করোনার প্রভাব থেকে অর্থনীতি বাঁচানোর উপায় খুঁজছে সরকার

প্রকাশ | ২১ মার্চ ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে কার্যত এক দেশ থেকে অন্য দেশ এখন বিচ্ছিন্ন। এই মুহূর্তে বিশ্বের ১৭৬টি দেশ ও অঞ্চল এখন করোনা আক্রান্ত। এর নেতিবাচক প্রভাব থেকে বাঁচতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইতোমধ্যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ভাইরাসটি আরও জটিলভাবে আঘাত করলে বিশ্বের অর্থনীতির সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনীতিকেও আঘাত করবে। এই আঘাত থেকে বাঁচার উপায় খুঁজছে সরকার। সংশ্লিষ্ট একাধিক নীতিনির্ধারকের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও করোনাভাইরাস আঘাত হেনেছে। শুক্রবার পর্যন্ত ২০ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। ইতোমধ্যেই একজনের মৃতু্য হয়েছে। আরও কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। স্কুল-কলেজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পর্যটন কেন্দ্রগুলোয় চলছে কড়াকড়ি। বিনোদন কেন্দ্রে না আসার জন্য সাধারণ মানুষকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই পতেঙ্গা, কক্সবাজার ও কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের আসা নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। সেন্টমার্টিনে শুক্রবার থেকে পর্যটকদের ভ্রমণ নিষিদ্ধ করেছে জেলা প্রশাসন। এদিকে দেশের শিল্পাঞ্চলগুলোয় বিভিন্ন শিল্প কারখানায় কাজ করছেন লাখ লাখ শ্রমিক। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে এসব কারখানায় জীবাণুনাশক দিয়ে হাত পরিষ্কার করে শ্রমিকদের কাজে যোগ দেওয়া অনুমতি দিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে অসুস্থ শ্রমিককে বাধ্যতামূলক কিছু দিনের জন্য ছুটি দিতে বলা হয়েছে। এসব কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের কাজ বন্ধ করা না হলেও চলছে নানা ধরনের কানাঘুষা। এসব শিল্প কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হবে, কী হবে না, হলেও কবে থেকে, এর প্রভাব কী হবে, এসব নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। তবে এসব নিয়ে কোনো মহলই সরকারের পরিকল্পনার বিষয়ে বা পদক্ষেপের বিষয়ে মুখ খুলছে না। জানা গেছে, গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৪ হাজার ৫৩ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করে। তখন প্রবৃদ্ধি ছিল সাড়ে ১০ শতাংশের মতো। তবে চলতি ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস থেকেই রপ্তানি আয় কমতে থাকে। শেষ পর্যন্ত অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রম্নয়ারি) ২ হাজার ২৯১ কোটি পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ। তবে করোনাভাইরাসের কারণে বছর শেষে পণ্য রপ্তানি আয়ের চেহারা আরও খারাপ হতে পারে- অনেক উদ্যোক্তা ইতোমধ্যেই এমন আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। অর্থনীতিবিদদের মতে, ২০২০ সাল হবে অর্থনৈতিকভাবে আরও একটি দুর্বল বছর। করোনার প্রভাব ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের বড় মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতু, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ, পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদু্যৎকেন্দ্র, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-রেল সংযোগ, কর্ণফুলী টানেল ছাড়াও পস্নাস্টিক খাত, ওষুধ শিল্প ও খুচরা যন্ত্রপাতির বাজারে পড়তে শুরু করেছে। সরকারের রাজস্ব আদায়েও এই সংকট প্রভাব ফেলবে। এডিপি বাস্তবায়নের কাঙ্ক্ষিত হার অর্জিত হবে না। এদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, চীন পুরোপুরি সুস্থ না হলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় প্রভাব পড়বে তৈরি পোশাক খাতে। এই মুহূর্তে চীন করোনামুক্ত হয়ে ঘুরে দাঁড়ালেও নতুন করে বাংলাদেশ করোনা আক্রান্ত হওয়ার কারণে সে সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে দেশের অর্থনীতিতে। তারা বলছেন, খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানি করা যাচ্ছে না। আমাদের দেশ থেকে যেসব পণ্য রপ্তানি হতো সেসব পণ্য রপ্তানি করা যাচ্ছে না, ফলে অর্থনীতি থমকে গেছে। এটিকে সচল করা সময়সাপেক্ষ বলেও জানিয়েছেন তারা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি হেলাল উদ্দিন জানিয়েছেন, করোনার প্রাদুর্ভাব থেকে মুক্তি পাওয়া কিছুটা সময়সাপেক্ষ বিষয়। তবে এর প্রভাবে শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো বিশ্বের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সরকারের রাজস্ব আদায় কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে না। সব মিলিয়ে কিছুটা হলেও পিছিয়ে যাবে বাংলাদেশের অর্থনীতি। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ড. এ বি মীর্জ্জা আজিজুল ইসলাম জানিয়েছেন, করোনা শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো বিশ্বের সমস্যা। এই সমস্যা কাটিয়ে উঠে ঢলে পড়া অর্থনীতিকে সচল করা কিছুটা কঠিন, তবে অসম্ভব নয়। সময় লাগবে। এর জন্য সুদৃঢ় পরিকল্পনা প্রয়োজন। এই মুহূর্তে প্রয়োজন করোনা মোকাবিলা করা। যতদূর এগিয়েছে আর যেন না এগোয়, সেভাবে কাজ করা। এর জন্য সাধারণ মানুষেরও উচিত সাবধানে থেকে, সতর্ক থেকে, নিজেকে এবং দেশকে রক্ষা করা। জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, এ বিষয়ে সরকার সতর্ক দৃষ্টি রাখছে। এর প্রভাবে দেশের কোনো কোনো খাত কতখানি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বা হবে তা নিরূপণের কাজ চলছে। সারা বিশ্বের দিকেই আমাদের নজর রয়েছে। যেসব দেশে আমরা পণ্য রপ্তানি করি, আবার যেসব দেশ থেকে আমরা পণ্য আমদানি করি, উভয় দেশই এখন করোনা আক্রান্ত। তাই পরিস্থিতি মোকাবিলা করার পরিকল্পনা এই মুহূর্তে করা অনেকটাই কঠিন। এ প্রসঙ্গে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন জানিয়েছেন, আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। এ বিষয়ে আমরা সতর্ক রয়েছি। সঠিক সময় সঠিক পদক্ষেপ নেবে সরকার।