চামড়া ছাড়াতে ত্রæটি, প্রতি বছর ক্ষতি ৩৫০ কোটি টাকা!

প্রকাশ | ২১ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
প্রতি বছর কোরবানির পশুর চামড়া ছাড়াতে নানা ত্রæটির ফলে ব্যাপক পরিমাণে চামড়া নষ্ট হয়। আর এতে প্রতি বছর ক্ষতি হয় প্রায় সাড়ে তিনশ’ কোটি টাকা। মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা গেলে রাষ্ট্র ওই পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বঞ্চিত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবে বলে মনে করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ সমস্যা সমাধানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এক্সপোটর্ কম্পিটিটিভনেস ফর জবস নামে এ প্রকল্পের আওতায় সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রকল্পটির সহকারী পরিচালক মো. লতিফুর রহমান বলেন, ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের উদ্যোগে দেশের অধিকাংশ গ্রামীণফোন সিম ব্যবহাকারী নাগরিকদের মুঠোফোনে মেসেজ পাঠানো হয়েছে। এছাড়া বেশকিছু উদ্যোগ আমরা গ্রহণ করছি। তিনি বলেন, ‘আমরা এ ধরনের কাযর্ক্রম ত্বরান্বিত করতে দুটি শটর্ ফিল্ম তৈরি করেছি। সেখানে দেশের প্রিয় অভিনেতাদের মাধ্যমে এ বাতাির্ট পেঁৗছে দেয়ার চেষ্টা করছি। এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব বেগম নাজনীন পারভিন বলেন, কী ধরনের ছুরি দিয়ে কোরবানির পশুর চামড়া ছাড়াতে হয় সে ব্যাপারে আমরা বিস্তারিত বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার করছি। যেমনÑ কোরবানির আগে পশুকে ভালোভাবে গোসল করাতে হবে এবং পশুর শরীর ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হবে। কোরবানির আগে পশুকে প্রচুর পরিমাণে পানি খাওয়াতে হবে। পশুকে পরিষ্কার ও সমতল জায়গায় জবাই করতে হবে। এতে চামড়ার কোনো ক্ষতি হয় না, চামড়ায় ময়লাও লাগে না। তিনি বলেন, কোরবানির পশু জবাইয়ের পর নিস্তেজ হলে চামড়া ছাড়ানো শুরু করতে হবে। খাড়া (চোখা) মাথার ধারালো ছুরি দিয়ে পশুর বুকের ওপর দিয়ে লেজের গোড়া পযর্ন্ত লম্বালম্বিভাবে এবং এক পা থেকে অন্য পা পযর্ন্ত চামড়া ফেড়ে ফেলতে হবে। বঁাকানো মাথার ধারালো ছুরি দিয়ে পশুর দেহ থেকে চামড়া ছাড়াতে হবে। চামড়া ছাড়াতে তাড়াহুড়া করা যাবে না। স্বাভাবিক গতিতে ছুরি চালিয়ে পশুর দেহ থেকে চামড়া ছাড়াতে হবে। তিনি জানান, চামড়া টানাহেঁচড়া না করে বালতি বা পাত্রে করে নিতে হবে এবং রোদ-বৃষ্টি পড়ে না এমন শুকনা-খোলা জায়গায় রাখতে হবে। চামড়া টানাহেঁচড়া করলে, রোদে পুড়লে, বৃষ্টিতে ভিজলে চামড়ার ক্ষতি হবে। চামড়ায় রক্ত লাগলে সাথে সাথে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। চামড়া বিক্রি করতে দেরি হলে প্রয়োজন মতো লবণ দিয়ে রাখতে হবে। এক্সপোটর্ কম্পিটিটিভনেস ফর জবস প্রকল্পের সহকারী পরিচালক মো. লতিফুর রহমান জানান, জবাই করা স্থানে পশুর রক্ত গড়িয়ে পড়ার জন্য একটি গতর্ করতে হবে। আর একটি গতর্ করতে হবে একটু দূরে যেখানে ময়লাসহ অন্যান্য বজ্যর্ ফেলা যায়। পশুকে শোয়ানোর জন্য পশুর পা যথাযথভাবে বেঁধে নিতে হবে এবং খুব সাবধানে শোয়াতে হবে যাতে চামড়ার কোনো ক্ষতি না হয়। এক্সপোটর্ কম্পিটিটিভনেস ফর জবস প্রকল্পের পরিচালক মো. ওবায়দুল আজম জানান, প্রতি বছর দেশের মোট আহরণ করা চামড়ার অধের্ক আসে কোরবানি ঈদের পশু থেকে। ফলে আমরা যদি চামড়ার ক্ষতি রোধ করতে পারি তাহলে এটি হবে চামড়া শিল্পের জন্য বড় সাফল্য। বিগত সময়ের চেয়ে অপচয়ের পরিমাণ কমেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। এতে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হচ্ছে। বিগত সময়ের তুলনায় ক্ষতির পরিমাণ কমেছে। এদিকে গত ৯ আগস্ট আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহায় পশুর চামড়া সংগ্রহের জন্য দাম নিধার্রণ করে দিয়েছে সরকার। এবার লবণযুক্ত প্রতি বগর্ফুট গরুর চামড়া দাম (ঢাকায়) ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, ঢাকার বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, খাসি ১৮ থেকে ২০ টাকা, বকরি ১৩ থেকে ১৫ টাকা। গতবারের চেয়ে এবার সব চামড়ার দামই কমেছে। গত বছর ঢাকার ভেতরে প্রতি বগর্ফুট গরুর চামড়ার দাম ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। আর খাসি ও ভেড়ার ক্ষেত্রে দেশের সবর্ত্র প্রতি বগর্ফুট চামড়ার দাম ছিল ২০ থেকে ২২ টাকা। আর বকরির চামড়ার দাম ১৫ থেকে ১৭ টাকা। ওইদিন সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে কোরবানির পশুর চামড়ার দর সংক্রান্ত এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, প্রতি বছর প্রায় সাড়ে তিনশ’ কোটি টাকার চামড়া নষ্ট হয় কোরবানির পশুর চামড়া ছাড়াতে গিয়ে। আমরা এ বিষয়ে মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করছি। এ কাজে গণমাধ্যমে এগিয়ে আসার আহŸান জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।