প্রেসিডেন্ট নির্বাচন

গাড়িবহরে অগ্নিকান্ড ও হামলায় ভোটগ্রহণ শেষ শ্রীলংকায়

গণনা শেষে সোমবার ফল ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে মুসলমান ও তামিল ভোটাররা সব হিসাব পাল্টে দিতে পারেন

প্রকাশ | ১৭ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
কলম্বোয় একটি ভোট কেন্দ্রের সামনে ভোটাররা
মুসলমান ভোটারদের গাড়িবহরে অগ্নিকান্ড ও বন্দুক হামলা এবং সেনাবাহিনী কর্তৃক ভোট দিতে না দেয়ার কয়েকটি অভিযোগ ছাড়া মোটামুটি সুষ্ঠুভাবেই শনিবার শ্রীলংকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। শনিবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় শুরু হয়ে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চলে এই ভোট গ্রহণ। দক্ষিণ এশিয়ার এ দ্বীপরাষ্ট্রে এটি অষ্টম এবং ২০০৯ সালে কয়েক দশকের গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর তৃতীয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ভোট গণনা শেষে আগামীকাল (সোমবার) ফল ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে। সংবাদসূত্র : সাউথ এশিয়ান মনিটর, গার্ডিয়ান এবারের নির্বাচনে মোট ৩৫ জন প্রার্থী অংশ নিয়েছেন। তবে দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা ইস্টার সানডের হামলার পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ায় নির্বাচনে না দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। ফলে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় ক্ষমতাসীন 'ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি'র (ইউএনপি) প্রার্থী সাজিথ প্রেমাদাসা আর বিরোধী দল 'শ্রীলংকা পিপলস ফ্রন্ট'র (এসএলপিপি) গোতাবাইয়া রাজাপাকসের মধ্যে। এবার নিবন্ধিত ভোটার সংখ্যা ছিল এক কোটি ৬০ লাখ। মুসলমান ও তামিল ভোটাররা নির্বাচনী ফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন বলে গণমাধ্যমে বারবার বলা হয়েছে। শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের নিয়ম অনুযায়ী, ভোটাররা সর্বোচ্চ তিনজন প্রার্থীকে পছন্দের ক্রম অনুযায়ী বেছে নেয়ার সুযোগ পান। কোনো প্রার্থী মোট ভোটের ৫০ শতাংশের বেশি পেলে তিনি এমনিতেই জয়ী হবেন; সে রকম কিছু না ঘটলে দেখা হবে ভোটারদের পছন্দের ক্রম। গণনা শেষে আগামীকালের মধ্যেই লংকানরা কাকে তাদের প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেছে নিয়েছেন, তা জানা যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চলতি বছরের এপ্রিলে ইস্টার সানডেতে ভয়াবহ সিরিজ বোমা হামলায় কেঁপে ওঠে বৌদ্ধ প্রধান রাষ্ট্রটি, যাতে নিহত হন আড়াই শতাধিক মানুষ। ওই হামলার ক্ষত এখনো তাড়া করে ফেরে লংকানদের। এর দায় স্বীকার করে আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস। ভয়াবহ ওই হামলার পর উত্তেজিত জনতার হামলা-অগ্নিসংযোগের শিকার হন সে দেশের মুসলমানরা। সে কারণে এবারের নির্বাচনে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী গোতাবাইয়া দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা মাহিন্দা রাজাপাকসের ভাই। অন্যদিকে, ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী সাজিথ প্রেমাদাসা সে দেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট রানাসিংহে প্রেমাদাসার ছেলে। সংখ্যালঘু তামিল ও মুসলমান সম্প্রদায়ের কাছে তিনি জনপ্রিয়। রানাসিংহে প্রেমাদাসা ১৯৯৩ সালে তামিল গেরিলাদের আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত হন। বিশ্লেষকদের মতে, ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে শ্রীলংকার নির্বাচন নিয়ে এ অঞ্চলের দুই প্রভাবশালী দেশ ভারত ও চীনের আগ্রহ রয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী সাজিথ প্রেমাদাসাকে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চায় নরেন্দ্র মোদির সরকার। অন্যদিকে, বেইজিংয়ের প্রত্যাশা বিরোধী দলের প্রার্থী গোতাবায়া রাজাপাকসের বিজয়। মুসলমান ভোটারদের বাসে বন্দুক হামলা এদিকে, শনিবার ভোট গ্রহণের কয়েক ঘণ্টা আগে মুসলমান ভোটারদের বহনকারী গাড়িবহর থামিয়ে গুলি চালিয়েছে বন্দুকধারীরা। দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকা তান্তিরিমালে এ হামলা চালানো হয়। তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শতাধিক গাড়ির একটি বহরকে ভোটকেন্দ্রে পৌঁছাতে বাধা দিতে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে দেয় হামলাকারীরা। এরপর বন্দুক হামলা চালানো হয়। পুলিশ বলছে, উপকূলীয় শহর পুত্তালাম থেকে বাসের বহর নিয়ে পার্শ্ববর্তী মানার জেলায় যাচ্ছিলেন ওই মুসলমান ভোটাররা। তারা ওই জেলার ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত। হামলার শিকার হওয়ার পর পুলিশের একটি দল সেখানে গিয়ে যাত্রীদের ভোটকেন্দ্র পর্যন্ত পাহারা দিয়ে নিয়ে যায়। এছাড়া পুলিশ নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ করেছে, সেনাবাহিনী অবৈধভাবে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। এর ফলে বাসিন্দারা ভোটকেন্দ্রে অবাধে যাতায়াত করার ক্ষেত্রে অসুবিধায় পড়ে। ভোটারদেরও অভিযোগ, নির্বাচনকে সামনে রেখে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে সেনাবাহিনী।