জানুয়ারিতে ২২৪০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি

প্রকাশ | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
কড়াকড়ি আরোপের পর থেকে ক্রমে কমছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি। সর্বশেষ জানুয়ারি (২০২০) মাসে নিট বিক্রির পরিমাণ ২ হাজার ২৪০ কোটি টাকা। তবে আগের মাস ডিসেম্বরে এ চিত্র ছিল সম্পূর্ণ উল্টো। সে মাসে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি ছিল ঋণাত্বক ৪০৮ কোটি টাকা। আগের মাস নভেম্বরে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি ছিল মাত্র ৩২০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি দাঁড়িয়েছে সাত হাজার ৬৭৩ কোটি টাকা, যা পুরো অর্থবছরের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২৯ শতাংশ। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের হালনাগাদ প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এসব তথ্য পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টিআইএন ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বাধ্যতামূলক করা, মুনাফায় উৎসে কর বৃদ্ধি এবং অপ্রদর্শিত অর্থে ক্রয় প্রতিরোধ করাসহ নানা রকম কড়াকড়ি আরোপে সঞ্চয়পত্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে মানুষ। এতে প্রতি মাসেই কমছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি। জানা গেছে, বর্তমানে পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর উৎসে কর ৫ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে কর শনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সঞ্চয়পত্রের সব লেনদেন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে করতে হচ্ছে ক্রেতাদের। দুর্নীতি কিংবা অপ্রদর্শিত আয়ে সঞ্চয়পত্র কেনা বন্ধ করতে ক্রেতার তথ্য একটি ডাটাবেইসে সংরক্ষণের লক্ষ্যে অভিন্ন সফটওয়্যারের মাধ্যমে বিক্রি কার্যক্রমশুরু করেছে। এছাড়া সঞ্চয়পত্রে বড় বিনিয়োগে কঠোর হয়েছে সরকার। চাইলেই ভবিষ্যৎ তহবিল বা প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থে সঞ্চয়পত্র কেনার সুযোগ নেই। এখন প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থ দিয়ে সঞ্চয়পত্র কিনতে হলে কর কমিশনারের প্রত্যয়ন লাগে। পাশাপাশি কৃষিভিত্তিক ফার্মের নামে সঞ্চয়পত্র কিনতে লাগছে উপকর কমিশনারের প্রত্যয়ন। এসব বিভিন্ন কড়াকড়ির কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ২৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, নিয়ম-কানুনে কড়াকড়িতে চলতি অর্থবছরের প্রতি মাসেই তার আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমেছে। যেমন- গত অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইতে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল প্রায় পাঁচ হাজার ৩৬ কোটি টাকা, সেখানে চলতি অর্থবছরের জুলাই মাসে বিক্রি হয় দুই হাজার ১৬০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের আগস্টে বিক্রি হয়েছিল চার হাজার ২১ কোটি টাকা, সেখানে চলতি অর্থবছরের আগস্টে বিক্রি হয় এক হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের সেপ্টেম্বরে বিক্রি হয়েছিল চার হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা, সেখানে চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বরে বিক্রি হয় ৯৮৬ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের নভেম্বরে সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রি হয়েছে ৩২০ কোটি ৬২ লাখ টাকা। সেখানে আগের বছরের একই সময়ে বিক্রি হয়েছিল তিন হাজার ৮৩৩ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র। আর চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বরে সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রি হয়েছে ঋণাত্মক ৪০৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। আগের বছরের ডিসেম্বর মাসে নিট বিক্রি হয়েছিল তিন হাজার ৩৩২ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রি হয় ৬ হাজার ২ কোটি টাকার, তবে এ বছরের জানুয়ারিতে এর বিক্রি হয়েছে মাত্র ২ হাজার ২৪০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) সাত হাজার ৬৭৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। অথচ আগের অর্থবছরের একই সময়ে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে যে পরিমাণ অর্থ নেওয়ার লক্ষ্য ধরেছিল, তার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ ঋণ নিয়েছিল। অস্বাভাবিক বিক্রি বাড়তে থাকায় সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৪৫ হাজার কোটি টাকা ঠিক করা হয়। কিন্তু অর্থবছর শেষে নিট বিক্রি দাঁড়িয়েছে ৪৯ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা। এর আগে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪৪ হাজার কোটি টাকা সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বিক্রি হয় ৪৬ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ নিরুৎসাহী করতে ২০১৫ সালের মে মাসে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদহার গড়ে ২ শতাংশ করে কমানো হয়েছিল। বর্তমানে পরিবার সঞ্চয়পত্রে ১১.৫২ শতাংশ, পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের ১১.২৮ শতাংশ, তিন মাস অন্তর মুনাফা-ভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের ১১.০৪ শতাংশ, পেনশনার সঞ্চয়পত্রের ১১.৭৬ শতাংশ মুনাফা দেওয়া হয়।