৬৫ লাখ টন গম আমদানি করবে সরকার

প্রকাশ | ১৯ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত গম ও ভুট্টার চাহিদা বাড়ছে। বিশেষ করে খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারী বিভিন্ন শিল্প গ্রæপ বড় বড় কারখানা চালু করায় এই চাহিদা বেড়েছে। আর সেই চাহিদা পূরণে প্রতি বছরই বিপুল পরিমাণ গম আমদানি করতে হচ্ছে। গম আমদানির বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র থেকে চলতি অথর্বছরে ২ লাখ ৬০ হাজার টন গম আমদানি করবে বাংলাদেশ। যা গত বছরের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউনাইটেড এস্টেট ডিপাটের্মন্ট অব অ্যাগ্রিকালচার (ইউএসডিএ) গম আমদানির এই এ তথ্য জানিয়েছে। এই সঙ্গে এই প্রতিষ্ঠান বলছে চলতি অথর্বছরে ৬৫ লাখ টন গম আমদানি করবে বাংলাদেশ। ইউএসডিএ সূত্রে জানা যায়, গম আমদানির জন্য যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন বন্দরে কাগোর্ বুকিংয়ের হিসাবও বলছে বাংলাদেশ গত বছরের চাইতে বেশি গম আমদানি করবে। ইউএসডিএর প্রধান কাযার্লয় এবং বাংলাদেশে অবস্থিত শাখা অফিস বলছে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ৬.২ শতাংশ বা ১১ লাখ ২০ হাজার টন বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা রয়েছে। যার জন্য ৫.৭ শতাংশ বা ৩ লাখ ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে গমের চাষ করতে হবে। গমের পাশাপাশি ভুট্টা আমদানিও বাড়বে। সাম্প্রতিক সময়ে ভুট্টার ব্যাপক চাহিদা পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিশেষ করে গো-খাদ্য হিসেবে ভুট্টা এখন বেশ জনপ্রিয়। আবার গম এবং ভুট্টার সংমিশ্রণে তৈরি হচ্ছে প্যাকেটজাত আটা-ময়দা। ভুট্টার এই ব্যাপক চাহিদ মেটাতে চলতি অথর্বছরে প্রায় ২০ লাখ টন ভুট্টা আমদানি বৃদ্ধি পাবে। যার মধ্যে তিন লাখ টন আসবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। ইউএসডিএ বলছে, ধান বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশস্য হওয়ার কারণে মুনাফা হোক আর নাই হোক কৃষকরা চাষ করবেই। একই সঙ্গে বতর্মানে ভুট্টার ব্যাপক চাহিদা থাকার কারণে এবং মুনাফার বেশি হওয়ায় কৃষকরা এখন এটি চাষে আগ্রহী হচ্ছে। এদিকে, স্থানীয় কৃষি কাজকে উৎসাহিত করতে খাদ্য শস্য আমদানিতে শুল্ক বৃদ্ধি করেছে বাংলাদেশ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গম, ভুট্টা, আলু এবং কাসাভা আমদানিতে ১৫ শতাংশ কাস্টম ডিউটি এবং ১০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক কর আরোপ করা হয়েছে। যেখানে এর আগের বছর শুধু কাস্টম ডিউটি ছিল। এছাড়া বতর্মান বাজেটে সরকার কৃষককে কম সুদে ঋণ দেয়ার জন্য বরাদ্দ রেখেছে। কৃষি যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক ছাড় এবং বিদুৎ ব্যবহারে ভতুির্ক দিয়েছে সরকার। গম উৎপাদনকারী দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ৩২তম। তিন বছর ধরে দেশে খাদ্যপণ্যটির উৎপাদনে ধারাবাহিক মন্দাভাব বজায় রয়েছে বলে জানিয়েছে ইউএসডিএ। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালে বাংলাদেশে ১৩ লাখ টন গম উৎপাদন হয়েছিল। পরের বছর দেশে খাদ্যপণ্যটির উৎপাদন দশমিক ৭৭ শতাংশ কমে দঁাড়ায় ১২ লাখ ৯০ হাজার টনে। ২০১৬ সালে বাংলাদেশে মোট ১২ লাখ ৫০ হাজার টন গম উৎপাদন হয়েছিল বলে জানিয়েছে ইউএসডিএ, যা আগের বছরের তুলনায় ৩ দশমিক ১০ শতাংশ কম। ২০১৭ সালে বন্যার কারণে খাদ্যপণ্যটির উৎপাদন আরো কমে দঁাড়ায় ১১ লাখ ১৫ হাজার টনে, যা আগের বছরের তুলনায় ১০ দশমিক ৮০ শতাংশ কম। এদিকে উৎপাদন কমায় দেশের গম আমদানি খাতে বজায় রয়েছে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি। বিশ্বের বুকে খাদ্যপণ্যটির পঞ্চম শীষর্ আমদানিকারক দেশ বাংলাদেশ। ইউএসডিএর তথ্য অনুযায়ী ২০১১ সালে সবের্শষ গম আমদানি খাতে মন্দাভাব দেখা গিয়েছিল। সে সময় দেশে সাকল্যে ২০ লাখ ৩৯ হাজার টন গম আমদানি হয়েছিল। টানা পঁাচ বছরের প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালে আন্তজাির্তক বাজার থেকে দেশে ৫৫ লাখ ৫৬ হাজার টন গম আমদানি হয়েছিল বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি, যা আগের বছরের তুলনায় ১৭ দশমিক ৭১ শতাংশ বেশি। পরের বছর খাদ্যপণ্যটির আমদানি আরও ১৫ দশমিক ১৯ শতাংশ বেড়ে দঁাড়ায় ৬৪ লাখ টনে। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে দেশে গম আমদানি বেড়েছে ৮ লাখ ৪৪ হাজার টন। বাংলাদেশে গম আমদানির এটাই সবোর্চ্চ পরিমাণ। তবে এ বছরের যে লক্ষ্যমাত্রা নিধার্রণ করা হয়েছে সেটা হলে তা হবে ইতিহাসের সবোর্চ্চ পরিমাণ গম আমদানি।