা থাকলেও আরএমডি বিভাগের কিছুই করার থাকে না। সোমবার রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) ইফেক্টিভ অব রিস্ক মানেজমেন্ট ডিভিশন অব অ্যাসেসমেন্ট শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণকারী বক্তারা। বাংলাদেশে ২০০৩ সাল থেকে ব্যাংকের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম শুরু হলেও এখনো পর্যন্ত পুরোপুরি কাজ করছে না রিস্ক ম্যানেজমেন্ট বিভাগ। সে কারণেই দিনের পর দিন বাড়ছে খেলাপি ঋণ, মূলধন ঘাটতি এবং অ্যাডভান্স ডিপোজিট রেশিও (এডিআর)। সেমিনারের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের অধ্যাপক মোহাম্মদ নেহাল আহমেদ বলেন, একটি সময় আমাদের দেশে রিস্ক ম্যানেজমেন্টের কোনো অভ্যাস ছিল না। আস্তে আস্তে সেই অভ্যাস তৈরি হয়েছে এবং আশা করি, ভবিষ্যতে ব্যাংকিং সেক্টরে রিস্ক ম্যানেজমেন্টের পুরোপুরি বাস্তবায়ন হবে। রিস্ক ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ঋণ দেয়া অনেকটা ভূমিকম্পের আগে নিজেদের প্রস্তুত করে নেয়ার মতো। তিনি আরও বলেন, প্রত্যেকটি ব্যাংকের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় নিজস্ব নীতিমালা থাকা উচিত। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লক্ষ্য করা যায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা পালন করতেই ব্যস্ত ব্যাংকগুলো। এ ক্ষেত্রে এই বিভাগকে অটোমেশনের আওতায় আনা এবং অভিজ্ঞ লোকের কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন নেহাল আহমেদ। উন্মুক্ত আলোচনায় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মধ্যে একজন জানান, যেখানে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশের খেলাপি ঋণ ৩-৪ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ, সেখানে আমাদের দেশের চিত্র পুরোটাই ভিন্ন। আমাদের দেশে ইন্ডাস্ট্রি ঋণের প্রবণতা অনেক বেশি ক্ষুদ্র ঋণের তুলনায়। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রি নেট গ্রাহকরা ঋণ নিয়ে যখন ফেরত দিতে চায় না তখন বিগ ফিশাররা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায়। এ ক্ষেত্রে ব্যাংক কোম্পানি আইনের পরিবর্তন এবং তা যথাযথ প্রয়োগের পরামর্শ দেন এই ব্যাংকার। সীমান্ত ব্যাংকের একজন প্রতিনিধি বলেন, গবেষণার জন্য যখন আমাদের কাছে মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে তখন অনেকেই আমাদের সঠিক তথ্য লুকিয়েছিল। অনেকেই নিজেদের সমস্যার কথা উপস্থাপন করতে চান না। এ ক্ষেত্রে ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের কাছে নিজেকে ভালো প্রমাণ করলেও সামগ্রিকভাবে ক্ষতির শিকার হয় ব্যাংকিং খাত। এ ছাড়া ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সব ব্যাংককে একই মাপকাঠিতে পরিমাপ না করার পরামর্শ দেন তিনি। কারণ, পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর ব্যাংক এবং অন্যান্য তফসিলি ব্যাংকের ঝুঁকির মাত্রা একেবারেই আলাদা। বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডের একজন প্রতিনিধি জানান, পদ্মা ব্যাংক এবং পিপলস লিজিংয়ের ঘটনায় আমরা বুঝতে পারি, তারা ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থ হয়েছে। তবে সব সময় ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার কথা চিন্তা না করে পরিচালকদের গুড গভর্নেন্সের বিষয়টিও মাথায় রাখা উচিত। এ ছাড়া অর্থঋণ আদালতে ১০-১২ বছর পর্যন্ত পড়ে থাকা মামলাগুলো দ্রম্নত নিষ্পত্তি করার জন্য একটি স্পেশাল ট্রাইবু্যনাল গঠনের পরামর্শ দেন তিনি। মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণকারী আরও একজন বলেন, রিস্ক ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ইচ্ছা না থাকলেও অনেক সময় পরিচালনা পর্ষদের অনুমতিতে ঋণ দেয় ব্যাংক। এ ক্ষেত্রে রিস্ক ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সিদ্ধান্ত কোনো কাজেই আসে না। ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, শুধু রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটি থাকলে সব সমস্যার সমাধান হবে না। সবার আগে কর্মীদের বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নয়ন প্রয়োজন। যেহেতু ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বিভাগের কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় না, সেহেতু খেলাপি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে তাদের দায়ী করা ঠিক নয় বলে মন্তব্য করেন ফারুক মঈনউদ্দীন। বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি প্রফেসর বরকত এ খোদা বলেন, ব্যাংকের মানিলন্ডারিং ইউনিটের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের যে রকম নিয়মিত বৈঠক এবং নিয়ন্ত্রণ করা হয়, ঠিক সেভাবেই রিস্ক ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি কমিটি করা উচিত।