ধস দিয়ে ডিএসইর এমডিকে বরণ

প্রকাশ | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
যাযাদি রিপোর্ট নানা সমালোচনার মধ্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে নিয়োগ পাওয়া কাজী সানাউল হক রোববার (৯ ফেব্রম্নয়ারি) প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ শুরু করেছেন। ডিএসইর এই নতুন এমডি বরণের দিনে শেয়ারবাজারে বড় ধরনের ধস হয়েছে। রোববার দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবকটি মূল্য সূচকের বড় পতনের পাশাপাশি কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। সেই সঙ্গে দরপতন হয়েছে সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের। ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের একটি অংশের বিরোধিতা সত্ত্বেও গত ২২ জানুয়ারি কমিশন সভা করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কাজী সানাউল হককে ডিএসইর এমডি হিসেবে অনুমোদন দেয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে অনুমোদন পাওয়ার ১৬ দিনের মাথায় রোববার ডিএসইতে যোগ দেন ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) সাবেক এই এমডি। সকালে ব্রোকারেজ হাউসে ছড়িয়ে পড়ে সানাউল হকের যোগদানের খবর। কাকতালীয় হলেও এরপরই পতনের দিকে ধাবিত হয় শেয়ারবাজার। অথচ লেনদেনের শুরুতে বাজারে ঊর্ধ্বমুখিতার আভাস ছিল। লেনদেনের প্রথম ৭ মিনিটে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ১০ পয়েন্ট বেড়ে যায়। তবে অধাঘণ্টার মধ্যে বাজার নিম্নমুখী হয়ে পড়ে। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে পতনের প্রবণতা, যা দিনের লেনদেন শেষে ধসে পরিণত হয়। ডিএসইর এক সদস্য বলেন, কাজী সানাউল হককে এমডি করা নিয়ে যা হয়েছে তা শেয়ারবাজারের জন্য মোটেও ভালো সংবাদ নয়। এমনিতেই শেয়ারবাজারে একটি ক্রিটিক্যাল সময় যাচ্ছে। এমন সময় ডিএসইর এমডি নিয়ে এমন বিতর্ক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা হলেও আস্থাহীনতা সৃষ্টি করবে। ইতোমধ্যে বাজারে বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে পড়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এদিকে বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, রোববার দিনভর ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া ৪৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার তালিকায় স্থান পেয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২১৭টির। দাম অপরিবর্তিত রয়েছে ৪২টির। সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের এই দরপতনের ফলে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স ৬৪ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৩৮৮ পয়েন্টে নেমে গেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ ২১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৪৯২ পয়েন্টে এবং ডিএসই শরিয়াহ্‌ ১৪ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। সবকটি মূল্য সূচকের পতনের পাশাপাশি ডিএসইতে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩৬১ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৩৭৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন কমেছে ১৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে লাফার্জহোলসিমের শেয়ার। কোম্পানিটির ২১ কোটি ৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকার। ১০ কোটি ১২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে এডিএন টেলকম। এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ ১০ কোম্পানির মধ্যে রয়েছে সিঙ্গার বাংলাদেশ, ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যাল, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল, কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ, নর্দান জুট, বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলস এবং এস এস স্টিল। দেশের অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৩০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৪১১ পয়েন্টে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেয়া ২২৬ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ৪৭টির, কমেছে ১৫২টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৭টির। এদিকে চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি ডিএসইর এমডি নিয়োগ সংক্রান্ত কমিটিতে 'নমিনেশন অ্যান্ড রিমিউনারেশন কমিটি (এনআরসি)' কাজী সানাউল হককে এমডি হিসেবে প্রাথমিকভাবে বেছে নেওয়া হয়। এরপর ৯ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ডিএসইর পর্ষদ সভায় তাকে এমডি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পর্ষদ সভায় ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের ৬ জন কাজী সানাউল হককে এমডি হিসাবে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে সম্মতি জানান। বিপরীতে তিনজন শেয়ারহোল্ডার পরিচালকসহ ৪ জন তার বিষয়ে আপত্তি জানান। আপত্তি জানানো শেয়ারহোল্ডারদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, এমডি নিয়োগে স্বচ্ছ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়নি। তারা অভিযোগ করেন, ডিএসইর এমডি নিয়োগের বিষয়ে পর্ষদ সদস্যদের নোটিশ করতে হয়। কিন্তু এবার কোনো নোটিশ করা হয়নি। আবার এমডিকে পর্ষদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করানোর রীতি থাকলেও তা করা হয়নি। এছাড়া আইসিবিতে থাকা অবস্থায় কাজী সানাউল হকের বিরুদ্ধে ঋণ জালিয়াতির অভিযোগ উঠে এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে তাকে তলবও করা হয়। এ নিয়ে সাংবাদ মাধ্যমে লেখা লেখি হয়েছে। এমন বিতর্কিত ব্যক্তিকে ডিএসইর এমডি করা উচিত হবে না। তবে কাজী সানাউল হককে এমডি করার বিষয়ে শক্ত অবস্থান নেন ডিএসইর চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল হাসেম এবং শেয়ারহোল্ডার পরিচালক রকিবুল রহমান। সেই সঙ্গে পর্ষদের একটি অংশের কড়া সমালোচনার মুখে পড়েন ডিএসইর চেয়ারম্যান। স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই ডিএসইর এমডি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যদি কারও মনে হয় এমডি নিয়োগে স্বচ্ছ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি তাহলে তিনি মামলা করতে পারেন।