রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানিতে শুল্ক কমানোর দাবি বারভিডার

প্রকাশ | ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানিতে শুল্ক কমানোর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকেলস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বারভিডা)। শনিবার সংগঠনের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, দেশে শুল্ক কাঠামো এমনভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে নতুন গাড়ির চেয়ে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির দাম দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় রিকন্ডিশন্ড গাড়ির আমদানি শুল্ক কমানো জরুরি। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য রাখেন, বারভিডার সভাপতি আবদুল হক। এ সময় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, সহসভাপতি মনোয়ার হোসেনসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। বারভিডার সভাপতি বলেন, 'রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে ক্রমাগত শুল্ক আরোপের কারণে গাড়ির দাম বেড়ে যাচ্ছে। এতে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির চাহিদা ও ক্রেতা কমে যাচ্ছে। ফলে গাড়ি আমদানির পরিমাণও কমে গেছে। ফলে সরকার একদিকে রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে এ খাতে কর্মসংস্থান সংকুচিত হয়ে পড়েছে। তাই এ শিল্পকে বাঁচাতে হলে জরুরিভাবে আমদানি শুল্ক কমাতে হবে। কেননা ব্র্যান্ডনিউ গাড়ি আর রিকন্ডিশন্ড গাড়ির আমদানির শুল্ক কখনো এক হতে পারে না।' আবদুল হক বলেন, 'ব্র্যান্ডনিউ গাড়ি আর রিকন্ডিশন্ড গাড়ির ক্ষেত্রে কর আরোপে বৈষম্য রয়েছে। একটি জটিল প্রক্রিয়ায় রিকন্ডিশন্ড গাড়ির শুল্কায়ন করা হচ্ছে। আমরা চাই নতুন ও পুরানো গাড়ির নির্বিশেষে সকলের জন্য একটি সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়ন করা হোক। সবার জন্য একটি লেভেল পেস্নয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা হোক।' বারভিডার সভাপতি বলেন, 'জাপান থেকে আমদানিকৃত রিকন্ডিশন্ড গাড়ি ইয়োলো বুকে থাকা নিউ প্রাইসের ওপর ভিত্তি করে অপচয় বিয়োজনের পর শুল্কের জন্য মূল্য নির্ধারণ করা হচ্ছে। অথচ ইয়োলো বুকে পুরানো গাড়ির মাসিকভিত্তিক মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু কাস্টমস কর্তৃপক্ষ তা আমলে না নিয়ে নতুন গাড়ি বিবেচনায় রিকন্ডিশন্ড গাড়ির মূল্য নির্ধারণ করেছে।' তিনি বলেন, 'অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের কারণে বর্তমানে এ শিল্প হুমকির মুখে পড়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবচরে ২৩ হাজার ৭৫টি রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি হলেও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তা কমে ১২ হাজার ৫০২টিতে নেমে এসেছে। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি হয়েছে মাত্র ৩ হাজার ৪৩৮টি। এতে করে সরকার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। পাশাপাশি ভোক্তারা ভালোমানের পরিবেশবান্ধব গাড়ি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।' সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকেল্‌স ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনে (বারভিডা) মোট ৮৫০ এরও বেশি সদস্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ খাতে প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। সরকারকে বছরে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব প্রদান করে থাকে। আব্দুল হক তার বক্তব্যে আরও জানান, বারভিডা গত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে দেশের পরিবহণ খাতে গাড়ি সরবরাহে প্রায় ৮৫ শতাংশ অবদান রেখে আসছে। ৮০-এর দশক থেকে জাপান থেকে মোটরকার, জিপ, স্টেশনওয়াগন, মাইক্রোবাস, ভ্যান, পিক-আপ, কোস্টার, মিনিবাস, ট্রাক, লরিসহ বিভিন্ন প্রকার রিকন্ডিশন্ড/পুরানো মোটরযান বাংলাদেশে আমদানি করা শুরু হয়। তিনি আরও বলেন, দেশের রাজস্ব ও পরিবহণ খাতে বিপুল অবদান রাখার পরও বর্তমানে নানা বৈষম্য/প্রতিবন্ধকতার কারণে রিকন্ডিশন্ড মোটরযান বাণিজ্য খাত এক নাজুক পরিস্থিতির মুখোমুখি। ফলে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি ক্রমাগতভাবে কমে আসছে এবং সরকারের রাজস্ব আয়ও লক্ষণীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে। উলেস্নখ্য, বারভিডার তথ্যমতে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি হয়েছে ২৩,০৭৫টি, যেখানে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আমদানি হয়েছে ১২,৫০২টি। অর্থাৎ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি কমেছে মোট ১০৫৭৩টি। গাড়ি আমদানি হ্রাস পাওয়ায় ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে হাজার কোটি টাকার উপরে রাজস্ব কমেছে।