হতাশার শেয়ার বাজার

মধ্য মানের শেয়ারে কিছুটা চাহিদা রয়েছে

প্রকাশ | ১৬ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
কিছুটা টালমাটাল করে আবারও টানা দরপতনের মধ্যে ফিরে গেছে দেশের শেয়ারবাজার। এ পতনের বাজারে মধ্য মানের বা 'বি' গ্রম্নপের প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের কিছুটা চাহিদা বেড়েছে। ফলে সপ্তাহের ব্যবধানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেনে 'বি' গ্রম্নপের প্রতিষ্ঠানের অংশ বেড়েছে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে চারভাগে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে সব থেকে ভালো মানের কোম্পানিগুলোকে নিয়ে করা হয় 'এ' গ্রম্নপ। ১০ শতাংশ বা তার বেশি লভ্যাংশ দেওয়া কোম্পানি 'এ' গ্রম্নপে স্থান পায়। আর যেসব কোম্পানি ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দেয় তাদের স্থান হয় 'বি' গ্রম্নপে। এই গ্রম্নপে থাকা কোম্পানিগুলোকে মধ্যম সারির প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য করা হয়। অন্যদিকে শেয়াহোল্ডাদের কোনো ধরনের লভ্যাংশ না দেওয়া কোম্পানিগুলোকে নিয়ে করা হয় 'জেড' গ্রম্নপ। এ গ্রম্নপের প্রতিষ্ঠানগুলোকে 'পচা কোম্পানি' হিসেবে অভিহিত করা হয়। আর নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে নিয়ে করা হয় 'এন' গ্রম্নপ। তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে যে লেনদেন হয়েছে তার ১২ দশমিক ৭৭ শতাংশেই ছিল 'বি' গ্রম্নপের প্রতিষ্ঠানের। আগের সপ্তাহে মোট লেনদেনে 'বি' গ্রম্নপের প্রতিষ্ঠানের অংশ ছিল ১০ দশমিক ২২ শতাংশ। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে মোট লেনদেনে 'বি' গ্রম্নপের প্রতিষ্ঠানের অবদান বেড়েছে আড়াই শতাংশের ওপরে। লেনদেনে মধ্য সারির প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের অবদান বাড়ায় কমেছে ভালো বা 'এ' গ্রম্নপের প্রতিষ্ঠানের অবদান। গত সপ্তাহজুড়ে মোট লেনদেনে এই গ্রম্নপের প্রতিষ্ঠনগুলোর অবদান দাঁড়িয়েছে ৭৯ দশমিক ৫০ শতাংশ, যা গত সপ্তাহে ছিল ৮০ দশমিক ৫২ শতাংশ। ভালো কোম্পানির পাশাপাশি লেনদেনে 'এন' এবং 'জেড' গ্রম্নপের প্রতিষ্ঠানের অবদানও কমেছে। এর মধ্যে 'এন' গ্রম্নপের প্রতিষ্ঠানগুলোর অবদান ৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশে। আর 'জেড' গ্রম্নপের প্রতিষ্ঠানের অবদান ২ দশমিক ১৮ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৪৮ শতাংশে। মধ্য মানের কোম্পানির শেয়ারের লেনদেন বাড়লেও গত সপ্তাহজুড়ে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দরপতন হয়েছে। যে কারণে ডিএসইর সবকটি মূল্য সূচকের পতন হয়েছে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে গত সপ্তাহজুড়ে লেনদেনে অংশ নেয়া ৩৫৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১০৬টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২২২টির। আর ২৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমায় চার হাজার কোটি টাকার ওপরে মূলধন হারিয়েছে ডিএসই। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৫৪ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল তিন লাখ ৫৯ হাজার ১১০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে চার হাজার ১৬০ কোটি টাকা। এদিকে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৬১ দশমিক ৫৫ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ২৯ শতাংশ। আগের সপ্তাহে এ সূচকটি বাড়ে ৮৯ দশমিক শূন্য ১ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৯০ শতাংশ। অপর দুটি সূচকের মধ্যে গত সপ্তাহে ডিএসই-৩০ আগের সপ্তাহের তুলনায় কমেছে ১৯ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ১৯ শতাংশ। আগের সপ্তাহে এ সূচকটি কমে ৩০ দশমিক ১৭ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৮৫ শতাংশ। আর গত সপ্তাহে ডিএসই শরিয়াহ্‌ সূচক কমেছে ৮ দশমিক ৬৫ পয়েন্ট বা দশমিক ৭৯ শতাংশ। আগের সপ্তাহে এ সূচকটি বাড়ে ১৪ দশমিক শূন্য ৯ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৩১ শতাংশ। সব সূচকের পতন হলেও সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে গড় লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। তবে গড় লেনদেন তিনশ কোটি টাকার ঘরেই আটকে আছে। গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৩৪৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৩৩১ কোটি ২ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে ১৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা বা ৫ দশমিক ৬০ শতাংশ। আর গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৩৯৮ কোটি ১৮ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় ১ হাজার ৬৭৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। সে হিসাবে মোট লেনদেন কমেছে ২৭৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা। মোট লেনদেন কমার কারণ গত সপ্তাহের রোববার ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে শেয়ারবাজার বন্ধ থাকায় এক কর্যদিবস কম লেনদেন হয়। এদিকে পতনের বাজারে গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অংকে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ন্যাশনাল টিউবসের শেয়ার। কোম্পানিটির ৪৯ কোটি ১২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা সপ্তাহজুড়ে হওয়া মোট লেনদেনের ৪ দশমিক ৫১ শতাংশ।