জ্বালানি তেলের সরবরাহ কমিয়ে আনতে চায় ওপেক

প্রকাশ | ১৬ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
যাযাদি ডেস্ক বৈশ্বিক অর্থনীতির শ্লথগতি এবং আগামী বছরে চাহিদা কমে যাওয়ার আশঙ্কায় উত্তোলন ও সরবরাহ আরও কমিয়ে আনতে চায় জ্বালানি তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর জোট ওপেক। উৎপাদক দেশগুলোর প্রাক্কলন প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আগামী ডিসেম্বরে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন ওপেক মহাসচিব মুহাম্মাদ বারকিনদো। খবর রয়টার্স। জ্বালানি তেলের বাজার চাঙা করতে কাজ করে যাচ্ছে ওপেক ও রাশিয়ার নেতৃত্বে ওপেকবহির্ভূত দেশগুলোর জোট ওপেক পস্নাস। জ্বালানি পণ্যটির উৎপাদন ও সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে দাম বৃদ্ধি করতে জানুয়ারি থেকে জোটভুক্ত দেশগুলোর দৈনিক সম্মিলিত উত্তোলন ১২ লাখ ব্যারেল কমিয়ে দিয়েছে। উত্তোলন ও সরবরাহ কমিয়ে দেয়ার এ চুক্তি আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত চলবে। যদিও এ কৌশল কার্যত বাজারের ওপর তেমন কোনো লক্ষণীয় প্রভাব ফেলতে ব্যর্থ হয়েছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই নতুন করে জ্বালানি তেলের সরবরাহ কমিয়ে দেয়ার ইঙ্গিত দিলেন ওপেক মহাসচিব। আগামী বছর জ্বালানি তেলের বিষয়ে নতুন করে পলিসি নির্ধারণ করতে চায় ওপেক পস্নাস জোট। এ লক্ষ্যে আগামী ৫-৬ ডিসেম্বর জোটের সম্মেলন আহ্বান করা হয়েছে। আগামী বছরের জ্বালানি তেলের বাজারে স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে এ সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন ওপেক মহাসচিব। তিনি মনে করেন, জ্বালানি তেলের সরবরাহ আরও কমিয়ে আনতে এ সম্মেলনে সব বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। দীর্ঘদিন ধরে জ্বালানি তেলের বাজারে মন্দা বজায় রয়েছে। এ অবস্থায় গত ১৪ সেপ্টেম্বরে জ্বালানি তেলের শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশ সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় জ্বালানি তেল ও গ্যাস উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠান আরামকোর দুটি স্থাপনায় ড্রোন হামলা হয়। এতে দেশটির দৈনিক উত্তোলন অর্ধেক কমে যায়। সে সময় সরবরাহ সংকটের আশঙ্কায় জ্বালানি পণ্যটির দাম হঠাৎ বৃদ্ধি পেলেও দ্রম্নত তা আবার নিম্নমুখী হয়ে যায়। বারকিনদো বলেন, আমরা ডিসেম্বরের জন্য অপেক্ষায় আছি। এ সময় আগামী বছরের জ্বালানি তেলের বাজারের প্রকৃত তথ্য পাওয়া যাবে। যার ওপর নির্ভর করে এবং বর্তমান অবস্থা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। জ্বালানি তেলের বাজার নিয়ে ওপেকের মাসভিত্তিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। এতে ২০২০ সালে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ১ শতাংশ থেকে কমে ৩ শতাংশে চলে আসার প্রাক্কলন করা হয়েছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে চলা অর্থনৈতিক শ্লথগতি ২০২০ সালেও থাকার সম্ভাবনা রয়েছে, যা বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি কমাতে ভূমিকা রাখবে। এদিকে ওপেক জোটের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আগামী বছরে জ্বালানি তেলের সরবরাহ বাড়ানোর সম্ভাবনা দেখছে জোটটি। যার ফলে জ্বালানি তেলের বাজারে জোটটির হিস্যা আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রাক্কলনে বলা হয়েছে, আগামী বছরে বিশ্বব্যাপী ওপেকের অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দৈনিক গড় চাহিদা দাঁড়াতে পারে ২ কোটি ৯৬ লাখ ব্যারেলে, যা চলতি বছর থেকে ১২ লাখ ব্যারেল কম। ওপেকের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে জোটটির দৈনিক গড় উত্তোলন ১৩ লাখ ২০ হাজার ব্যারেল কমে ২ কোটি ৮৪ লাখ ৯০ হাজার ব্যারেলে দাঁড়িয়েছিল। বিশেষ করে সৌদি আরবে হামলার পর দেশটির উত্তোলন বড় আকারে কমে যাওয়ায় গত মাসে জোটটির গড় উত্তোলন উলেস্নখযোগ্য পরিমাণে কমে যায়। যদিও সৌদি আরবের পক্ষ থেকে দ্রম্নত উত্তোলন সক্ষমতায় ফিরে আসার দাবি জানানো হয়। তবে ওপেক বলছে, গত মাসে দেশটির দৈনিক উত্তোলন আগস্টের তুলনায় ৬ লাখ ৬০ হাজার ব্যারেল কমেছে। এ সময় দেশটির দৈনিক উত্তোলন ছিল ৯১ লাখ ৩০ হাজার ব্যারেল। ওপেক তাদের প্রাক্কলন প্রতিবেদনে আরও জানিয়েছে, আগামী বছর জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা দৈনিক ১০ লাখ ৮০ হাজার ব্যারেল বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া এই সময়ে ওপেকবহির্ভূত দেশগুলোর পক্ষ থেকে জ্বালানি তেলের দৈনিক সরবরাহ ২২ লাখ ব্যারেল বৃদ্ধি পাবে বলেও জানানো হয়েছে।