মাছ চাষে নীরব বিপস্নব

প্রকাশ | ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
গত কয়েক যুগে বাংলাদেশে মাছ চাষে নীরব বিপস্নব হয়েছে। দেশটিতে প্রতিবছর মাছের উৎপাদন বাড়ছে ৯ শতাংশ হারে। ১৯৮৪ সালে যেখানে ১ লাখ ২০ হাজার টন মাছ উৎপাদন হতো ২০১৪ সালে তা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ টনে। উৎপাদিত এ মাছে দেশের মানুষের চাহিদা পূরণ হচ্ছে। উৎপাদনের পাশাপাশি দেশে একই সময়ে মাছ চাষের আওতা বেড়েছে। ২০০১ সালে ৩ লাখ ৬০ হাজার ৮৯৬ হেক্টর জমিতে মাছ চাষ হতো, ২০১৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৪৯৩ হেক্টরে। প্রতি হেক্টরে মাছের উৎপাদন ১ টন থেকে বেড়ে ২ দশমিক ২ টন হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। 'হারভেস্টিং প্রসপারিটি : টেকনোলজি অ্যান্ড প্রোডাক্টিভিটি ইন এগ্রিকালচার' শীর্ষক প্রতিবেদনটি বুধবার প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়েছে, বিশ্বের সাতটি দেশের মানুষের প্রাণিজ আমিষের অর্ধেকেরও বেশি আসে মাছ থেকে। প্রাণিজ আমিষের ৫৮ শতাংশ মাছ দিয়ে মিটিয়ে শীর্ষস্থানীয় দেশের কাতারে এখন বাংলাদেশ। যেখানে বিশ্বে গড়ে প্রাণিজ আমিষের ২০ শতাংশ আসে মাছ থেকে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিষ্টি পানির মাছ আহরণ ও চাষে বাংলাদেশের এই সাফল্য এসেছে অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে। মৎস্য চাষে বাংলাদেশে কিছু ঝুঁকিও তৈরি হয়েছে। দেশের ১২ শতাংশ মানুষ মাছ চাষের সঙ্গে জড়িত হলেও এই খাতে আর্থিক প্রণোদনা পান শুধু রপ্তানিকারকরা। চাষিরা তেমন কোনো সরকারি সহযোগিতা পান না। সামগ্রিকভাবে মৎস্য খাত কৃষির আওতায় পড়ে। কিন্তু মৎস্য চাষিরা কৃষি ঋণের মাত্র ১২ থেকে ১৫ শতাংশ পান। ধান ও অন্যান্য ফসল চাষের জন্য কৃষকরা ডিজেল ও বিদু্যতে ভর্তুকি পান। মাছ চাষিরা তা পান না। আরেকটি সমস্যা এ খাতের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিচ্ছে। মাছের খাবার ও অন্যান্য উপকরণ খরচের বিপরীতে যে দামে চাষিরা মাছ বিক্রি করেন তাতে তাদের লাভ তো দূরে থাক, অনেক ক্ষেত্রে লোকসান গুনতে হচ্ছে। বিশেষ করে থাই কই, তেলাপিয়া, রুই, পাঙ্গাশ মাছ চাষ করে চাষিরা লাভ-লোকসানের মাঝামাঝি ঝুলছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক দশকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অনেকে বেড়েছে। ১৯৯৬ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ দশশিক ২ শতাংশ, ২০০৬ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষির কর্মসংস্থান এখনও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। দেশটির কৃষি ব্যবস্থা প্রকৃতিনির্ভর। ৭০ ভাগ লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। দেশে মোট উৎপাদনের প্রায় ২৪ শতাংশ আসে কৃষি থেকে। কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধির হার ৪ শতাংশ। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো সবুজ বিপস্নবের ফলে তথা নানা রকম ফসলের জাত উন্নয়নে ৫০ বছরে দানাশস্যের ফলন বেড়েছে কয়েকগুণ। উচ্চফলনশীল ধান ও গমের জাতের সূচনার ফলে স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদন প্রায় তিনগুণ বেড়েছে। প্রযুক্তি প্রয়োগে কৃষির অন্যান্য শাখা তথা পোলট্রি, গবাদি পশু ও মৎস্য চাষেও উলেস্নখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। কৃষি গবেষণায় উদ্ভাবিত নতুন জ্ঞান ও প্রযুক্তিকে যথাযথভাবে প্রান্তিক চাষিদের কাছে পৌঁছানোর ওপর কৃষি উন্নয়ন অনেকাংশে নির্ভরশীল। দেশের গবেষণাগারে উদ্ভাবিত কৃষি প্রযুক্তির অধিকাংশই কৃষকের মাঠে প্রয়োগের আগে বা অব্যবহিত পরই জীবনকাল হারায়।