ব্যাংক নেই, প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভরসা এজেন্ট ব্যাংকিং

৪ আমানত ছাড়াল ছয় হাজার কোটি টাকা ৪এজেন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৫৩১ জন, বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৮২ শতাংশ ৪গ্রাহক সংখ্যা ৩৯ লাখ

প্রকাশ | ১৯ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাংক নেই, কিন্তু ব্যাংকিং সেবা পাচ্ছেন গ্রাহকরা। কেউ ঋণ নিচ্ছেন, কেউ আমানত রাখছেন, কেউ এর মাধ্যমে পাচ্ছেন সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় দেওয়া ভাতা। গ্রামে ব্যাংকের শাখা না থাকলেও সেখানে এমন ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে এজেন্ট ব্যাংকিং। বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা-সংক্রান্ত নীতিমালা জারি করে। এরপর সাড়ে পাঁচ বছরে গ্রামীণ জনপদে আস্থা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে এ ব্যাংকিং সেবা। দ্রম্নত সেবা পাওয়ায় এতে গ্রাহক এবং আমানতের পরিমাণ দুই-ই বাড়ছে গুণিতক হারে। এ সময়ের মধ্যে আমানত দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ১৬৯ কোটি টাকা আর গ্রাহক বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৩৯ লাখ। সম্প্রতি এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের কার্যক্রম নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ত্রৈমাসিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গত বৃহস্পতিবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রামের প্রত্যন্ত এলাকার যে কেউ যখন তখন ইচ্ছা করলেই লেনদেন করতে পারছেন। যে কোনো প্রয়োজনে দরকার হলে অল্প সময়েই টাকা পাচ্ছেন। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ব্যয়ও সাশ্রয়ী, নিরাপদ ও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর। তাই প্রতিনিয়ত এর প্রসার ঘটছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন বলছে, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের পরিমাণও বাড়ছে। আর দেশে এখন পর্যন্ত ২২টি ব্যাংক লাইসেন্স পেলেও ১৯টি এ সেবা চালু করেছে। ফলে প্রবাসীদের অর্থ পাঠানোও সহজ হচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে এ সেবার এজেন্ট ছিল তিন হাজার ৫৮৮ জন। এক বছরের ব্যবধানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৫৩১ জন। এ সময় এজেন্ট বেড়েছে ৮২ শতাংশের বেশি। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে আউটলেট ছিল পাঁচ হাজার ৩৫১টি, বর্তমানে রয়েছে ৯ হাজার ৩৯১টি। এক বছরে বেড়েছে সাড়ে ৭৫ শতাংশ। একই সময়ে হিসাব বেড়েছে ১২৩ শতাংশ। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে হিসাব ছিল ১৭ লাখ ৭৭ হাজার ৪০০টি, এ বছর সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৯ লাখ ৬৪ হাজার ৩৪৬টি। একই সময়ে আমানত জমা বেড়েছে ২০৬ শতাংশ। গত বছর সেপ্টেম্বরে জমা ছিল দুই হাজার ১২ কোটি টাকা, চলতি বছর সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে হয়েছে ছয় হাজার ১৬৯ কোটি টাকা। অপর দিকে, গত তিন মাসে এজেন্ট বেড়েছে ৫১৮ জন, আউটলেট ৭২০টি গ্রাহক হিসাব পাঁচ লাখ ৪৭ হাজার ৬৭৪টি এবং আমানত জমা বেড়েছে ৮৮৫ কোটি টাকা। প্রতিবেদনের তথ্য আরও বলছে, এ সেবায় ১৭ লাখ ৩৮ হাজার গ্রাহক নিয়ে শীর্ষে রয়েছে ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক। এরপরই ব্যাংক এশিয়া তৈরি করেছে ১২ লাখ সাত হাজার। সেবাটি চালুর অল্প দিনেই ইসলামী ব্যাংক পেয়েছে তিন লাখ ২৮ হাজার গ্রাহক। আর শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে এ ধরনের সেবার হিসাব খোলা হয়েছে প্রায় পাঁচ গুণ বেশি। ফলে এর মাধ্যমে ব্যাংক সেবা যে গ্রামে পৌঁছে গেছে, তা প্রতীয়মান হয়। আবার নারী হিসাবধারীর তুলনায় পুরুষ হিসাবধারীর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ। শুধু গ্রাহক হিসাবের দিক থেকে ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক শীর্ষে থাকলেও এজেন্ট ও আউটলেট বিস্তৃতিতে ব্যাংক এশিয়া শীর্ষে অবস্থান করছে। ব্যাংকটির আউটলেট তিন হাজার ১৯৫টি, যা ডাচ-বাংলার তিন হাজার ১২৩টি। ইসলামী ব্যাংকের ৬৪৬টি ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের আউটলেট ৫৬৯টি। তবে সবচেয়ে বেশি আমানত পেয়েছে আল-আরাফাহ্‌ ইসলামী ব্যাংক। এরপরই ডাচ্‌-বাংলা, ব্যাংক এশিয়া ও ইসলামী ব্যাংক। আর এজেন্টের মাধ্যমে আট ব্যাংক বিতরণ করেছে ৩০৫ কোটি টাকার ঋণ। এর মধ্যে ব্যাংক এশিয়া একাই দিয়েছে ২৩১ কোটি টাকা। সিটি ব্যাংক দিয়েছে ৩৬ কোটি টাকা, ব্র্যাক ব্যাংক ২০ কোটি টাকা। এজেন্টদের মাধ্যমে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ১১ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকার প্রবাসী আয় এসেছে। এর মধ্যে ডাচ্‌-বাংলা চার হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা, ব্যাংক এশিয়া তিন হাজার ১৪৬ কোটি টাকা, আল-আরাফাহ্‌? ইসলামী ব্যাংক এক হাজার ৫৭১ কোটি টাকা, ইসলামী ব্যাংক এক হাজার ৭৮২ কোটি টাকা এনেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এজেন্ট ব্যাংকিং বিকাশের অন্যতম কারণ হলো আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ও ব্যয়সাশ্রয়ী সেবা প্রদান। এজেন্ট আউটলেটে একজন গ্রাহক সহজেই তার বায়োমেট্রিক বা হাতের আঙুলের স্পর্শের মাধ্যমে হিসাব পরিচালনা করতে পারেন। গ্রামীণ জনপদের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে এজেন্ট ব্যাংকিং তাই কার্যকরী একটি উদ্যোগ বলে বিবেচিত হচ্ছে। এ জন্য ব্যাংকগুলোও তাদের এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম প্রতিনিয়ত প্রসারিত করছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনাসংক্রান্ত নীতিমালা জারি করে।