দেশে টায়ার শিল্পে বিনিয়োগ বাড়ছে

ৃ অ্যাপেক্স হুসেন টায়ার এবং গাজী টায়ার বর্তমানে দেশে বড় বাস ও ট্রাকের টায়ারের ৫ শতাংশ চাহিদা পূরণ করছে। ৃ জিপিএইচ ইস্পাত এবং আরও কয়েকটি বড় কোম্পানিও টায়ার উৎপাদনে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে। ৃ যমুনা গ্রম্নপ, মেঘনা গ্রম্নপ এবং সিয়াট বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ নিয়ে শিগগির বাজারে আসছে।

প্রকাশ | ০৮ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

আহমেদ তোফায়েল
দেশে স্থানীয়ভাবে কিছু দেশি ও বিদেশি কোম্পানি টায়ার শিল্পে বিনিয়োগ বাড়াতে শুরু করেছে। আগামী বছরের মধ্যে কয়েকটি বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান টায়ারের বড় উৎপাদনে যাচ্ছে। অ্যাপেক্স হুসেন টায়ার এবং গাজী টায়ার বর্তমানে দেশে বড় বাস ও ট্রাকের টায়ারের ৫ শতাংশ চাহিদা পূরণ করে আসছে। আর বাকি ৯৫ শতাংশ আমদানি করে চাহিদা মেটানো হচ্ছে। দেশীয় উদ্যোক্তারা বলছেন 'স্থানীয় উৎপাদন উৎসাহিত করতে টায়ার আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা উচিত।' টায়ার শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এখন যমুনা গ্রম্নপ, মেঘনা গ্রম্নপ এবং সিয়াট বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ নিয়ে বাজারে প্রবেশ করছে। এছাড়া জিপিএইচ ইস্পাত এবং আরও কয়েকটি বড় কোম্পানিও টায়ার উৎপাদনে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে। তারা দেশের চাহিদার বেশি টায়ার উৎপাদন করতে প্রস্তুত। বাজারে তাদের প্রবেশের ফলে বছরে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা দেশে রাখা সম্ভব হবে। আগে যা আমদানিতে ব্যয় হতো এবং এ খাতে ৫ হাজারেরও বেশি লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। ইতিমধ্যে যমুনা টায়ারস এবং রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড বড় বাস, ট্রাক, যাত্রী পরিবহণের এবং মোটরসাইকেলের টায়ার উৎপাদন করতে ২ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করেছে। কয়েক মাসের মধ্যে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাবে প্রতিষ্ঠানটি। অন্যদিকে, মেঘনা গ্রম্নপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান মেঘনা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড সাইকেল, বড় বাস ও ট্রাকের টায়ার উৎপাদনের জন্য ৫০০ কোটি টাকার নতুন পস্ন্যান্ট স্থাপন করেছে। প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন 'আমদানি করা টায়ারের উপর বাংলাদেশের নির্ভরতা তাদের এ শিল্পে আসার অনুপ্রেরণা'। মেঘনা বর্তমানে মোটরসাইকেল, ইজি বাইক, সিএনজিচালিত তিন চাকার গাড়ি, হালকা ট্রাক এবং রিকশার টায়ার তৈরি করছে। সংস্থাটি সাইকেলের টায়ার এবং টিউব রফতানিও করছে। অ্যাপেক্স হুসেন গ্রম্নপ দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে এই সেক্টরে রয়েছে এবং এটি বর্তমানে মোটরগাড়ির টায়ার উৎপাদন করে। জানা গেছে, বাংলাদেশে টায়ার কারখানা করছে ভারতের আরপিজি গ্রম্নপ। কোম্পানিটি তাদের সিয়াট ব্র্যান্ডের টায়ার বাংলাদেশে তৈরি করবে। এতে এখনকার চেয়ে বেশ কম দামে সিয়াট টায়ার কিনতে পারবেন ক্রেতারা। চলতি বছর এ কারখানাটি উৎপাদনে যাবে বলে জানিয়েছে সিয়াট। সিয়াট বাংলাদেশে কারখানা করছে এ কে খান অ্যান্ড কোম্পানির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে। এজন্য সিয়াট এ কে খান লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি গঠন করেছে। এ কোম্পানি বাংলাদেশে মোট ৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার বিনিয়োগ করছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫০০ কোটি টাকার বেশি। সিয়াট টায়ার ভারত থেকে টায়ার আমদানি করতে এখন বেশি খরচ পড়ে। দেশে উৎপাদনে গেলে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ দাম কমবে। দেশে এখন সিয়াট গ্রিপ নামের মোটরবাইকের একটি টায়ারের দাম প্রায় ২ হাজার ৪০০ টাকা। দেশে উৎপাদনে গেলে এর দাম বাজারে ১ হাজার ৭০০ টাকায় নেমে আসবে বলে জানান সিয়াটের কর্মকর্তারা। সিয়াট প্রথমে মোটরবাইক, অটোরিকশা, বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, ট্রাক্টর, ছোট বাণিজ্যিক পরিবহণের টায়ার তৈরি শুরু করবে। ব্যক্তিগত গাড়ি বা প্রাইভেট কারের টায়ার তৈরি হবে এর পরবর্তী পর্যায়ে। সিয়াট সূত্রে জানা গেছে, উদ্যোগটি সফল হলে বাংলাদেশে আরও ভারতীয় বিনিয়োগ আসবে। তখন ভারতীয় উদ্যোক্তারা কম খরচে পণ্য তৈরি করে আবার ভারতে রপ্তানি করবেন। বাংলাদেশের কারখানায় সিয়াট টায়ার তৈরি করে ভারতের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোতে রপ্তানি করা হবে। এদিকে বিশাল বিনিয়োগের মাধ্যমে যমুনা গ্রম্নপ দেশে প্রথমবারের মতো সব ক্যাটাগরির টায়ার উৎপাদনে যাচ্ছে। বিশ্বের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মেশিন, উন্নত কাঁচামাল ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রথম সারির প্রকৌশলীদের সমন্বয়ে উৎপাদন করবে 'এ গ্রেডের' যমুনা টায়ার। আমদানিকৃত টায়ারের চেয়ে যমুনা টায়ারের দামও হবে সাশ্রয়ী। বিশ্বমানের হওয়ায় এটি দেশের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রপ্তানিতেও বড় ভূমিকা রাখবে। উৎপাদনের ৪০ শতাংশ রপ্তানি করা হবে। সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ যায়যায়দিনকে বলেন, নতুন টায়ার শিল্প স্থাপনের মধ্য দিয়ে প্রমাণ হচ্ছে দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। তাই দেশীয় শিল্প রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিবে সরকার। এজন্য শিল্পনীতিও প্রণয়ন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করে অনেক দেশি শিল্প রক্ষা করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে মোটরযানের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে পালস্না দিয়ে বাড়ছে টায়ারের চাহিদা। ফলে টায়ার শিল্পের আকর্ষণীয় বাজারে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। বিআরটিএ'র এক হিসাবে দেখা গেছে, কেবল ঢাকাতেই গাড়ি নিবন্ধন হয় ৯ লাখ ৬৪ হাজার ৩৯৪টি। এসব গাড়ির জন্য বছরে ২০ লাখের বেশি টায়ার পিস প্রয়োজন, যা ভারত, চীন, জাপান, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা হচ্ছে। প্রতি বছর এর পেছনে ব্যয় হচ্ছে কয়েক হাজার কোটি টাকা। তবে দেশে টায়ার উৎপাদন শুরু হলে অনেক সাশ্রয়ী মূল্যে আন্তর্জাতিক মানের 'মেইড ইন বাংলাদেশ' টায়ার কেনার সুযোগ পাবেন দেশের মানুষ।