১৫শ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কায় গার্মেন্ট অ্যাকসেসরিজ খাত

করোনাভাইরাসের প্রভাব

প্রকাশ | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
গার্মেন্ট শিল্প কারখানায় কর্মরত শ্রমিক
করোনাভাইরাসের কারণে আগামী মার্চ পর্যন্ত চীন থেকে কাঁচামালের প্রাপ্যতা নিশ্চিত হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। আর চীন থেকে কাঁচামাল প্র্রাপ্তি বিঘ্নিত হলে এ খাতে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ গার্মেন্ট অ্যাকসেসরিজ অ্যান্ড প্র্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএপিএমইএ)। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের একটি হোটেলে আয়োজিত 'রপ্তানিমুখী গার্মেন্ট এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং শিল্প খাতের ওপর করোনাভাইরাসের প্রভাব' শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের উপদেষ্টা রাফেজ আলম চৌধুরী, বর্তমান সভাপতি আব্দুল কাদের খান, দ্বিতীয় সহসভাপতি মোজাহারুল হক শহীদ এবং সহসভাপতি (অর্থ) মনির উদ্দিন আহমেদ। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক অংশীদার। তাই এ ভাইরাসের প্রভাব আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর ও পড়বে। গত অর্থবছরের হিসাব অনুযায়ী, চীন থেকে বাংলাদেশ ১৩ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে, যা মোট আমদানির ২৬ দশমিক ১ শতাংশ। অন্যদিকে গার্মেন্ট অ্যাকসেসরিজ ও প্যাকেজিং প্রডাক্টসের বড় অংশ কাঁচামাল চীন থেকে আমদানি করা হয়। সুতরাং চীন আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা নিরাপদ থাকলেও প্রায় এক মাসের অধিক করোনাভাইরাসে চীন আক্রান্ত হওয়ার কারণে আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, এমন মত প্রকাশ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক করোনাভাইরাসের কারণে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ ও বাণিজ্যের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ না করার জন্য পরামর্শ প্রদান করেছেন। তারপরও করোনাভাইরাসের প্রভাবে এরই মধ্যে চীন থেকে আমদানিনির্ভর বাংলাদেশের সব রফতানি খাতের ওপর প্রভাব পড়েছে এবং তারা উদ্বিগ্নের মধ্যে রয়েছে। বিজিএপিএমইএর বর্তমানে প্রায় ১ হাজার ৭৪৪টি সদস্য প্রতিষ্ঠান আছে, এমন তথ্য উলেস্নখ করে সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, এসব প্রতিষ্ঠান ৩৫টির মতো পণ্য উৎপাদন করে এবং ৯৫ শতাংশ দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে থাকে। এ খাতের উৎপাদিত পণ্য অভ্যন্তরীণ রফতানিসহ সরাসরি বিদেশেও রফতানি হয়। বিগত অর্থবছরে এ খাতেরমোট রফতানি ছিল ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মতো, যার মধ্যে সরাসরি রফতানি ছিল ১ বিলিয়নের কাছাকাছি। এ খাতের উৎপাদিত পণ্যে শতাধিক কাঁচামালের প্রয়োজন হয়। প্রয়োজনীয় কাঁচামালের মধ্যে সুতা, কেমিক্যালস, কার্টন শিল্পের কাঁচামাল, থার্মোপস্নাস্টিক মোল্ডিং কম্পাউন্ড (টিপিএমসি) ইত্যাদিসহ এ শিল্পে ব্যবহৃত অধিকাংশ কাঁচামাল আমদানির জন্য আমরা অনেকাংশেই চীনের ওপর নির্ভরশীল। এ অবস্থায় চীনের ছুটি শেষে আমদানি কার্যক্রম শুরু হলে দ্রম্নত আমদানি করা কাঁচামাল খালাসের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারকে জোর অনুরোধ জানাচ্ছি। পেপার ডকুমেন্টস পেতে দেরি হলে কিংবা কোনো কারণে সমস্যা হলে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে দ্রম্নত পণ্য খালাসের ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনে সরকারের পক্ষ থেকে বিকল্প নীতি সহায়তা প্রদানের অনুরোধ জানিয়ে বিজিএপিএমইএ নেতারা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কাঁচামাল সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হবে এবং রপ্তানিকারকরা যথাসময়ে শিপমেন্ট করতে না পারলে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। করোনাভাইরাসের প্রভাব দীর্ঘায়িত হলে কিংবা আরো ছড়িয়ে পড়লে সরকারকে শিল্প সংশ্লিষ্ট লোকদের সঙ্গে নিয়ে বিকল্প উৎস খুঁজতে হবে এবং সেখানে প্রয়োজনীয় নীতিগত সহায়তা প্রদান করতে হবে। চীনের বর্তমান করোনাভাইরাস-সংক্রান্ত উদ্ভূত সমস্যা নিরসন হওয়ার পরপরই চীন থেকে আমদানি করা কাঁচামাল খালাসে শুল্ক কর্তৃপক্ষকে অধিক তৎপরতায় কাজ করতে হবে।