বিপর্যস্ত পর্যটন খাত

চাকরি হারাতে পারে ৫ কোটি মানুষ

প্রকাশ | ১৫ মার্চ ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে বৈশ্বিক পর্যটন খাত। বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপের পাশাপাশি বহু পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ খাতে বর্তমানে ধস নেমেছে, যার নেতিবাচক ফল ভোগ করতে হচ্ছে খাতসংশ্লিষ্টদের। ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল ও টু্যরিজম কাউন্সিল (ডবিস্নউটিটিসি) বলছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে পর্যটন খাতের বহু মানুষ। নভেল করোনাভাইরাসের কারণে চাকরি চলে যেতে পারে এ খাতের অন্তত ৫ কোটি মানুষের। খবর বিবিসি ও রয়টার্স। ডবিস্নউটিটিসির প্রধান নির্বাহী গেস্নারিয়া গুয়েভারা বলেন, ভাইরাসের সংক্রমণ পর্যটন খাতের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করেছে। কারণ, এরই মধ্যে হাজার হাজার আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। নতুন গ্রাহকদের ভ্রমণ-সুবিধা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে বেশকিছু বীমা প্রতিষ্ঠান। ফলে ২০২০ সালে পর্যটন খাত সংকুচিত হতে পারে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত। এ অবস্থায় খাতটি রক্ষায় সরকারগুলোকে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে ডবিস্নউটিটিসি। এ পদক্ষেপের মধ্যে অন্যতম হলো, ভিসা প্রক্রিয়া সহজীকরণের পাশাপাশি ব্যয় কমানো, বিমান ও স্থলবন্দরে অপ্রয়োজনীয় বিধিনিষেধ শিথিল করা, এয়ার প্যাসেঞ্জার শুল্কের মতো পর্যটক-কর কমানো এবং পর্যটন স্থানের প্রচারে বরাদ্দ বাড়ানো। গুয়েভারা বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি প্রতিকূলে হলেও, পর্যটন খাত এ বিপদ সামলে উঠবে। নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণের শুরু থেকেই পর্যটন খাত বিপদের মধ্যে রয়েছে। বিশেষ করে সমস্যা সৃষ্টি করেছে এ সংক্রমণ প্রতিরোধে নেয়া 'ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা'। এ অবস্থায় ১৮ মাসের জন্য সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে প্রমোদতরী প্রতিষ্ঠান প্রিন্সেস ক্রুজ। কারণ প্রতিষ্ঠানটির একটি প্রমোদতরীর ২১ জন যাত্রীর কভিড-১৯ রোগ ধরা পড়ায় সেটিকে সানফ্রান্সিসকোর উপকূল থেকে দূরে পাঁচ দিন দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এ ছাড়া ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, ইজিজেট ও নরওয়েজিয়ান এয়ার তাদের ফ্লাইট বাতিল করেছে। এদিকে কোরিয়ান এয়ার জানিয়েছে, নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সংস্থাটির অস্তিত্বকেই হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। চায়না এয়ারলাইনসের যাত্রী সংখ্যা গত মাসে কমে গেছে ৮৪ দশমিক ৫ শতাংশ, যা দেশটির অর্থনীতিতে ভাইরাসের প্রভাবকে স্পষ্ট করে তুলেছে। সংস্থাটির পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার জানানো হয়, যাত্রী পরিবহণে এ পতনের ফলে তাদের আয়ে ক্ষতি হয়েছে ২৩৫ কোটি পাউন্ড। তাছাড়া দেশটির পর্যটকরা ঘরে অবস্থান করায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পর্যটন খাতসংশ্লিষ্টরা। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউরোপের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় পর্যটন খাতের সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে। ইউনাইটেড এয়ারলাইনস হোল্ডিংস এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পর্যটন খাত বাধাগ্রস্ত হওয়ার বিষয়ে সতর্ক করেছে। একই সঙ্গে ফ্লোরিডা ও ক্যালিফোর্নিয়ায় কার্যক্রম বন্ধ করার কথা জানিয়েছে আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র ওয়াল্ট ডিজনির মতো থিম পার্ক। আমেরিকান এয়ারলাইনস গ্রম্নপ এবং ইউনাইটেড আরও জানিয়েছে, তারা আগামী সপ্তাহেও ইউরোপে তাদের স্বাভাবিক ফ্লাইট পরিচালনা করবে। কিন্তু অঞ্চলটিতে এপ্রিলে ফ্লাইট সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনা হবে। একইভাবে গ্রাহক চাহিদার বিবেচনায় রোববারের পর যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপে উলেস্নখযোগ্যসংখ্যক ফ্লাইট কমানোর কথা ভাবছে ডেল্টা এয়ারলাইনস। এদিকে নভেল করোনাভাইরাসের মারাত্মক প্রভাব পড়েছে এশিয়ার পর্যটনসমৃদ্ধ দেশ থাইল্যান্ডে। গত ২৫ বছর ধরে দেশটি বেশ কয়েকটি বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে গেছে। কিন্তু তার পরও দেশটি পর্যটনে ধারাবাহিকভাবে ঈর্ষণীয় উন্নতি করেছে। ১৯৬০ সালে দেশটিতে বিদেশি পর্যটক ভ্রমণ করেছিল ৮০ হাজার। কিন্তু গত বছর এ সংখ্যা পৌঁছায় ৩ কোটি ৯০ লাখে।