সাগরে ভাসা পুঁজিবাজার কর্তারা প্রমোদ ভ্রমণে

প্রকাশ | ০৯ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
টানা দরপতনে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীরা চোখে সরিষা ফুল দেখছেন। আর প্রশিক্ষণের নামে প্রমোদ ভ্রমণে কক্সবাজার যাচ্ছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ও কমিশনারসহ শতাধিক কর্মকর্তা। মৃতপ্রায় পুঁজিবাজারে এ মুহূর্তে দরকার মার্কেট সাপোর্ট। দরকার আস্থা ও তারল্য সংকট কাটিয়ে উঠার পদ্ধতি বের করা। কিন্তু এই পুঁজিবাজারকে স্বাভাবিক করার উদ্যোগ না নিয়ে উল্টো শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত তিনদিনের জন্য প্রমোদ ভ্রমণে কক্সবাজার আছেন কর্মকর্তারা। এজন্য খরচ ধরা হয়েছে প্রায় অর্ধকোটি টাকা। বিএসইসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারির পর থেকে থেমে থেমে চলা দরপতন ২০১০ সালের চেয়েও মহাধসে পরিণত হয়েছে। এই ধসে বাজার মূলধন অর্থাৎ বিনিয়োগকারীদের পুঁজি উধাও সাড়ে ৬০ হাজার কোটি টাকা। লেনদেন ১ হাজার কোটি থেকে কমে ৩০০ কোটি টাকার নিচে অবস্থান করছে। তাতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাজার ছেড়েছেন। যারা এখনো বাজারে রয়েছেন তারাও নিষ্ক্রিয়। ফলে ব্রোকারেজগুলো লোকসান পোহাতে না পেরে শাখা অফিসগুলো বন্ধ করে দিচ্ছে। হাজার হাজার অফিস কর্মীদের ছাঁটাই করা হয়েছে। বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের নেতা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, 'লেনদেন সংকটে থাকা পুঁজিবাজারকে আইসিবিসহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠান লাইফ সাপোর্ট দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। আর সে সময় কমিশনের চেয়ারম্যানসহ শতাধিক কর্মকর্তা লাখ লাখ টাকা খরচ করে কক্সবাজারে প্রমোদ ভ্রমণে যাচ্ছেন।' তিনি আরও বলেন, 'এই কমিশন পুঁজিবাজার ভালো হোক, তা চায় না। ভ্রমণ না করে এই টাকা বিনিয়োগ করে পুঁজিবাজারের লাইফ সাপোর্ট দিলে বাজার ভালো হতো। সেটা না করে, উল্টো বিনোদনে যাচ্ছে, ফুর্তি করতে যাচ্ছে।' ডিএসইর একাধিক সদস্য ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রোম যখন আগুনে পুড়ছিল, সম্রাট নিরো তখনো বাঁশি বাজাচ্ছিলেন। আগুনে পুড়ে যাওয়া ঘটনার দিকে তখন সম্রাটের কোনো ভ্রম্নক্ষেপ ছিল না। ঠিক তেমনি পুঁজিবাজারে পুঁজি হারিয়ে বিনিয়োগকারী এবং স্টক এক্সচেঞ্জগুলো ধুঁকে ধুঁকে মরছে কিন্তু কমিশন সেই দিকে নজর দিচ্ছে না। বরং তারা ব্যস্ত রয়েছে প্রমোদ ভ্রমণে। এটা কোনো অভিভাবক করতে পারে?' এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান বলেন, 'কমিশনের অফিসাররা দুটি প্রোগ্রামে কক্সবাজার যাচ্ছেন। একটি মন্ত্রণালয়ের শুদ্ধাচার প্রোগ্রাম ও আরেকটি মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়ে কর্মশালা। এটা কোনো প্রমোদ ভ্রমণ নয়। পূর্ব নির্ধারিত সরকারি প্রোগ্রাম।' এ দুটি প্রোগ্রাম ঢাকায় না করে, কক্সবাজার কেন করা হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'এটা কোনো বিষয় না। আমরা তো প্রশিক্ষণে যাচ্ছি।' এদিকে, বিএসইসিকে অনুসরণ করেই পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক দরপতনে যখন বিনিয়োগকারীরা দিশেহারা- তখনই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) একটি প্রতিনিধি দল কনফারেন্সের নামে প্রমোদ ভ্রমণে চীনে গেছেন। এ নিয়ে খোদ ডিএসইর সদস্য ও পরিচালকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।