রডের বাজারে অস্থিরতা

রডের দাম প্রতি টনে বেড়েছে ৯ হাজার টাকা টিসিবির হিসাবে এক মাসে ৪০ গ্রেডের দাম বেড়েছে ১৪ দশমিক ১৫ শতাংশ

প্রকাশ | ২৬ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

আহমেদ তোফায়েল
রডের বাজারে অস্থিরতা শুরু হয়েছে। এক মাসের ব্যবধানে ৪০ গ্রেডের রডের টনপ্রতি দাম বেড়েছে ৯ হাজার টাকা। টিসিবির হিসাবে এক মাসে বেড়েছে ১৪ দশমকি ১৫ শতাংশ। রাজধানীর এক রড ব্যবসায়ী জানান, প্রতি টনে ৪০ গ্রেডের রডের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। এক মাসের ব্যবধানে এর দাম টনপ্রতি ৯ হাজার টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। ৪০ গ্রেডের প্রতিটি টন রড বিক্রি হচ্ছে ৬০ হাজার থেকে ৬১ হাজার টাকায়। যা একমাস আগে ৫১ হাজার থেকে ৫৫ হাজার টাকা ছিল। তবে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, এক মাসে ৪০ গ্রেডের রডের দাম বেড়েছে ১৪ দশমকি ১৫ শতাংশ। অন্যদিকে, টিসিবির হিসেবে ৬০ গ্রেডের রডের দাম প্রতি টনে ৩ হাজার টাকা বেড়েছে। ৬০ গ্রেডের রড টন বিক্রি হচ্ছে ৬২ হাজার ৫০০ টাকায়। যা দশ দিন আগে বিক্রি হয়েছিল ৫৯ হাজার ৫০০ টাকায়। এক মাসে দাম তিন শতাংশ বেড়েছে। নয়াবাজারের রড-সিমেন্টের ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলাম বলেন, ১৫ দিন হয়ে গেছে দাম বেড়েছে। বেশি দামে রড কিনতে হচ্ছে বলে তারা বেশি দামে বিক্রি করছেন। তিনি আরও জানান এমনিতেই বিক্রি ভালো না। দাম বাড়ার পরে আরও খারাপ হয়ে গেছে। তবে বিষয়টি সম্পর্কে কারখানার মালিকদের বিভিন্ন মতামত রয়েছে। তাদের দাবি, রডের দাম এখনও বাড়েনি, তবে শিগগিরই বাড়বে। এটি নির্মাণে মৌসুম হলেও রডের চাহিদা বাড়েনি। যখন আরও চাহিদা বাড়বে তখন দাম বাড়তে পারে। শাহরিয়ার স্টিল মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস কে মাসুদুল আলম বলেছেন, 'কোম্পানিগুলোকে বেশি দামে কাঁচামাল কিনতে হচ্ছে। এবং সরকারকে অতিরিক্ত শুল্ক দিতে হচ্ছে। অন্যদিকে কাঁচামাল আমদানির জন্য তারা অগ্রিম ট্যাক্স দিচ্ছেন। এসব কারণে সামনের দিনে রডের দাম আরও বাড়বে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রিজের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার শফিকুল ইসলাম হক তালুকদার বলেছেন, বেসরকারি খাতে নির্মাণ কাজ কমেছে। রডের দাম বাড়লে ব্যবসায়ের ব্যয় আরও বাড়বে। এ খাতে টিকে থাকা তাদের জন্য কঠিন হবে। ইস্পাত খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজেটে কাঁচামাল ও উৎপাদন থেকে বিক্রয় পর্যায়ে ভ্যাট ও অগ্রিম আয়কর এবং পরে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করায় রডের দাম বেড়েছে। উৎপাদন খরচ সমন্বয় করার জন্য রডের দাম আরও বাড়বে। একবারে দাম বৃদ্ধি করলে ভোক্তারা বড় ধরনের ধাক্কা খাবেন, তাই দাম বাড়ানো হবে কয়েক ধাপে। বাজেট ঘোষণার পর বিএসএমএ সংবাদ সম্মেলন করে জানান, বিভিন্ন পর্যায়ে মোট ভ্যাটের হার ৫৪৬ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া বাজেটে রডের কাঁচামাল স্ক্র্যাপ, বিলেট ও রড বিক্রিতে টনপ্রতি ৩ শতাংশ অগ্রিম আয়কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ জন্য টনপ্রতি রডে ১০ হাজার ৯২৫ টাকা দাম বাড়বে। বিশেষজ্ঞদের মতে, রড-সিমেন্টের দাম বাড়লে একদিকে যেমন আবাসন খাতে প্রভাব পড়ে, একই সঙ্গে সরকারের অবকাঠামো খাতের বড় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে ব্যয়ও বাড়ে। এবারের বাজেটে অন্যতম বৃহৎ খাত অবকাঠামো উন্নয়ন। দেশে এখন পদ্মা সেতু, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদু্যৎ প্রকল্পের মতো বড় বড় কাজ চলছে। এসব প্রকল্পের গতিও ব্যাহত হবে। সর্বোপরি মধ্যবিত্তদের ওপর চাপ বাড়বে। রড-সিমেন্টের দাম বাড়লে তা প্রকল্প বাস্তবায়নে কি ধরনের প্রভাব পড়বে এ সম্পর্কে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ (সওজ) বলছে, রেট সিডিউলের ওপর ভিত্তি করে অধিদপ্তরের প্রকল্প ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়। নির্মাণ সামগ্রীর দরের ওপর ভিত্তি করে রেট সিডিউল তৈরি করা হয়। সর্বশেষ ২০১৮ সালে রেট সিডিউল নির্ধারণ করেছে সওজ অধিদপ্তর। সড়ক উন্নয়নের যে বড় বড় প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে ও হয়েছে রড ও সিমেন্টের দাম বাড়লে সেগুলোর ব্যয় বেড়ে যেতে পারে। রড-সিমেন্টের দাম বাড়লে সিডিউল রেট হার নতুন করে নির্ধারণ করতে হয়। ফলে অনেক জটিলতা সৃষ্টি হয়।