বিজিএমইএ ভবন ভাঙার নতুন কার্যাদেশ চলতি সপ্তাহে

প্রকাশ | ১৯ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বিজিএমইএ ভবন -ফাইল ছ্ি‌ব
যাযাদি রিপোর্ট বাংলাদেশ তৈরি পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) ভবন ভাঙার জন্য নতুন করে চলতি সপ্তাহে কার্যাদেশ দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। চুক্তি অনুযায়ী কার্যাদেশ দেওয়ার পর ছয় মাসের মধ্যে বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে হবে। ভবনটি ভাঙতে সালাম অ্যান্ড ব্রাদার্সের দরপত্র ছিল ১ কোটি ৭০ লাখ টাকার। আর ফোর স্টার গ্রম্নপের দরপত্র ১ কোটি ৫৫ লাখ ৭০ হাজার টাকার। তবে শেষ মুহূর্তে সরে যাওয়ায় সালাম অ্যান্ড ব্রাদার্সের কাছ থেকে ১০ শতাংশ হারে ১৭ লাখ টাকা কেটে নিয়েছে রাজউক। তাতে ২ লাখ টাকা বাড়তি পেল রাজউক। যে প্রতিষ্ঠান ভবনটি ভাঙবে তারা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) চুক্তির টাকা দেবে। বিনিময়ে ভবনের সমস্ত সম্পদ তারা নিয়ে যাবে। রাজউকের মূল্যায়ন অনুযায়ী বিজিএমইএ ভবনের মূল্য হবে প্রায় আড়াই কোটি টাকা। বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কার্যাদেশ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সালাম অ্যান্ড ব্রাদার্স ১৫ অক্টোবর ভবন ভাঙার কার্যক্রম থেকে সরে যায়। এরপর নতুন করে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের ফোর স্টার গ্রম্নপকে। বিজিএমইএ ভবন ভাঙার সবশেষ অবস্থা সম্পর্কে রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী ও হাতিরঝিল প্রকল্পের পরিচালক এ এস এম রায়হানুল ফেরদৌস বলেন, 'বিজিএমইএ ভবন ভাঙা নিয়ে ঝামেলা হচ্ছিল। আমরা প্রথম দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দিয়েছিলাম। কিন্তু যখন তাদের কাছে চুক্তিপত্র চাইলাম, তখন তারা সেটা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে। ১৬ অক্টোবর দ্বিতীয় দরদাতা প্রতিষ্ঠান ফোর স্টার গ্রম্নপকে কাজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কার্যাদেশ পাওয়ার পর তারা হয়তো চলতি সপ্তাহে চুক্তিপত্র দাখিল করবে।' তাহলে ভবন ভাঙতে আরও কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'হ্যাঁ আমাদের একটু সময়ক্ষেপণ হলো। তবে কার্যাদেশ দেওয়ার পর ছয় মাসের মধ্যে ভবন ভাঙতে হবে। ভবনটি ভাঙা হবে ম্যানুয়ালি। কিছু হয়তো যন্ত্রও ব্যবহৃত হবে।' গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে পাশ কাটিয়ে বেগুনবাড়ি খালের একাংশ ভরাট করে ২০০৬ সালে নির্মাণ করা হয় বেইজমেন্টসহ ১৬তলা বিজিএমই ভবন। জলাধার আইন লঙ্ঘন ও রাজউকের অনুমোদন ছাড়াই বিজিএমইএ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে উলেস্নখ করে ২০১০ সালের ২ অক্টোবর ইংরেজি দৈনিক 'নিউএজ' পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে তা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ডি এইচ এম মনিরউদ্দিন আদালতে উপস্থাপন করেন। এর পরদিন বিজিএমইএ ভবন কেন ভাঙার নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ বিজিএমইএ ভবন ভাঙার রায় দেন। রায়ে বলা হয়, বিজিএমইএ ভবন হাতিরঝিল প্রকল্পের ক্যান্সার। ভবনটি নির্মাণের আগে ওই স্থানের জমি যে অবস্থায় ছিল সে অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে নির্দেশ দেওয়া হয়। বিজিএমইএর খরচে ভবনটি ভাঙতে বলা হয়। ওই বছরের ৫ এপ্রিল বিজিএমইএর আবেদনে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন। পরবর্তী সময়ে কয়েক দফায় আপিল বিভাগ স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়ান। ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ হাইকোর্টের ৬৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পেয়ে লিভ টু আপিল করে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ। ২০১৬ সালের ২ জুন ওই আপিল খারিজ হয়ে যায়। এরপর বিজিএমইএ রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করে। ২০১৭ সালের ৪ মার্চ তখনকার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের বেঞ্চ বিজিএমইএর রিভিউ আবেদনও খারিজ করে দেন। ভবন সরিয়ে নিতে কতদিন সময় লাগবে বিজিএমইএকে তা লিখিতভাবে আবেদন করতে বললে তারা তিন বছর সময় চায়। ওই বছরের ১২ মার্চ আদালত ছয় মাস সময় দেন। ওই সময়ে ভবন না সরানোয় আরো সাত মাস সময় পায় বিজিএমইএ। ২০১৮ সালের ২৭ মার্চ শেষ সুযোগ হিসেবে মুচলেকা দেওয়ায় আরো এক বছর সময় বাড়ান সর্বোচ্চ আদালত। মুচলেকার এক বছরের মেয়াদ শেষ হয়ে যায় চলতি বছরের ১২ এপ্রিল।