নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে আরও তিন স্থলবন্দর

ম বন্দরগুলো হলো- সিলেটের তামাবিল, কুড়িগ্রামের চিলমারী এবং শেরপুরের নাকুগাঁও ম আলু ও সুতা ছাড়া সব ধরনের পণ্য আমদানির সুযোগ

প্রকাশ | ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

আহমেদ তোফায়েল
সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলব ন্দর -ফাইল ছবি
ভারতীয় এলাকা ব্যবহার করে নেপাল এবং ভুটান থেকে পণ্য আমদানি ও রপ্তানির জন্য আরও তিনটি স্থলবন্দর খুলেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বন্দরগুলো হলো- সিলেটের তামাবিল, কুড়িগ্রামের চিলমারি এবং শেরপুরের নাকুগাঁও। গত ১ ডিসেম্বর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের শুল্ক বিভাগ থেকে এ বিষয়ে একটি আদেশ জারি (এসআরও) করা হয়েছে। আদেশ অনুসাওে, দেশের ব্যবসায়ীরা এখন নেপাল এবং ভুটান থেকে এ তিন বন্দর দিয়ে আলু এবং সুতা ছাড়া সব ধরনের পণ্য আমদানি করতে পারবে। এর আগে দুই দেশের পণ্য আমদানি ও রপ্তানির জন্য কেবল বুড়িমারী (লালমনিরহাট) এবং বাংলাবান্ধা (পঞ্চগড়) শুল্ক স্টেশন চালু ছিল। এ ছাড়া শুল্ক কর্তৃপক্ষ আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) এবং বিবিরবাজার স্থলবন্দরগুলোর মাধ্যমে কাগজ, চিনি, কাজু বাদাম, জেনারেটর, ভাঙা কাচ, চকলেট, শিশুর ওইপার, মিস্টিসামগ্রী এবং বিটুমিন আমদানির অনুমতি দেবে। এই পণ্যগুলো এতদিন আমদানি নেতিবাচক তালিকায় ছিল বলে জানিয়েন এনবিআরের একজন সিনিয়র শুল্ক কর্মকর্তা। তিনি জানান, এসআরওর মাধ্যমে এনবিআর এই বন্দরগুলি ব্যবহার করে ভারত থেকে আমদানি করতে নেতিবাচক তালিকা থেকে আইটেমগুলো বাদ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে প্রতিবেশী দেশ- ভারত ও মিয়ানমার সীমান্তে বাংলাদেশের ১৮৪টি শুল্ক বন্দর রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশের জন্য নেপাল অপার সম্ভাবনার। এরইমধ্যে, বাংলাদেশের বিভিন্ন পণ্যের গুরুত্বপূর্ণ বাজার হয়ে উঠেছে দেশটি। বিভিন্ন খাদ্য পণ্যের বড় বাজার এখন নেপাল। এছাড়া নেপালের মানুষ দীর্ঘদিন থেকে ভারতের পণ্য ব্যবহার করছে। তারা এখন নতুন ভালো মানের পণ্য খুঁজছে। আর তাই নেপালে বাংলাদেশি পণ্যের ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সূত্রে জানা গেছে, দেশটি শতভাগ আমদানিনির্ভর। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ পণ্য আসে ভারত থেকে। বাকিটা চীনসহ অন্যান্য দেশ থেকে আসে। সুতরাং বাংলাদেশি পণ্যের জন্য এখানে বিশাল সম্ভাবনা অপেক্ষা করছে। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের ৭৮টি পণ্য নেপালের বাজারে রয়েছে। এখানে ওষুধ, ইলেকট্রনিক্স, অটোমোবাইল, ফার্নিচার, এগ্রো ফুড ভালো চলছে। পাশাপাশি পস্নাস্টিক, হোম টেক্সটাইল, নির্মাণসামগ্রীসহ বিভিন্ন পণ্যের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। পোশাক খাতের উদ্যোক্তরা জানান, নেপাল বাংলাদেশের গার্মেন্টস পণ্যের একটি বড় রপ্তানির বাজার হতে পারে। কিন্তু এখানে সমস্যা হলো আর্থিক লেনদেনের। নেপাল থেকে বাংলাদেশে সরাসরি টাকা পাঠানোর কোনো মাধ্যম নেই। পাশাপাশি এশিয়ার অধিকাংশ দেশের মুদ্রা বিনিময় করার সুযোগ থাকলেও নেপালে বাংলাদেশি টাকা বিনিময়ের সুযোগ নেই। আর্থিক লেনদেনের সমস্যাটি সমাধান করা গেলে নেপাল বাংলাদেশের গার্মেন্টসসহ অন্যান্য পণ্য রপ্তানির বড় বাজার হয়ে উঠবে। অন্যদিকে, ভুটানের সঙ্গে স্থলপথে বাণিজ্য বৃদ্ধির উদ্যোগ বাংলাদেশের দীর্ঘ দিনের। বুড়িমারী স্থলবন্দর ছাড়াও ভুটানকে তামাবিল, বাংলাবান্ধা ও নাকুগাঁও স্থলবন্দর ব্যবহারে অনেকদিন ধরে অনুমতি দেওয়ার প্রতিশ্রম্নতি দিয়ে আসছে বাংলাদশ। বর্তমানে শুধু বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্য হয়। এনবিআর সূত্র জানায়, এসব রুট দুই দেশের মধ্যে আমদানি রপ্তানি বাড়বে। বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার হবে। এ জন্য স্থলবন্দরে পর্যাপ্ত অবকাঠামো তৈরি করতে হবে, যাতে সীমান্তে পণ্যবাহী ট্রাকের শুল্কায়ন, স্থলবন্দরে আসা যাওয়া সহজে করতে পারে। উলেস্নখ্য, ভুটান থেকে বাংলাদেশে মোট রপ্তানির ৭-৮ শতাংশই হলো চুনাপাথরের গুঁড়া। সিমেন্টশিল্পে এটি ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে ১৮টি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পায় ভুটান। এই দুই দেশের বাণিজ্য এখনো ব্যাপকভাবে ভুটানের অনুকূলে। সর্বশেষ গত অর্থবছরে ভুটান থেকে ৩ কোটি ৩১ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ। এর মধ্যে অন্যতম হলো কমলা, দারুচিনি ও পাথর। গত অর্থবছরে ভুটান থেকে প্রায় ১ কোটি ডলারের কমলা এবং ৯১ লাখ ডলারের দারুচিনি আমদানি করা হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে গত অর্থবছরে ভুটানে রপ্তানি হয় ৩২ লাখ ডলারের পণ্য। এর মধ্যে ৬ লাখ ডলারের পাউরুটি, বিস্কুট ও কেক আছে।