সবজি রপ্তানিতে কচ্ছপ গতি

দেশের রপ্তানি আয় ও পণ্য বহুমুখীকরণ নিয়ে সরকার প্রণোদনা দিলেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয় রপ্তানিকারকদের। তবে এসব প্রতিবন্ধকতার পরও দেশের সবজি রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন বিমান ভাড়া সহনীয় করা গেলে সবজি ও ফলমূল রপ্তানি তিন গুণ বাড়বে

প্রকাশ | ০১ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

ইমদাদ হোসাইন
রপ্তানি আয় বাড়াতে সরকারি উদ্যোগ কাজে আসছে ধীরে ধীরে। রপ্তানি আয়ের সব খাতেই প্রবৃদ্ধি নিম্নমুখী। বাংলাদেশ কৃষিনির্ভর দেশ হওয়ায় সবজি রপ্তানিও বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম খাত হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতায় এ খাতের রপ্তানিতেও নেই তেমন কোনো আশার আলো। রপ্তানি উন্নয়ন বু্যরোর (ইপিবি) সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্যমতে, এ বছর সবজি রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১১২ কোটি ডলার। তিন মাসে (সেপ্টেম্বর) রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৬ কোটি ৭০ রাখ ডলার। অথচ রপ্তানি হয়েছে ২৬ কোটি ২৫ লাখ ডলারের। গত বছরের একই সময়ে রপ্তানি আয় ছিল ২৯ কোটি ১৮ লাখ ৩০ হাজার ডলার। গত বছরের চেয়ে এ বছরের রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি কমেছে ১০ দশমিক শূন্য তিন শতাংশ। রপ্তানিকারকেরা জানান, বাংলাদেশের সবজি রপ্তানির ৪৫ শতাংশ যায় ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোতে। এর পরই বেশি যায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। এ দেশগুলোতে সাধারণত কচুর লতি, কচু, পটোল, ঝিঙে, শসা, কাঁকরোল, বরবটি, শিম, লাউসহ অন্যান্য সবজি রপ্তানি হয়ে থাকে। ইপিবির তথ্য বলছে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে সবজি রপ্তানি বাড়ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সবজি রপ্তানি হয় সৌদি আরবে। গেল অর্থবছরে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে যত সবজি রপ্তানি হয়, তার প্রায় অর্ধেকেই গেছে এই দেশটিতে। সংযুক্ত আরব আমিরাতও বাংলাদেশি সবজির বড় বাজার। রপ্তানিকারকেরা বলছেন, কিছু তাজা তরিতরকারি সারা বছরই রপ্তানি হয়। আর কিছু তরিতরকারি রপ্তানি হয় বিভিন্ন মৌসুমে। তবে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে মৌসুমি ফল ও সবজির কদর বেশি। মধ্যপ্রাচ্যের কাতার, বাহরাইনেও বাংলাদেশি সবজির যথেষ্ট চাহিদা আছে। দেশের সবজির বড় বাজার ইউরোপের দেশগুলো। তবে রপ্তানি হওয়া সবজি ও পানের চালানে কয়েক দফা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার অস্তিত্ব পাওয়ার পর এসব দেশ বাংলাদেশের সবজি আমদানিতে এক ধরনের সতর্ক অবস্থায় আছে। আবার বাংলাদেশের পান রপ্তানির ওপর ২০১৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল ইইউ। অবশ্য সে সময় ইউরোপের দেশগুলোতে পান রপ্তানি না হলেও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বেশ পান রপ্তানি হচ্ছে। মূলত পানের রপ্তানি টিকিয়ে রেখেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। দেশের রপ্তানি আয় ও পণ্য বহুমুখীকরণ নিয়ে সরকার প্রণোদনা দিলেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয় রপ্তানিকারকদের। তবে এসব প্রতিবন্ধকতার পরও দেশের সবজি রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন বিমান ভাড়া সহনীয় করা গেলে সবজি ও ফলমূল রপ্তানি তিন গুণ বাড়বে। সম্প্রতি রপ্তানি উন্নয়ন বু্যরোর প্রকাশিত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ইউরোপের বাজারে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় দেশের সবজি রপ্তানি বাড়ার কথা। উদ্যোক্তারা জানান, শিম, বেগুন, বরবটি, পটোল, নানা ধরনের সবজির বেশ কদর আছে ইউরোপের বাজারে। একে অবলম্বন করে দুই দশক ধরে সবজি রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপের বিভিন্ন বাজারে। তবে ২০১৫ সালে পোকা-মাকড় ও কীটনাশকের উপস্থিতি পাওয়ায় এসব সবজিকে নন-কমপস্নায়েন্স ঘোষণা করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এর পরই সেখানে বন্ধ হয়ে যায় রপ্তানি। তবে চার বছর বন্ধ থাকার পর গত সেপ্টেম্বর থেকে আবারও ইউরোপের বাজারে সবজি পাঠানো শুরু করেছে দেশের সবজি রপ্তানিকারকরা। তারা জানান, পানসহ কয়েকটি শাকসবজিতে কীটনাশক পাওয়া যাওয়ায় সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিজ থেকেই দেশের সবজি রপ্তানি বন্ধ রাখে। এসব সমস্যা রপ্তানিকারকরা সচেতনভাবে সমাধান করার ফলে আবারও রপ্তানি বাজার খুলে দেওয়া হয়। এরই মধ্যে এর সুফলও আসতে শুরু করেছে। একজন রপ্তানিকারক জানান, রপ্তানিকারকরা পরিবহণ খরচে এবং বিমানের কার্গোতে চাহিদামতো জায়গা না পাওয়ায় সম্ভাবনার পুরোটা কাজে লাগাতে পারছেন না। বর্তমানে ঢাকা-লন্ডন সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করে। তবে সেখানে জায়গা পেতে দেড় গুণ বেশি ভাড়া গুনতে হয় কাঁচামাল ও সবজি রপ্তানিকারকদের।